লেগুনার হেলপার সেজে হত্যার আসামি ধরলেন এসআই (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), যাত্রাবাড়ী প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪, ৫ ভাদ্র ১৪৩১ : 

‘যে ক্যামেরায় এ দৃশ্যটি ধরা পড়েছে, তা ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৫০০ ফুট দূরের। ফলে কী হয়েছে, কারা করেছে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু বুঝতে পারলাম একটি লেগুনা থেকে কিছু পড়েছে আর লেগুনার পেছনে লাল রঙের কোনো একটা চিহ্ন আছে।’

Advertisement

লেগুনাচালকের সহকারী সেজে হত্যা মামলার আসামি ধরেছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল আল আজাদ।

টানা দুই দিন যাত্রাবাড়ী ও এর আশপাশ এলাকায় এভাবে ঘুরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অভিযান চালিয়ে গত বুধবার চারজনকে গ্রেপ্তার করেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২২ জানুয়ারি ভোরে মহির উদ্দিন নামে একজন মাছ ব্যবসায়ীকে গুরুতর আহত অবস্থায় যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজন হলেন লেগুনার চালক মঞ্জু, তার সহযোগী আব্দুর রহমান, রুবেল ও রিপন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নিহতের ছেলে খাইরুল ইসলাম ২৩ জানুয়ারি রাতে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তভার পেয়ে ২৪ জানুয়ারি ঘটনাস্থল চিহ্নিত করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল আল আজাদ।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্তের শুরুতেই আমরা যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের ওপরে যাই। ওখানকার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকাদের কাছ থেকে কিছু সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। কিন্তু এতে কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। ধোলাইপাড় থেকে উঠে ফ্লাইওভারটি যাত্রাবাড়ীর যে অংশে মিলিত হয়েছে, সেখানে একটি লেগুনা থেকে কিছু একটা পড়ে যেতে দেখা যায়।

‘যে ক্যামেরায় এই দৃশ্যটা ধরা পড়েছে, তা ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৫০০ ফুট দূরের। ফলে কী হয়েছে, কারা করেছে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু বুঝতে পারলাম একটি লেগুনা থেকে কিছু পড়েছে আর লেগুনার পেছনে লাল রঙের কোনো একটা চিহ্ন আছে।’

এসআই বিল্লাল আল আজাদ বলেন, ‘লেগুনা এবং লেগুনার পেছনে লাল রঙের বাইরে কোনো ক্লু আমাদের কাছে ছিল না। তবে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় ভুক্তভোগী মহির উদ্দিন বাস-ট্রাক বা অন্য কোনো যানবাহনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, তাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে একটি লেগুনা থেকে।

Advertisement

‘পরিচয় গোপন করে লেগুনায় হেলপার হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই। যাত্রাবাড়ী ও এর আশপাশ এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন এলাকায় লেগুনার সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। এত লেগুনার মধ্যে পেছেনে লাল চিহ্ন থাকা একটি লেগুনা খুঁজে পাওয়া বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল।’

লেগুনার চালকের সহকারীর কাজ করতে গিয়ে চালকের জরিমানাও গুনতে হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বিল্লাল বলেন, ‘কাজ শুরুর পর লেগুনাচালক অন্যান্য হেলপার ও বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, একটি লেগুনা দুই দিন ধরে লাইনে আসছে না। জানতে পারি পাটেরবাগ এলাকায় একটি স্ট্যান্ডে লেগুনাটি পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে গিয়ে দেখি লেগুনাটির পেছনে লাল রং করা রয়েছে।

‘গ্যারেজের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, এই লেগুনার চালক শশুরবাড়ি মাদারীপুর রয়েছেন। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি স্যারসহ ঊর্ধ্বতনদের অনুমতি নিয়ে আমরা মাদারীপুরে অভিযান চালাই।

‘সেখানে গিয়ে ফরহাদ নামে ওই চালককে পাই। কিন্তু তিনি জানান, গত ২১ তারিখ থেকে তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন না। আর ঘটনাটি ঘটেছে ২২ তারিখ ভোরে। ফরহাদ জানান, মঞ্জু ও আব্দুর রহমান নামে দুজনের কাছে তিনি লেগুনাটি দিয়ে এসেছিলেন।’

পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এবার মঞ্জু আর আব্দুর রহমানকে খুঁজে বের করার পালা। আব্দুর রহমানের ঠিকানা পাই। নানা কৌশলে তাকে আটক করা হয়। কিন্তু ঠিকানাবিহীন মঞ্জুর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না।

‘আমরা মঞ্জুর একজন সহকারীকে পাই। যার নাম শান্ত। তিনি জানান, মঞ্জু চিটাগাং রোডের দিকে থাকতে পারেন। সেখানে দীর্ঘ সময় খোঁজাখুঁজির পর মঞ্জুকে আমরা আটক করতে সক্ষম হই। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তার সঙ্গে রুবেল ও রিপন নামে দুজন ছিলেন। এই দুজনকেও আমরা আটক করতে সক্ষম হই। গ্রেপ্তার এ চারজনই ২৭ জানুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।’

এসআই বিল্লাল আল আজাদ জানান, গত ২১ জানুয়ারি রুবেল, রিপন, মঞ্জু ও আব্দুর রহমান লেগুনা নিয়ে বের হন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন মঞ্জু, তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন আব্দুর রহমান ও পেছনের সিটে যাত্রীবেশে ছিলেন রিপন ও রুবেল।

তিনি জানান, প্রথম দফায় একবার একজনের কাছ থেকে ছিনতাই করতে ব্যর্থ হয়ে ভোর ৫টার দিকে তারা তুষারধারা আবাসিক এলাকার সাদ্দাম মার্কেটের সামনে মহির উদ্দিনকে লেগুনায় তোলেন। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর ফ্লাইওভারের ওপরে ৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে চলন্ত গাড়ি থেকে মহিরকে ফেলে দেন তারা।

Advertisement

যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা শিগগিরই এ মামলার চার্জশিট আদালতে উপস্থাপন করব।’