তরুণী তনুশ্রী দাস ও কবির হোসেন সুখের সংসার শুরু করেছেন। ছবি: সময় সংবাদ
ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), বিশেষ প্রতিনিধি,সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০২৪, ৪ ভাদ্র ১৪৩১ :
প্রেম যে মানে না ধর্ম- বর্ণ, তার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশি তরুণী তনুশ্রী দাস ও কবির হোসেন। দু’জনে ভিন্ন ধর্মের হলেও, ভালোবাসার টানে প্রেমিককে পেতে তরুণী তনুশ্রী দাস নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হয়েছেন। পরিবর্তন করেছেন নিজের নামও। সেই প্রেমের সম্পর্ক গড়িয়ে দাঁড়ায় বিয়েতে।
Advertisement
গত বছর ঘুরতে গিয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজে দেখা হয় একে অপরের সঙ্গে। এ থেকে শুরু হয় ভালো লাগা। এক পর্যায়ে ফোন নম্বর নিয়ে গড়ে ওঠে প্রেম, ধর্ম পরিবর্তন করে মুসলিম হয়ে ৯ মাস পর আদালতের মাধ্যমে কবিরকে বর হিসেবে গ্রহণ করে নব মুসলিম তরুণী সিদ্রাতুল মুনতাহা। তবে বিয়ের কয়েক দিন পরই জানতে পারেন তরুণীর পরিবার। হিন্দু হয়ে মুসলিম ঘরের ছেলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় সেই বিয়ে মেনে নেননি তারা৷ নানা নাটকীয়তার পর মেয়েকে মুসলিম ছেলের হাতে তুলে না দিতে কৌশলে ভারতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই তরুণীর বাবা। কিন্তু সীমান্তে গিয়ে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন স্বামী কবির হোসেন।
জানা গেছে, রংপুর কারমাইকেল কলেজ মাঠে রংপুর জেলা শহরের দর্শনা এলাকার কবির হোসেনের সঙ্গে হঠাৎ পরিচয় হয় ঠাকুরগাঁও জেলার চন্ডিপুর এলাকার তরুণী তনুশ্রী দাসের৷ পরে ৯ মাস প্রেমের সম্পর্কের পর গত বছরের ৫ জুন পরিবারের অমতে হিন্দু ধর্ম থেকে মুসলমান হয়ে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে করেন কবির হোসেনকে। ধর্মান্তরিত হয়ে নাম পরিবর্তন করে নাম রাখেন সিদ্রাতুল মুনতাহা। কয়েক দিন সংসারও করেন তারা। তবে বিয়ের কয়েক দিন পরই জানতে পারে তরুণীর পরিবার৷ মুসলমান ছেলের সঙ্গে বিয়ে মেনে নেননি তারা৷
এদিকে কবির জামিনে মুক্তি পেয়ে তার স্ত্রীকে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও তার সন্ধান পাননি। গত কয়েক মাসে তার স্ত্রীকে খুঁজেছেন দেশের বিভিন্ন স্থানে। অবশেষে শনিবার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন তার স্ত্রীকে তার বাবা-মা বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে নিয়ে যাবেন। এমন খবর পেয়ে স্বামী কবির হোসেন ছুটে যান পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে। স্ত্রীকে জোর করে তার বাবা মা ভারতে নিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়টি তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশ বিজিবিসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন।
এদিকে রোববার দুপুরে বাবা-মা তাদের মেয়েকে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কার্যক্রম শেষ করে বিজিবি চেকপোস্টে নিয়ে গেলে তখন বাধা হয়ে দাঁড়ান কবির হোসেন। পরে তিনি তাদের বিয়ের যাবতীয় ডকুমেন্টস দেখান। এ সময় তরুণী দুজন একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন এমন জবানবন্দি দেন এবং স্বামীর সঙ্গে সংসার করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তরুণীর বাবা মায়ের সামনেই বিজিবি কবিরের কাছে তার স্ত্রীকে তুলে দেন।
Advertisement
দীর্ঘ ১৫ মাস পর সিদ্রাতুল মুনতাহা ও কবির হোসেন এক হতে পেরে ধন্যবাদ জানান বিজিবিসহ সংশ্লিষ্টদের। এ সময় তারা দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছেন। পরে বিকেলে মাইক্রোবাসে বাসে করে স্বামী কবির হোসেন তার স্ত্রীকে তার বাড়ি রংপুরে নিয়ে যান।
তরুণী সিদ্রাতুল মুনতাহা সময় সংবাদকে বলেন, গত ২০২৩ সালের ৫ জুন আমরা বিয়ে করি। আমি ধর্মান্তরিত হই। এর মাঝে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে থাকলে আমার পরিবার পুলিশের মাধ্যমে আমাদের ঠাকুরগাঁও নিয়ে আসে। এরপর অনেক কিছু হয়ে যায়। ১ বছর ৩ মাস পর আমাদের আবার দেখা। এই ফিলিংসটা বলে বোঝানো যাবে না।
কবিরের সঙ্গে আসা প্রতিবেশী মারুফ হাসান সময় সংবাদকে বলেন, তারা দুজন ভালবেসে ঘর বেঁধেছিল। কিন্তু মাঝে অনেক ঘটনা ঘটেছে। জীবনে অনেক ভালোবাসা দেখেছি কিন্তু এদের মতো ভালোবাসা দেখিনি।