ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),চট্টগ্রামের মুরাদপুর প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই ২০২৪, ৩ শ্রাবণ ১৪৩১ : চট্টগ্রামের মুরাদপুরে মঙ্গলবার কোটা আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ চলার সময় একটি ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়া হয়। ছাদ থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরেও তাদের নির্মমভাবে পেটানো হয়। ছাদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়।
Advertisement
মুরাদপুরের বেলাল মসজিদের পাশে পাঁচ তলা ওই ভবনের ছাদ থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ফেলে দেওয়ার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। যা নিয়ে খবরও প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে।
বুধবার মুরাদপুরে ঘটনাস্থলে যান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় নগরীর মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান নেন কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা। উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার এক পর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। এক পক্ষ অপর পক্ষের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। চলতে থাকে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ ক’জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষে দুই দফায় সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটে গেলে মুরাদপুরে অবস্থান নেয় কোটা আন্দোলনকারীরা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভবনের ছাদে আটকে পড়া ছাত্রলীগ কর্মীদের বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রক্তাক্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ছাদে পড়ে আছেন।
ফেসবুকে আসা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, কোটা অন্দোলনকারীদের হামলার মুখে ছাদ থেকে ওই ভবনের পিছনের অংশের কার্নিশ ও পানির পাইপ বেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা নেমে আসার চেষ্টা করছেন।
Advertisement
তাদের মধ্যে কয়েকজন সানশেডে ও জানালার মাঝের অংশে আশ্রয় নেন। তখনও উপরে থাকা আন্দোলনকারীরা পাথর ছুড়ে এবং লাঠি-হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করে তাদের নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে। নিচ থেকেও তাদের দিকে ঢিল ছোড়া হচ্ছিলো।
এক পর্যায়ে ভবনটির ডানপাশের পাঁচ তলার সানশেড থেকে কালো পোশাক পরিহিত একজন নিচে পড়ে যান। মাটিতে পড়ে তার শরীর লাফিয়ে উঠে। তারপর নিথর পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আরেকজন উপর থেকে মাটিতে পড়ে যান।
পিছনের অন্য একটি ভবন থেকে ভিডিওটি ধারণকারীর প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায়, ‘পড় পড়…(অশ্রাব্য গালি)। অন্য একজন পড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আতর্নাদ করে বলে ওঠেন ‘আল্লাহ আল্লাহ।’
কিছুক্ষণ পর আরেকটি কণ্ঠে গালি বলতে শোনা যায়, মর মর, আর আবি না এডে তোরা ছাত্রলীগ (আর এখানে আসবি ছাত্রলীগ)।
হামলায় ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা জালাল উদ্দিন জুবায়ের। তার হাতের রগ কেটে দেওয়া হয়েছে। মেরে পা ভেঙে ফেলা হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জুবায়ের সেই হামলার বর্ণনা দেন গণমাধ্যমকে। তিনি বলেন, আমি উপরে উঠছি। ছাদে ছিলাম। এরমধ্যে ওরা দরজা-টরজা লাথি দিচ্ছে। আমি রিকোয়েস্ট করতেছি, ভাই আপনারা চলে যান। ওরা বলতেছে যে, কালকে আমাদের বোনকে মারছস না? আজকে তোকে একদম জানে মেরে ফেলবো। এরপরে আমার হাতে একটা কোপ দেয়। বাম হাতের কবজিতে একটা কোপ দেয়। কোপ দেওয়ার পরে আমি ওদের এক সাইড থেকে অন্য সাইডে যখন যাচ্ছি, পিছন থেকে একজন এসে আমাকে লাথি দেয়। লাথি দেওয়ার পরে আমি পড়ে যাই।
জুবায়ের বলেন, পড়ে যাওয়ার পরে নিচে ইট ছিলো। ইটের স্তূপ ছিলো। ওইখানে পড়ে যাই। আমি হালকা সেন্সলেস হয়ে যাই। এরমধ্যে আমার একটু সেন্স আসছে। ওরা দেয়াল টপকিয়ে ৫০-৬০ জন আসছে। সবার হাতে হকিস্টিক এবং স্টাম্প। একটা ছেলে বলতেছে যে, একে আমি চিনি। এ ছাত্রলীগ করে। বলে, একে মেরে ফেল। এটা যখন বলছে, সবাই এসে এলোপাথাড়ি আমাকে…। আমি অনেক রিকোয়েস্ট করেছি। যে ভাই আমিও তো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করি। আমাদের কি অপরাধ?
Advertisement
নগর ছাত্রলীগের নেতাদের অভিযোগ, কোটাবিরোধীর নামে ইসলামী ছাত্র শিবির ও ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা এই হামলা করেছে।
বুধবার দুপুরে মুরাদপুর এলাকা পরিদর্শন শেষে নগর পুলিশের কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, মুরাদপুরের ওই ভবনে গিয়ে সরেজমিন দেখেছি। ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ওই ঘটনা দেখে হতবাক হয়েছি। অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশেই ২ নম্বর গেটে এত ফোর্স থাকার পরেও কেন পুলিশ যেতে দেরি হয়েছে তা দেখা হবে।