ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০২৪, ২৭ আষাঢ় ১৪৩১ : কয়েক মাসের বকেয়া ভাড়া চাওয়ায় বাড়ি মালিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন এক ভাড়াটিয়া। সেই মামলায় বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজমুল হাসান সজীবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দুই মাস ধরে নাজমুল কারাগারে রয়েছেন। জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি নামের এক ভাড়াটিয়ার বিরুদ্ধে সম্প্রতি এমন অভিযোগ করেছেন সজীবের মা ও স্ত্রী। ভুক্তভোগী সজীব পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পোস্তা এলাকার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের আ. সালাম ও আসগরি বেগম দম্পতির ছেলে।
Advertisement
ভুক্তভোগীর পারিবারিক সূত্র জানায়, চকবাজার থানার পোস্তার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৭৬/২ নম্বর বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজমুল হাসান সজীব। সাততলা ওই ভবনের ৬ তলার একটি ফ্ল্যাট ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তি করেন জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি নামের এক নারী। দুই বছর থাকার পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন করে আবারো চুক্তি করেন। তিনি বাড়ির মালিকের সঙ্গে ১২ হাজার টাকা ভাড়ার একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। নতুন চুক্তির পর প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা করে প্রথম ৭ মাস ভাড়া পরিশোধ করেন। পরবর্তী ৭ মাস কখনো ১০ হাজার আবার কখনো ১১ হাজার করে অনিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করেন।
কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ভাড়া দেয়া বন্ধ করে দেন। ভাড়া না পেয়ে একাধিকবার বাড়ির মালিক সজীব ভাড়া পরিশোধ করে বাসা ছাড়ার তাগিদ ও নোটিশ দেন। তবে টাকা পরিশোধ করে বাসা ছাড়ার জন্য ২ মাস সময় চান এ্যানি। সজীবও তাকে দুই মাসের সময় দেন। কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলে বাসা না ছেড়ে উল্টো বাড়ির মালিককে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। হুমকি পেয়েও সজীব বাসা ছাড়তে বললে এ্যানি নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সজীবের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ সজীবকে ধরে নিয়ে আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সজীব জেলে থাকলেও এ্যানি তার সঙ্গে সমঝোতা করতে চান। তবে এজন্য ২০ লাখ টাকা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন সজীবের পরিবার। এই টাকা দিলে এ্যানি মামলা তুলে নিবেন।
Advertisement
সজীবের মা আসগরি বেগম বলেন, ভাড়াটিয়া কয়েক মাস ধরে ভাড়া দেয় না। চুক্তি অনুযায়ী আমরা তাকে বাসা ছেড়ে দেয়ার নোটিশ করেছি। এখন সে উল্টো আমার ছেলের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। এমন কি এই ধর্ষণ মামলায় আমার ছেলের দুই বউ ও বাসার নিরাপত্তাকর্মীকেও আসামি করেছে। এই মামলাটি কীভাবে পুলিশ নিলো? তারা কি কিছুই বোঝে না। তিনি বলেন, আমার ছেলে পেশায় ব্যবসায়ী। তার দুই স্ত্রী। সবাই একসঙ্গে আমার কাছে থাকে। দুই বউকে নিয়ে আমরা অত্যন্ত সুখী পরিবার। আসল সমস্যা হলো আমার ছেলের কোনো সন্তান নেই। এ্যানি ভেবেছে মিথ্যা মামলা দিয়ে ওই ভবন দখল করে নিবে। কিন্তু এ্যানি জানে না এই ভবনের আসল মালিক আমার ছেলে না। ভবনের মালিকানা আমার দুই ছেলের বউ ও আমার। সমঝোতার নামে ২০ লাখ টাকা দাবি করছে। বাসায় এসেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
সজীবের দুই স্ত্রী সাদিয়া আফরিন মুক্তা ও শায়লা বলেন, আমার স্বামীকে ফাঁসিয়ে বাড়ি দখলের পাঁয়তারা করছে। বাড়ি আমার শাশুড়ি ও আমরা দুই সতীনের নামে। এটা জানার পরে প্রতিদিন নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমন কি ওই মহিলা কারাগারে গিয়েও আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে।
Advertisement
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এ্যানির মোবাইলে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়। তার ভাড়া বাসায় গিয়ে কথা বলতে চাইলে রাজী হননি। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহিদুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। সত্য না মিথ্যা সেটি তদন্তে প্রমাণ হবে। মামলাটি এখন আমরা তদন্ত করছি না। এটি ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার তদন্ত করছে। আর ভাড়াটিয়াকে আমরা নামাতে পারি না। ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোদেজা খানম বলেন, মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। বাদীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। ফরেনসিক করতে দেয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাইনি।