ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),চট্টগ্রাম প্রতিনিধি,বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১ : পার্লারে চাকরি, ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন। এমন প্রলোভনে চট্টগ্রাম থেকে ভারতে পাচার করা হচ্ছে নারীদের। পাচারকারীদের প্রধান টার্গেট, পোশাক কারখানার কর্মীরা। ভারতের বন্দিদশা থেকে পালিয়ে আসার পর এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন এক তরুণী। তার ভাষ্যমতে, দেশটির একটি হোটেলে ২০ থেকে ২৫ বাংলাদেশি নারীকে দেখেছেন যারা পাচারের শিকার।
Advertisement
চট্টগ্রামের এই তরুণী কাজ করতেন বায়েজিদ এলাকার একটি পোশাক কারখানায়। সেখান থেকে বিউটি পার্লারে মোটা বেতনে চাকরির প্রলোভনে গত ২৯ মে তাকে যশোর হয়ে অবৈধপথে ভারতের ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে পাচার করে একটি চক্র। সেখানে একটি হোটেলে আটকে রেখে যৌনকর্মী হতে তার ওপর চালানো হয় নির্যাতন।
তবে কৌশলে এক সপ্তাহের মধ্যে বন্দিদশা থেকে দেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন এ তরুণী। বিভীষিকাময় সে দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠেন তিনি। জানান, পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে সখ্যতা গড়ে পারভীন ও ঝুমু নামে দুই নারী পাচার করে তাকে। রাঁচির হোটেলে অন্তত ২০ থেকে ২৫ বাংলাদেশি নারীকে দেখেছেন এই তরুণী। যারা সবাই পাচারের শিকার।
পাচারের শিকার নারী বলেন, আমি আপুকে বলেছি। যে আমাদের তো পার্লারে কাজ দেয়ার কথা ছিল। আমাদের এখানে কেনো এনেছেন, মিথ্যা কথা বলে আমাদের জীবন নষ্ট করতেছেন কেনো। আমি আপনার এবং আপনার স্বামীর কথাও বিশ্বাস করেছি। তা নাহলে জীবনেও তো এখানে আসতাম না। আমাদের খুব গালাগালি করতো। একদিন দেখি আমার বান্ধবী কিভাবে যেনো পালিয়ে গেছে। তাকে আমি ওখানে খুঁজে পাইনি। পরে ওই দিন রাতেই আমি ওখান থেকে পালিয়ে যাই। আমার মোবাইলও তারা নিয়ে নিয়েছিলো। পরে আমি বিভিন্ন মানুষের থেকে সাহায্য নিয়ে আমার বাসায় যোগাযোগ করেছি।
Advertisement
কেবল এই তরুণী নন, তার সাথে পাচারের শিকার হন বায়েজিদের কুলগাঁও এলাকার আরেক তরুণীও। কিন্তু তার কোন খোঁজ মিলছে না। তাকে ফিরে পেতে আকুতি স্বজনদের।
পাচারের শিকার এক নারীর বাবা বলেন, আমি মেয়েকে জিঞ্জাস করেছি যে কলকাতা কেনো গেছে। পরে আমাকে বলে একজন আপু বলে তাকে সেখানে নিয়ে গেছেন। সেই নারী বলে ওদেরকে পার্লারে চাকি দেবেন। এই কাজে ৫০ হাজার টাকা বেতন দেয়া হবে বলে ওই নারী মেয়ে বুঝায়। পরে আমি মেয়েকে বললাম পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া কিভাবে সেখানে গেলে। পরে জানায় তাদেরকে অন্য রাস্তায় নিয়ে গেছে।
পালিয়ে আসা তরুণী থানায় মামলা করার পরই বেরিয়ে আসে আন্তর্জাতিক মানপাচার চক্রের তৎপরতার তথ্য। পুলিশ চক্রের অন্যতম সদস্য ঝুমুর স্বামী তারেককে আটক করে। পুলিশ বলছে, যেখানে পোশাক কারখানা বেশি সেসব এলাকায় পাচারকারী চক্রের শক্ত নেটওয়ার্ক আছে। তাদের টার্গেট এসব কারখানার নারী কর্মীরা।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব অসহায় শ্রেণির নারীদেরকে ভারতে পাচার করে। এবং এই অসহায় নারীরা প্রলোভনে পরে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
Advertisement
বায়েজিদ বোস্তামী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, যেসব পোশাক কারখানা আছে সেখানে গিয়ে সেমিনার করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিতে চাচ্ছি। এছাড়া আমাদের নিয়মিত উঠান বৈঠকে এসব বিষয়ে সচেতন করে থাকি।
মানবপাচার চক্রটির নেটওয়ার্ক চট্টগ্রাম থেকে বিস্তৃত যশোরসহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায়। ঘাটে ঘাটে রয়েছে তাদের সদস্য। এখন পুরো চক্রটিকে শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ।
বন্দিদশা থেকে পালিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন পাচারের শিকার তরুণী