মাদারীপুরেও মিলেছে বেনজীরের সম্পদের পাহাড় (ভিডিও)

SHARE

শুধু গোপালগঞ্জেই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদারীপুরেও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সাবেক পুলিশ প্রধান (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। আর এই সম্পদ পাহারা দিতে দায়িত্বে থাকাকালে নিজের পছন্দমতো অফিসার পদায়ন করতেন তিনি। তাদের দিয়েই ভয়ভীতি দেখিয়ে কয়েকশ’ বিঘা জমি নামমাত্র মূল্যে কিনেছেন স্ত্রীর নামে।

জানা গেছে, অবসরে যাওয়ার আগে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের সীমানাবর্তী রাজৈর উপজেলায় স্ত্রী জিশান মীর্জার নামে ২৭৬ বিঘা জমি কিনেছেন বেনজীর আহমেদ। এক সময়ের প্রভাবশালী পুলিশের সাবেক এ আইজিপি ও র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক স্ত্রীর নামে মাত্র দুই বছরে এ সম্পত্তি কিনেছেন। জমিগুলো মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার সাতপাড় গ্রামের ডুমুরিয়া মৌজায়।

Advertisement

আইজিপি থাকা অবস্থায় ২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন সময়ে ১১৩টি দলিলে এসব জমি কেনা হয়েছে। দলিলে এসব সম্পত্তির মূল্য দেখানো হয়েছে মোট ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা। হিসাব করে দেখা যায়, বিঘা প্রতি জমির দাম পড়েছে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। অথচ বাজার মূল্য এর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। তবে গণমাধ্যমে বেনজীর আহমেদের নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পর মুখ খুলতে সাহস করেছেন অনেকেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৭৬ বিঘা জমির অধিকাংশ জমিই বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে কিনেছেন। যারা জমি বিক্রি করতে চাননি তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। কেউ জমি লিখে দিতে না চাইলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগও উঠেছে। অবসরে যাওয়ার আগে মাত্র ৫৯৪ দিনে এই ২৭৬ বিঘা জমি কেনা হয়েছে বেনজীর আহদের স্ত্রী জিশান মির্জার নামে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, স্ত্রীর নামে জোর করে ফসলি জমি লিখে নিয়েছেন বেনজীর আহমেদ। আর এতে সহায়তা করেছেন তৈয়ব আলী নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। জমি লিখে না দিলে নির্যাতনের শিকারও হতে হয়েছে অনেককেই।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিকদের অভিযোগ, রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের সাতপাড় গ্রামের ডুমুরিয়া মৌজা, নটাখোলা ও বড়খোলা এলাকার ফসলি জমি জোরপূর্বক কিনে নেন বেনজীর আহমেদ। তারা আরও জানান, পুলিশের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৈয়ব আলী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমেই সব জমি কেনাবেচা হয়েছে। রাজৈরে ১১৩টি দলিলে ২৭৬ বিঘা এবং শিবচর ঠেঙ্গামারা মৌজায় ২০১৫ সালে ৫ কাঠা জমি কিনেন বেনজীর আহমেদ।

এ বিষয়ে রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের ভাষারাম সেন বলেন, ২৪ একর ৮৩ শতাংশ ফসলি জমি আমাদের বংশের লোকদের। এই জমি সবটুকুই কিনে নেন বেনজীর আহমেদ। বিঘাপ্রতি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। প্রায় দুই বছর আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে এই জমি লিখে নেন বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবার। প্রথমে চারদিক থেকে জমি কিনে নেন তিনি। এরপর মাঝখানে আমাদের জমি থাকায় সেটা লিখে দিতে বাধ্য করেন।

Advertisement

সাতপাড় ডুমুরিয়া গ্রামের সরস্বতী রায় বলেন, আমরা জমি দিতে চাইনি। ভয় দেখিতে জমি লিখে নেন বেনজীর আহমেদ। এই জমিতে ফসল হতো, লিখে নেয়ার পর আমাদের চাষাবাদ করার আর কোনো জমি নেই। এই ফসলি জমিটুকু অনেক কষ্টে ধরে রাখছিলাম, কিন্তু সেটার আর শেষ রক্ষা হলো না।

বড়খোলা গ্রামের বাসিন্দা রসময় বিশ্বাস বলেন, বেনজীর আহমেদ আমাদের কাছ থেকে ৩২ শতাংশ জমি নিয়েছেন। একই ধরনের কথা জানিয়েছেন পার্শ্ববর্তী কদমবাড়ি এলাকার সুকবেদ বালার ছেলে অমল বালা। তিনি বলেন, আমাদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন বেনজীর আহমেদের লোকজন। তার লোকজন বলেছে, জমি লিখে না দিলে বিমানে করে বাড়িতে নামতে হবে, চারপাশ আটকে দেবেন। এমন অত্যাচারে অনেকেই জমি লিখে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বলেন, জোরপূর্বক কারও সম্পত্তি লিখে নেয়া ফৌজদারি অপরাধ। ভুক্তভোগীরা চাইলে মামলা করতে পারেন।

Advertisement

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন বেনজীর আহমদ ও তার পরিবার। দুদক শুধু অবৈধ সম্পদের হিসাব নিলেই হবে না, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জঘন্য অপরাধ করার বিচারও হওয়া দরকার।