জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বাবা দিবস। এ দিবস উপলক্ষে পৃথিবীর সব বাবার প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা। আর যেসব বাবা দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছেন, তাদের জন্য রইল মাগফিরাতের দোয়া।
আমরা জানি, বাবার মাধ্যমে সন্তানের জীবনের শুরু। কোনো সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিশোধ করতে পারে না। কঠোর শাসন, কোমল ভালোবাসা আর ত্যাগে অগ্রগামী যিনি, তিনিই তো বাবা।
বাবারা যে কোনো ধরনের দুঃখ-কষ্ট অকাতরে সহ্য করেন। সবসময় চেষ্টা করেন সামান্য কষ্টও যেন সন্তানকে স্পর্শ না করে। সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবে সারাজীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তারপরও বাবাদের সঙ্গে আমাদের সমাজের অনেকেই খারাপ আচরণ করে থাকেন। এটা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ; হাদিস বিরুদ্ধ কাজ; কোরআন বিরুদ্ধ কাজ। এ কাজের প্রতি স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা এসেছে শরিয়তে ইসলামে।
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন সময়মতো নামাজ পড়া। আমি বললাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন পিতা-মাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম তারপর কোনটি? তিনি বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
বর্ণিত হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি যে, আল্লাহর তিনটি অতি প্রিয় কাজের মধ্যে একটি হলো বাবা-মা’র সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। অন্য আরেক হাদিসে বলা হয়েছে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল যোগ হতে থাকে-১. সদকায়ে জারিয়া, ২. কল্যাণময় শিক্ষা ও ৩. এমন সৎ সন্তান যে মৃত পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে।’ –সহিহ মুসলিম
এই হাদিসে ‘সদকায়ে জারিয়া’ বলতে বোঝানো হয়েছে এমন জনসেবার কাজ, যা দ্বারা বছরের পর বছর মানুষ উপকৃত হয়। তা দ্বারা যতদিন মানুষ উপকৃত হবে, ততদিন এই সেবাদানকারীর আমলনামায় নেক আমল বা সওয়াব যোগ হবে। আর ‘কল্যাণময় শিক্ষা’ বলতে এমন জ্ঞান ও শিক্ষার কথা বলা হয়েছে, যার ফলে মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম আল্লাহর পথে চলতে থাকে। আর সৎ সন্তানের বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ট। হাদিসে আছে, মৃত ব্যক্তির জন্য সৎ সন্তানের দোয়া অনেক উপকারী।
শুধু আজকের বাবা দিবসে নয়, দুনিয়ায় যাদের বাবা বেঁচে আছেন তাদের সুস্থতার জন্য সবসময় দোয়া করুন। তাদের সেবা করুন। আর যাদের বাবা দুনিয়ায় নেই, তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া-মোনাজাত করুন। বলুন, ‘রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’ ওগো প্রভু! আমার পিতা-মাতাকে ভালো রেখ, শান্তিতে আদরে সুখে রেখ, যেভাবে তারা আমাদেরকে রেখেছেনে আমাদের শৈশবে; কিংবা তারচেও বেশি।