আনার হত্যা: কে এই শিমুল ভূঁইয়া? (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),ফুলতলা প্রতিনিধি ,শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আনার হত্যার কিলিং মিশনে নেতৃত্ব দেয়া আমানউল্লাহ আমানের নাম মূলত শিমুল ভূঁইয়া। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অতীতের অপরাধ মুছতে কিছুদিন আগে সে তার পাসপোর্ট বদল করেছে। শিমুল খুলনার ফলতলা উপজেলার বাসিন্দা।

ফুলতলার রাজনীতিকরা জানান, এক সময়ের আতঙ্ক শিমুল সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবলকে হত্যার পর পালিয়ে গিয়েছিলেন। এলাকার অসংখ্য পরিবার তার হাতে সর্বস্ব হারিয়েছে।

Advertisement

ভারতে চিকিৎসা করাতে যাওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের মাননীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের হত্যাকারীদের বিচার চাই ।

কুমিল্লা মেঘনা উপজেলার চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ

ঝিনাইদহের এমপি আনোয়ারুল আজিম হত্যায় খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার গ্রেপ্তারের পর তার ছোট ভাই ফুলতলার দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান শিপলু ভূঁইয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার বাড়িতেও কেউ নেই।

শিমুলের এক আত্মীয়া জানান, ঢাকার বাসা থেকে শিমুলের সঙ্গে আটক হয়েছে তার স্ত্রী মুক্তা এবং ভাইপো তানভির।

শিমুল ভূঁইয়ার ভাইয়ের মেয়ে তন্বী বেগমের দাবি, কোথায় কী হচ্ছে- তারা কিছু জানেন না।

এলাকার লোকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে উঠেছেন শিমুল। ফুলতলা এলাকার সাধারণ মানুষ তার পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পয়। বহু পরিবার শিমুলের হাতে খুন হয়েছে। কিন্তু তারা বিচার পাননি।

Advertisement

সেলিম সরদার, যারা পরিবারের তিন সদস্য খুন হয়েছে শিমুল ভূঁইয়ার হাতে। তিনি বলেন, পুরো অঞ্চলে শিমুল যা চায়, তাই হয়।

ফুলতলা উপজেলার চেয়ারম্যান শেখ আকরাম হোসেন জানান, সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল হত্যার পর দেড়যুগ শিমুলকে এলাকায় দেখা যায়নি। তবে সবাই জানতো দূর থেকে সে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করেন।

তিনি বলেন, গত ১২ বছরেরও তাকে (শিমুল) আমরা এ এলাকায় দেখি নি। তবে, তিনি দেখেছি- অনেকের সাথে যোগাযোগ রাখেন, ফোনে।

এলাকার লোকজন জানান, শিমুলের আশ্রয়দাতারা কেউ ছিলো খুলনায়, কেউ ঢাকায়। তাদের ক্ষমতার দাপটে সে বছরের পর বছর ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলো। এমন কী চাঞ্চাল্যকর শামসুর রহমান কেবল হত্যার সঙ্গে যুক্ত থাকার পরেও তার কিছু হয়নি। সব শেষ নাম বদল করে আমানউল্লাহ নাম নিয়ে প্রায় মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন তার অন্ধকার অতীত।

গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।

বুধবার সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউটাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়।

খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।

Advertisement

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যকে হত্যার পর মরদেহ ফেলার কাজে অংশ নেয়া সিয়াম নামে একজনকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ।

আর ঢাকায় ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।

পুলিশ বলছে, পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহিন। এমপিকে হত্যার পর মরদেহের মাংস কিমা ও হাড় টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেয়া হয়। কয়েকজন হত্যাকারীকে নিয়ে এ কাজে নেতৃত্ব দেন শিমুল। তিনি পরিচয় গোপন করে আমানউল্লাহ আমান নামে পাসপোর্ট করে কলকাতা যান।

আলোচিত সাংবাদিক শামছুর রহমানকে তার অফিসে গুলি করে হত্যা করা হয় ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে। সিআইডি এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ২০০১ সালে।

Advertisement

বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী সাংবাদিক  শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে সেলিনা আকতার বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছেন। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্যতা রয়েছে। ফলে তার (বাদীর) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ‘মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেয়া হবে না’ তার জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

Advertisement

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছেন। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে মারা গেছেন, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।