ঢাকা: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে হারাম ও অবৈধ বলে লক্ষাধিক আলেম ওলামা সাক্ষরিত একটি ফতোয়া প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জমিয়তুল উলামা।
শনিবার (১৮জুন) প্রকাশিত এ ফতোয়ায় দশটি প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে, পাশাপশি এ প্রশ্নগুলোর জবাবও দেওয়া হয়েছে।
‘মানব কল্যাণে শান্তির ফতোয়া’ শীর্ষক ফতোয়ার মূল উদ্যোক্তা সংগঠনটির চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়া ঈদগাহ এর প্রধান ইমাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ।
লক্ষাধিক আলেমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান মুফতি আব্দুস সালাম, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরার মুফতি এনামুল হক প্রমুখ।
ফতোয়ার দশটি প্রশ্ন হলো-
এক. মহান শান্তির ধর্ম ইসলাম কি সন্ত্রাস ও আতঙ্কবাদী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে,‘ইসলাম কখনো সন্ত্রাস সমর্থন করে না। অধিকন্তু সন্ত্রাস, হানাহানি, নির্মূল করার জন্যই ইসলামের আবির্ভাব। ইসলাম শান্তি ও ভালোবাসার ধর্ম।’
এর সমর্থনে এখানে ১০টি কোরানের আয়াত ও ৯টি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হাদিসের এভাবে অনুবাদ দেওয়া হয়েছে, ‘মুসলিম হলো সেই যার থেকে সকল মানুষ নিরাপদ থাকে’।
দুই. নবী রাসুলগণ বিশেষ করে প্রিয় নবীজী (সা.) কি এ ধরনের হিংস্র ও বর্বর পথ অবলম্বন করে ইসলাম কায়েম করেছেন?
জবাবে বলা হয়েছে,‘নবী রাসুলগণ বিশেষ করে প্রিয় নবীজী (সা.) ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কস্মিনকালেও সন্ত্রাস নির্মম বর্ববরতার পথ অবলম্বন করেননি। ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথ হলো দাওয়াত ও মহব্বতের পথ।’
‘সন্ত্রাসীরা কখনো ইসলাম, মুসলিম উম্মাহর বন্ধু নয়। এরা সুস্পষ্ট শক্র। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা সবার কর্তব্য।’
এর সমর্থনে চারটি কোরানের আয়াত ও একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে।
তিন. ইসলামে জিহাদ আর সন্ত্রাস কি একই জিনিস?
জবাবে বলা হয়েছে,‘জিহাদ ও সন্ত্রাস একই জিনিস নয়। জিহাদ হলো ইসলামের অন্যতম একটা নির্দেশ। পক্ষান্তরে সন্ত্রাস হলো হারাম ও অবৈধ। জিহাদ হলো নিজের এবং পরিবেশে ও সমাজে শান্তি ,নিরাপত্তা এবং সর্বকালীন কল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া।’
এখানে তিনটি কোরানের আয়াত ও কয়েকটি হাদিসের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
চার. সন্ত্রাস সৃষ্টির পথ কি বেহেশত লাভের পথ? না জাহান্নামের পথ?
‘সন্ত্রাস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা যেহেতু হারাম এবং নিষিদ্ধ সুতরাং তা কখনো বেহেশত যাওয়ার পথ হতে পারে না। এ তো জাহান্নামের পথ। যারা বেহশত লাভের জন্য বর্তমানে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে তাদের যদি বেহশত লাভ করতে হয় তবে সন্ত্রাসবাদের মতো জাহান্নামের পথ থেকে অবিলম্বে তওবা করে শান্তি ও হেদায়েতের পথে ফিরেআসতে হবে’ বলে ওই প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে।
এখানে তিনটি কোরানের আয়াত তুলে ধরা হয়েছে।
পাঁচ. আত্মঘাতী সন্ত্রাসীর মৃত্যু কি শহীদী মৃত্যু বলে গণ্য হবে?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে,‘আত্মহত্যা ও আত্মঘাত ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। নিজেকে মানববোমা বানিয়ে উড়িয়ে দেওয়া কখনো বৈধ নয়।’
এখানেও একটি কোরানের আয়াত ও কয়েকটি হাদিসের উল্লেখ করা হয়েছে।
ছয়. ইসলামের দৃষ্টিতে গণহত্যা কি বৈধ?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে,‘ইসলামে নিরাপরাধ মানুষকে গণহারে হত্যা বৈধ নয়। এমনকি সন্দেহের বশবর্তী হয়েও কাউকে হত্যা করা নিষেধ।’
এর সমর্থনে কয়েকটি হাদিসের কথা বলা হয়েছে।
সাত. শিশু নারী বৃদ্ধ নির্বিশেষে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ড ইসলাম কি সমর্থন করে?
‘শিশু নারী বৃদ্ধ দুর্বল,যারা যুদ্ধে শরিক নয়, সেই ধরনের মানুষকে হত্যা করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি যুদ্ধ চলাকালেও তা জায়েজ নয়। কিতাল বা সশস্ত্র যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যখন মুসলিম দল বের হতো তখন নবীজী (সা.) বিশেষ করে এই বিষয়ে কঠোর ভাবে সতর্ক করতেন’ বলে এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে।
এখানে দুটি হাদিসের সূত্র দেওয়া হয়েছে।
আট. ইবাদতরত মানুষকে হত্যা করা কি ধরনের অপরাধ?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘যে কোনো অবস্থায় খুন করা অপরাধ। ইবাদত বা উপসনারত কাউকে হত্যা করা সবচেয়ে জঘন্য এবং মারাত্মক অপরাধ।’
এর সমর্থনে তিনটি কোরানের আয়াত ব্যবহার করা হয়েছে।
নয়. অমুসলিমদের উপাসনালয় যথা গির্জা, মন্দির,প্যাগোডা ইত্যাদিতে হামলা করা কি বৈধ?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, ‘মুসলিম সমাজে বসবাসকারী অমুসলিমকে যদি কেউ হত্যা করে সে বেহেশতের গন্ধও পাবে না। অমুসলিমগণের গির্জা, প্যাগোডা, মন্দির ইত্যাদি উপাসনালয়ে হামলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও অবৈধ। এটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
এখানে একটি কোরানের আয়াত ও কয়েকটি হাদিস ব্যবহার করা হয়েছে।
দশ. সন্ত্রাসী ও আতঙ্কবাদীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইসলামের দৃষ্টিতে সকলের কর্তব্য কিনা?
এ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে,‘অন্যায় ও দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সবার কর্তব্য। বর্তমানে সন্ত্রাস ও আতঙ্কবাদ সারা পৃথিবীতে ইসলাম ও মুসলিমদের বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে। বদনাম করছে। এসব দুষ্কর্ম ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে মারাত্মক শয়তানি বই কিছুই নয়। সুতরাং এর বিরুদ্ধে শক্তি সামর্থের আলোকে সামাজিক ও ব্যক্তিগত প্রতিরোধ গড়ে তোলা সকলের জরুরি ধর্মীয় কর্তব্য। চুপ করে থাকার অবকাশ নেই।’
এখানে একটি কোরানের আয়াত ও একটি হাদিসের কথা বলা হয়েছে।