ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ : দুভবনের ফাঁক দিয়ে অনায়াসে যেকোনো সুউচ্চ ভবন বেয়ে উঠে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে তাদের। ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি ফাঁকা জায়গা পেলেই ঢুকতে পারেন বাসার ভেতরে। রাজধানীর ডেমরা ও গেণ্ডারিয়ায় আলাদা দুটি চুরির ঘটনা তদন্তে গিয়ে দুই আজব চোরের সন্ধান পান পুলিশ। এদের মধ্যে একজন চুরির টাকায় পরিবার নিয়ে যান কক্সবাজার বেড়াতে; আরেকজন কেনেন বাসার জন্য ফ্রিজ ও টিভি। একজন আবার পুলিশের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে বাসায় লাগিয়েছেন উন্নতমানের সিসি ক্যামেরা।
Advertisement
রাজধানীতে ডেমরার মাতুয়াইল এলাকার নয়তলা একটি ভবনের সপ্তম তলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা গোলাম রাব্বানী। গত ২৩ এপ্রিল গ্রামের বাড়ি থেকে ফিরে দেখেন আলমারি ভাঙা, ঘরের জিনিসপত্র ছড়ানো-ছিটানো। চুরি হয়ে গেছে নগদ টাকা, কয়েকটি দেশের মুদ্রা ও স্বর্ণালংকারসহ ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মূল্যবান সামগ্রী। তবে অবাক করা বিষয় ঘরের দরজা-জানালা সবই আছে অক্ষত।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশ নিশ্চিত হয় চোর ফ্ল্যাটের ভেতরে প্রবেশ করেছিলো রান্নাঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে। ১১ বাই ৮ ইঞ্চি এই ভেন্টিলেটর দিয়েই প্রবেশ করেছিলো চোর। চুরি শেষে বের হয়েছিলো একই জায়গা দিয়ে। অত্যন্ত দুর্ধষ প্রকৃতির সেই চোর ভবনটির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নিজেকে আড়াল করতে ব্যবহার করেছিলো ভিন্ন রাস্তা। দুটি ভবনের মাঝখানের ফাঁকা জায়গা দিয়ে সে উঠে যায় ছয়তলা পর্যন্ত।
Advertisement
আর এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে চুরির ঘটনায় জড়িত একমাত্র চোরকে গ্রেফতারের পর।
ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, চুরি করার পর চোর তার মামাকে বলেছিল এ এক কাজের টাকা দিয়ে অনেকদিন চলা যাবে। সে একটি মোটরসাইকেল কেনারও চেষ্টা করেছিল। বাসায় বলেছিল, সে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজ দিতে চায়।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, চুরি করার আগে সে তার মামাকে সাথে নিয়ে রেকি করে কোন্ কোন্ এলাকায় চুরি করতে পারবে। কিছু বাসার বারান্দায় পর্দা দিয়ে রাখা হয় যাতে অন্য বাসা থেকে ওই বাসা দেখা না যায়। সাধারণত ওইসব ফ্ল্যাট তারা টার্গেট করে। এছাড়া, লক্ষ রাখে কোন্ কোন্ বাসায় টানা দুই থেকে তিনদিন লাইট অফ আছে। এরপরই সে চুরি করতে যায়।
এছাড়া সিসি ক্যামেরা থেকে নিজেকে আড়াল করতে সে টার্গেট করা বাসার পেছন দিক থেকে দুই ভবনের মাঝের অল্প পরিমাণ ফাঁকা জায়গা দিয়ে ঢুকে দুই পা দিয়ে দুই ভবনের দেয়াল আঁকড়ে সে উঠে যায় বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
Advertisement
ঈদের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর গেণ্ডারিয়া এলাকায় ঘটে আরেকটি চুরির ঘটনা। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে একজনকে ঢুকতে দেখা যায় একটি বাসায়। জানালার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকে এ বাসা থেকে প্রায় ২৬ ভরি স্বর্ণ এবং নগদ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি করে পালিয়ে যায় দুই চোর। মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ ওয়াহিদ নামে একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ওয়াহিদ পুলিশকে জানায়, চুরি করা স্বর্ণালংকার এবং নগদ টাকা দুভাগ করা হয়েছিলো। তার ভাগের টাকা নিয়ে কিছু ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি পরিবার নিয়ে তিনি কক্সবাজার যান বেড়াতে। সেখানে কয়েকদিন কাটিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। তবে চেহারা পাল্টে। কেটে ফেলেন চুল, দাড়ি। যেন পুলিশ তাকে চিনতে না পারে। আর তার আরেক সহযোগী বনি তার ভাগের টাকায় কেনেন নতুন এসি, দামি ফ্রিজ এবং উন্নত মানের সিসি ক্যামেরা।
Advertisement
উপ-পুলিশ কমিশনার জানান, চুরির পর তারা এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে টাকা ও স্বর্ণ ভাগ করে। এরপর স্বর্ণ তাঁতিবাজারে বিক্রি করে।
পুলিশ বলছে, গেণ্ডারিয়ার চুরির ঘটনায় জড়িত বনি অন্য একটি মামলায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। শতাধিক চুরির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।