য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১ : একের পর এক অভিযোগ মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে এবার প্রমাণ মিললো মৃত্যু সনদ জালিয়াতির। প্রতারণার অভিযোগের অনুসন্ধানে গেলে দলবল নিয়ে চড়াও হন সময় সংবাদের সাংবাদিকের ওপর।
Advertisement
রাজধানীর উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডে অবস্থিত চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার। ছোটখাটো কিছু অভিযোগ বাদ দিলে এতদিন মানবিক কাজের জন্য প্রশংসিত এ প্রতিষ্ঠানটি এখন নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মিলটন সমাদ্দার ও তার স্ত্রী কিশোরবালা এবং কর্মচারীদের কারণে। এমন কী আশ্রিতদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রির মতো ভয়াল অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে!
প্রশ্ন উঠেছে আশ্রিতদের কতজনকে এ পর্যন্ত দাফন করা হয়েছে সে বিষয়টি নিয়েও। সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে অনুসন্ধানে নামে সময় সংবাদ। খোঁজ মেলে কিছু মৃত্যু সনদের। যেগুলোতে মিলেছে অসামঞ্জস্য। দেখা যায়, সনদের যে অংশে লেখা থাকে মৃত্যুর কারণ, সেখানে প্রায় প্রত্যেকটিতে বানান ভুলে ভরা। যা আবার স্বাক্ষর এবং সিল ব্যবহার করে নিশ্চিত করেছেন একজন এমবিবিএস চিকিৎসক।
Advertisement
জানতে চাওয়া হয় ভুলে ভরা এই মৃত্যু সনদের বিষয়ে। খোঁজ মেলে মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের ভয়াবহ প্রতারণার।
এসআইবিএল ফাউন্ডেশন হাসপাতালের কনসালটেন্ট মো. আবদুল মাহিদ খান বলেন,
আমার সিলটা মেরে, নকল একটা সাইন করে দিয়েছে। পরে তারা সেটি স্বীকার করেছে।
কোন স্বার্থ হাসিলে এই প্রতারণা করছেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে আবারও সময় সংবাদকে নিজের জাত চেনান মিল্টন সমাদ্দার। উত্তেজিত হয়ে চড়াও হন সময় সংবাদের সাংবাদিকদের ওপর।
Advertisement
’সূর্যের চেয়ে বালি গরম’ – এই প্রবাদটি প্রমাণ করে আরও বেশি উত্তেজনা দেখাতে লাগলেন তার স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা। এরই মধ্যে অসংখ্য মানুষকে প্রচণ্ডভাবে মারপিট করা, এর বিপরীতে পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে প্রতিকার না পাওয়াই মিল্টন গংদের দানবে পরিণত করেছে বলে জানান ভুক্তভোগী ও স্থানীয় কাউন্সিলর।
ভুক্তভোগী এক বৃদ্ধা নারী সময় সংবাদ জানান, তার ছেলেকে মারধর করছে দেখে, তিনি ঠেকাতে যান, তখন তারা তাকেও মারধর করে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের-১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর দেওয়ান আব্দুল মান্নান বলেন, মানব সেবার আড়ালে তার একটা অসভ্য রূপ এবং সন্ত্রাসী রূপ সেটা সে বিভিন্ন জনকে দেখিয়ে থাকে।
ক্যামেরায় চেহারা না দেখানোর শর্তে একজন বলেন, তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গেলে সে এবং তার দলবল আমার ওপর অত্যাচার শুরু করে। পরবর্তীতে মিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ করা হয়। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
আরেকজন জানান, আমি এবং আমার এক বান্ধবী অন্ধ এক বৃদ্ধকে রাত ২টা বা সোয়া ২টার দিকে পুলিশের গাড়িতে করে কল্যাণপুরে তার (মিল্টন সমাদ্দারের) যে হোম আছে সেখানে রেখে আসি। পরে তার খোঁজ খবর নিতে যাই। আমার বান্ধবী শুধু বলেছে, মিল্টন ভাই আমাদের না জানিয়ে তাকে কেন অন্য জায়গাতে নিয়ে গেলেন। এ কথা শোনার পর মিল্টন উঠে এসে আমার বান্ধবীকে ঘুষি মারে।
আসলেই কী পুলিশ তার প্রতি উদাসীন নাকি বন্ধু বৎসল? বুঝতে এক ভুক্তভোগীর করা অভিযোগ নিয়ে এবং অপর ভুক্তভোগীকে সাথে নিয়েই মিরপুর মডেল থানায় যায় সময় সংবাদ।
পরে দেখা যায় পুলিশ অভিযুক্ত মিল্টন সমদ্দারের প্রতিষ্ঠানে গেলেও তার সাথে করমর্দন করে প্রস্থান করেন সেখান থেকে। আর তাই ইতিমধ্যেই থানায় মিলটন সমাদ্দার গংদের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করা আছে, জেনেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নতুন করে অভিযোগ প্রত্যাশা করেন মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বীর আহম্মদ।
তিনি বলেন, নতুন করে কেউ যদি অভিযোগ দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেব।
Advertisement
নানা কারণে সমালোচিত মিল্টন গংদের নানা আমলনামা গত কদিন ধরেই প্রকাশিত প্রচারিত হচ্ছে একাধিক গণমাধ্যমে। তাই দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান সাধারণ মানুষের।
(প্রতারণার অভিযোগের অনুসন্ধানে গেলে মিল্টন সমাদ্দার দলবল নিয়ে চড়াও হন সময় সংবাদের সাংবাদিকের ওপর।)