ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(ভিডিও),সাভার প্রতিনিধি ,শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ : সাভার-আশুলিয়ার বিশাল এলাকাজুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ মানুষ। সেখানে এক মাসে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে চারজন। কিন্তু তাদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসীরা। কিশোর গ্যাংয়ের নেতা ও পাঁচটি মামলার আসামি স্বপন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে আটক করছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
সাভার রেডিও কলোনীর জালেশ্বর এলাকার একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় সময় তখন ভোর ৫টা ৩৪ মিনিট। দুজন কে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। দু’মিনিট পর এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর শরীরের একের পর এক চাকু মেরে তারা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে তাকে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করে। ওই শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি একটি মুদি দোকানে কাজ করেন।
হাসপাতালে ভর্তির পর ছয় দিন তাকে রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে। সব মিলিয়ে ১৬ দিনে হাসপাতালের বিল দাঁড়িয়েছে সাত লাখ টাকার উপরে। দিনমজুর বাবা মা কীভাবে এই বিল শোধ করবেন সেটি তাদের জানা নেই। যদিও সন্তানের এমন পরিণতির জন্য তার সন্তান ও পরিবারের কেউই দায়ী নন। এখন কোথা থেকে এই টাকা জোগাড় করবেন, সেই চিন্তায় ঘুম নেই রবিউলে বাবা-মায়ের।
ঢাকার সবচেয়ে কাছের উপজেলা সাভারে কিশোর গ্যাংয়ের এমন দৌরাত্ম্যের উদাহরণ ভূরিভূরি। সেখানে গেল এক মাসে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে এভাবেই মারা গেছে চারজন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশের সোর্স কিশোর গ্যাংয়ের নেতা বিনোন বাইদ এলাকার স্বপন। যার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতির পাঁচটি মামলা আছে। এলাকায় সে ঘুরে বেড়ালেও তাকে গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।
Advertisement
সাভার উপজেলায় ৫০টির অধিক কিশোর অপরাধী গ্যাংসহ প্রায় তিন শতাধিক উচ্ছৃঙ্খল কিশোর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো সাভার আশুলিয়া। বিশেষ করে গেলো কয়েক মাসে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রেডিও কলোনী থেকে পাকিজা মোড় পর্যন্ত হাফ কিলোমিটার সড়কটিতেও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তাদের ভয়ে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এই সড়কে নামতেও ভয় পান এলাকার মানুষ।
সংঘবদ্ধ ধর্ষণসহ হত্যা করতেও এদের হাত কাঁপছে না। অপরাধ করার পর গ্রেপ্তার হলেও কমছে না এদের দৌরাত্ম্য। গত ছয় মাসে সাভারে এ দলের হাতে ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন চারজন এবং গণধর্ষণের শিকার হয়েছে কিশোরী পোশাক শ্রমিক। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এরা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। কিশোর বয়সেই তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও নেশায় বুঁদ হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অপরাধ জগতে।
এদের উৎপাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো উপজেলার মানুষ। উঠতি বয়সের এসব মাস্তানদের পাশাপাশি সাভারে সন্ত্রাসী ও টপটেররদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সব সন্ত্রাসীদের হাতে রয়েছে বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্র। উপজেলায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিপূর্বে সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে পুলিশসহ বেশ কয়েকটি আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থা এসব মাস্তানদের তালিকা প্রস্তুত করে।
Advertisement
উঠতি মাস্তানদের পাশাপাশি চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম রয়েছে এ তালিকায়। সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযান এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতিমধ্যে পূর্বের তালিকাকে হালনাগাদ করা হয়েছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। অভিজ্ঞ মহলের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাধিক তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ করলেও সন্ত্রাসীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।