ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(ভিডিও),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ,সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২ বৈশাখ ১৪৩১ : সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাত থেকে ৩১ দিন পর মুক্তি মিলেছে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজসহ ২৩ নাবিকের। এখন তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরের পথে। আবারও জলদস্যুদের কবলে পড়ার আশঙ্কায় জাহাজের চারপাশে একাধিক আন্তর্জাতিক যুদ্ধজাহাজ রয়েছে বলে জানা গেছে।
Advertisement
এদিকে জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এমভি আবদুল্লাহর ভেতরের বেশ কয়েকটি ছবি সময় সংবাদের হাতে এসেছে। এসব ছবি দেখেই বোঝা যায় জাহাজের ভেতরে জিম্মি থাকা নাবিকদের দুর্বিষহ জীবনের কথা।
১২ মার্চ বিকেলে সোমালিয়া উপকূল থেকে অন্তত সাড়ে ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে এসে এমভি আবদুল্লাহকে ছিনতাই করেছিল জলদস্যুরা। এ সময় জলদস্যুদের কবল থেকে রক্ষা পেতে স্পেন-ইতালিসহ অন্তত চারটি দেশের নৌবাহিনীর কাছ জরুরি বার্তা দিয়েছিলেন জাহাজের ক্যাপ্টেন। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা মেলেনি।
পরবর্তীতে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছার পর আক্রমণ করে জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্ত করে আনার পরিকল্পনা করলেও তাতে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ সরকার এবং জাহাজ মালিক প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম।
সবশেষ ১৩ এপ্রিল বিকেলে জলদস্যুদের কাছে বিমানে করে পৌঁছানো হয় মুক্তিপণের ডলার ভর্তি তিনটি ব্যাগ। অর্থ পেয়েই মধ্যরাতে ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি মুক্ত করে দেন জলদস্যুরা।
Advertisement
মুক্তি পাওয়া ২৩ নাবিক হলেন: মাস্টার রাশেদ মোহাম্মদ আব্দুর, চিফ অফিসার খান মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ, সেকেন্ড অফিসার চৌধুরী মাজহারুল ইসলাম, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার আহমেদ তানভীর, ফায়ারম্যান শাকিল মোশাররফ হোসেন, চিফ কুক ইসলাম মো. শফিকুল, জেনারেল স্টুয়ার্ড উদ্দিন মোহাম্মদ নূর, রহমান মো. আসিফুর, হোসাইন মো. সাজ্জাদ, ওয়েলার হক আইনুল, শামসুদ্দিন মোহাম্মদ। এদের সবার বাড়ি চট্টগ্রামে।
আরও আছেন- লক্ষ্মীপুর ও ফেনীর ইঞ্জিন ক্যাডেট খান আইয়ুব, ইলেকট্রিশিয়ান উল্লাহ ও ইব্রাহিম খলিল, নোয়াখালীর নাবিক হক মোহাম্মদ আনোয়ারুল ও ফাইটার আহমেদ মোহাম্মদ সালেহ, খুলনার সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম মো. তৌফিকুল, ফরিদপুরের থার্ড অফিসার ইসলাম মো. তারেকুল, টাঙ্গাইলের ডেক ক্যাডেট হোসাইন মো. সাব্বির, নওগাঁর চিফ ইঞ্জিনিয়ার শাহিদুজ্জামান এ এস এম, নেত্রকোনার থার্ড ইঞ্জিনিয়ার উদ্দিন মো. রোকন, নাটোরের অর্ডিনারি সীম্যান মোহাম্মদ জয়, সিরাজগঞ্জের হক মো. নাজমুল ও বরিশালের হোসাইন মো. আলী।
জানা গেছে, সোমালীয় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে উপকূল ত্যাগ করে ভারত মহাসাগর অংশে পৌঁছাতেই এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের আশপাশে অবস্থান নেয় অন্তত চারটি দেশের নৌবাহিনীর কয়েকটি বোট। এরপর এসব দেশের নৌসদস্যরা জাহাজটিতে উঠে আসেন। এ সময় তারা নিজ নিজ দেশের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের নাবিকদের সঙ্গে ছবিও তোলেন। অবশ্য জাহাজের নাবিকরা আগে থেকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে উল্লাস করছিলেন।
মুক্তিপণ দিয়ে ফেরার পথে ভারত মহাসাগরের ঝুঁকিপূর্ণ অংশ অতিক্রমের সময় সোমালীয় জলদস্যুদের অন্য কোনো গ্রুপ হামলা চালানোর শঙ্কায় নৌসদস্যরা এ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে জানান মেরিন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
এ বিষয়ে কেএসআরএম গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন,
ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ ঘিরে রেখেছে এমভি আবদুল্লাহকে। তারাও একটি মানসিক চাপের মধ্যে ছিল। আমাদের মতো চারটি দেশের নৌবাহিনীর তাগিদ ছিল, যাতে তাড়াতাড়ি ওই ইস্যুটা সমাধান করা যায়। এ কারণে আল্লাহর রহমতে আমরা এ ইস্যুটা দ্রুত সমাধান করতে পেরেছি।
কেএসআরএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন,
আমেরিকার একটা কন্ডিশন আছে; একটি ডলার নিতে হলেও তাদের সংস্থার অনুমতি নিতে হয়। ওটা আমাদেরও নিতে হয়েছে। এ ধরনের ইন্টারন্যাশনাল কাজে তাদের অনেক অ্যাসোসিয়েটের সমন্বয় করতে হয়।