ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর থেকেই দেশটির সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে ভবনে হামলা করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ জন নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয় তেহরান।
Advertisement
এর পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে চলা সামরিক উত্তেজনার মধ্যে শনিবার (১৩ এপ্রিল) ইসরায়েলের ভূখণ্ডে সরাসরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে ইরান। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবারইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে কয়েক ডজন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে তারা। ‘ট্রু প্রোমিজ’ নামে অভিযানের আওতায় এসব ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আগেই এই বিষয়ে সতর্ক করেছিল।
এদিকে, তেহরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক হামলার ভয়ে প্রবল আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ইসরায়েল। এর আগে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট একটি পণ্যবাহী জাহাজ জব্দের দাবি করেছে ইরান।
আন্তর্জাতিক আইনে যেকোনো কূটনৈতিক স্থাপনায় হামলার জবাবে হামলা করা সম্পূর্ণ বৈধ। এ কারণে ইরানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ইসরাইলকে কঠোর ও অনুশোচনামূলক জবাব দেয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন।
গত বুধবার (১০ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের নামাজের খুতবায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইমাম খামেনেয়ী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে ইসরাইলি হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী একটি দেশের কূটনৈতিক মিশনকে ওই দেশের ভূখণ্ড হিসেবে গণ্য করা হয়। অপশক্তি ইহুদিবাদী ইসরাইল ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালিয়ে প্রকারান্তরে ইরানি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে। তাই ইসরাইলকে এই অপরাধের জন্য শাস্তি পেতে হবে এবং তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়ে ছিলেন, ইরান শিগগিরই হামলা চালাবে। এছাড়া মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ইরান ইসরাইলে শতাধিক ড্রোন ও কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। এ অবস্থায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নানা ধরনের জল্পনা প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃত অর্থেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইহুদিবাদী ইসরাইলের জন্য চরম দুঃস্বপ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি বলে উল্লেখ করেছে। ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র বহরে রয়েছে নানা ধরনের বহু ক্ষেপণাস্ত্র।
Advertisement
ইরানের শক্তিশালী নয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে জেনে নিন :
১) নাম: খোররামশহর-৪ ক্ষেপণাস্ত্র (খাইবার)
পাল্লা: ২ হাজার কি.মি.
দৈর্ঘ্য: ১৩ মিটার
ব্যাস: ১.৫ মিটার
ওজন: ৩০ টন
ওয়ারহেড ওজন: ১৫০০ কেজি
গতি: বায়ুমণ্ডলের বাইরে ১৬ ম্যাক/ বায়ুমণ্ডলের ভিতরে ৮ ম্যাক
২) নাম : হাজি কাসেম ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১৪০০ কি.মি
দৈর্ঘ্য: ১১ মিটার
ব্যাস: ৮৫ থেকে ৯৫ সেমি
ওজন: ৭ টন
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজি
গতি: ৫ ম্যাক
৩) নাম : খায়বার শেকান ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১৪৫০ কি.মি.
দৈর্ঘ্য: ১০.৫ মিটার
ব্যাস: ৮০০ মিমি
ওজন: ৪৫০০ কেজি
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজি
গতি: ঘণ্টায় ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি
৪) নাম : সিজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ২,০০০ থেকে ২,৫০০কি.মি.
দৈর্ঘ্য: ১৭.৫৭ মিটার
ব্যাস: ১.২৫ মিটার
ওজন: ২৩ টন
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজির বেশি
গতি: ১২ থেকে ১৪ ম্যাক
৫) নাম: পাভে ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১,৬৫০ কি.মি.
উড়ন্ত উচ্চতা: ৫০ মিটারের কম
গতি: ৬০০থেকে ৯০০ কিমি/ঘন্টা
৬) নাম : ফাত্তাহ-২ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: ১,৪০০ কি.মি. এর বেশি
দৈর্ঘ্য: ১২ মিটার
ব্যাস: প্রথম অংশ:৮০ সেমি / দ্বিতীয় অংশ: ৫০ সেমি
ওজন: ৩,৫০০থেকে ৪,১০০ কেজি
ওয়ারহেড ওজন: ৫০০ কেজি
গতি: ৫ ম্যাক
৭) নাম : কদর ক্ষেপণাস্ত্র (ট্রিপল)
পাল্লা: ১,৯৫০ কি.মি. পর্যন্ত
দৈর্ঘ্য: ১৫.৫ থেকে ১৬.৫মিটার
ব্যাস: ১.২৫ মিটার
ওজন: ১৭,৪৮০ কেজি পর্যন্ত
ওয়ারহেড ওজন: ৭০০ থেকে ১০০০ কেজি
গতি: প্রায় ৯ ম্যাক
৮) নাম : এমাদ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: প্রায় ১,৭০০ কিমি
দৈর্ঘ্য: ১৫.৫ মিটার
ব্যাস: ২.১৮ মিটার
ওজন: ১,৭৫০ কেজি
Advertisement
৯) নাম : শাহাব-৩ ক্ষেপণাস্ত্র
পাল্লা: প্রায় দুই হাজার কি.মি.
দৈর্ঘ্য: প্রায় ১৬ মিটার
ব্যাস: ১.২ মিটার
ওজন: ১,৭৮০ কেজি