ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম,(ভিডিও),সাভারের আশুলিয়া প্রতিনিধি ,বুধবার, ১০ এপ্রিল ২০২৪, ২৭ চৈত্র ১৪৩০ : সাভারের আশুলিয়ায় বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে যাত্রীদের মারধরে চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক নয়। বরং যাত্রী তোলা নিয়ে প্রতিযোগিতার সময় মা-বাবার দোয়া পরিবহনের অপর একটি বাসের চাপায় ওই চালক ও কন্ডাক্টরের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Advertisement
দুর্ঘটনার পর নিজেকে বাঁচাতে যাত্রীদের মারধরের গল্প সাজিয়েছেন সেই সময় চালকের আসনে থাকা ইতিহাস পরিবহনের বাসের হেলপার আব্দুর রহমান। আজ বুধবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী বলেন, ঘটনার পর সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে ইতিহাস পরিবহনের হেলপার আব্দুর রহমান বলেছেন, বেশি ভাড়া চাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১০-১২ জন মিলে বাস থেকে নামিয়ে চালক ও কন্ডাক্টরকে পিটিয়ে আহত করেছে। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদেরকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পুলিশ যখন সুরতহাল করে, আরও অফিসাররা যখন সেখানে যান, তখন ইনজুরি মার্ক (আঘাতের চিহ্ন) যে রকম থাকার কথা, সেই চিহ্নি বক্তব্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয় না। একজনের বুকে, অন্যজনের মাথার দিকে খানিকটা আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ১০ থেকে ১২ জন মিলে কাউকে আঘাত করলে কিংবা পেটালে যেরকম ইনজুরি হওয়ার কথা, সে রকমটি পরিলক্ষিত না হলে আমাদের সন্দেহ হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল কাফী আরও বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধানে আমরা একজন প্রত্যক্ষদর্শীকে পাই, যিনি আমাদের জানান, এখানে আরেকটি বাস চলে এলে দুই জন দুই বাসের মাঝখানে চাপ খেয়েছেন। পরে তাদের হাসপাতালে নিলে সেখানে মৃত্য হয়। এছাড়া আমাদের হাইওয়ে পুলিশের র্যাকার কর্মকর্তা ওই বাস সড়ক থেকে সরিয়ে নিতে গিয়েছিলেন, তার বক্তব্যেও সেখানে মারামারি হয়েছে এরকম কোনো বক্তব্য পাইনি।
পরবর্তীতে আবারও আমরা হেলপারের সাথে কথা বলি। একপর্যায়ে তিনি বলেন যে, ঘটনার সত্য। স্টিয়ারিংয়ে তিনি নিজেই ছিলেন। ওই সময় তিনি নিজেই বাস চালাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে অন্য আরেকটি পরিবহন পাশ দিয়ে ওভারটেক করতে যাচ্ছিল, তখন তিনি (হেলপার) আগে থাকার জন্য প্রতিযোগিতা করে বাম দিকে গাড়ি চাপান। এসময় নিহত দুজনের একজন বাসের পাশেই রাস্তায় ছিলেন, আরেকজন বাসের গেটের দিকে ছিলেন। বাসটি যখন জরুরি ভিত্তিতে বামে চাপাতে যান হেলপার, তখন অপর বাসের সঙ্গে ওই দুই ব্যক্তির ধাক্কা লাগে। তারা চাপ খেয়ে পড়ে যান। পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। প্রাথমিক তদন্তে আমরা এতটুকু পেয়েছি।
Advertisement
বিষয়টি ময়নাতদন্ত করা হয়েছে এবং ময়নাতদন্ত শেষে যে রিপোর্ট ডাক্তাররা দেবেন এবং আমাদের তদন্ত আরও বাকি রয়েছে। সবকিছু মিলে আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব, আসলে কী ঘটেছিল।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সুমন শেখ বলেন, ‘গতকাল আমি আমার পরিবারের লোকজনকে গাড়িতে তুলে দিতে আসি। এ সময় দেখতে পাই, ইতিহাস বাসের গেটে দুজন ঝগড়া ও হাতাহাতি করছে। এরপর একটি বড় বাস তাদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এরপর তাদের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। আর বাসের ভেতরে চালকের আসনে বসে থাকা কালো গেঞ্জি পরা এক লোক জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আহত দুজনকে উদ্ধার করে পুলিশ ও লোকজন হাসপাতালে নিয়ে যায়।
নিহত কন্ডাক্টর হৃদয়ের ভাই আতিকুর রহমান বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও লোকজনের কথা শুনে মারামারি হয়েছে কি না, তেমন বুঝতে পারিনি। শুনেছি, গাড়ি চাপা দেওয়ায় তারা মারা গেছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাই। যারাই জড়িত হোক, তারা যেন শাস্তি পায়।
Advertisement
একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গত সোমবার (৮ এপ্রিল) আশুলিয়ার ডিইপিজেড এলাকায় নবীনগর-চন্দ্রামুখী মহাসড়কের লেনে ইতিহাস পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর একটি দূরপাল্লার বাস পাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর বাসের গেট ঘিরে মানুষের ভিড়। যাত্রীরা যে যার মতো নামছেন। কিছুক্ষণ পর দুজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।