ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, বৃহস্পতিবার, ০৪,এপ্রিল ২০২৪ : ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রদেশে চলমান যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় এবার মিয়ানমারের রাজধানী নাইপিদোর একটি সামরিক ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা করেছে সামরিক শাসন বিরোধী সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ঐক্যমঞ্চ পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (পিডিএফ)। দেশটির জান্তাবিরোধী গণতান্ত্রিক ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ) ইতোমধ্যে হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। খবর বিবিসির
Advertisement
সেই বিবৃতি অনুসারে, নেইপিদো মিয়ানমার বিমান বাহিনীর হেড কোয়ার্টার ও ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে বৃহস্পতিবার সকালে বিস্ফোরকবাহী ২৯টি ড্রোন পাঠিয়ে চলানো হয়েছে এ হামলা।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন সামরিক কর্মকর্তা বিবিসি বার্মিজের কাছে হামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ৭ টি ড্রোনকে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে সেনারা, আর একটি ড্রোন আঘাত হানার আগেই বিমান ঘাঁটির রানওয়েতে আছড়ে পড়েছে।
হামলায় ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কিত কোনো তথ্য তারা দিতে চাননি।
মিয়ানমারের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ হামলার কোনো সংবাদ এখনও প্রচার করা হয়নি। বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলো অবশ্য হামলার সংবাদ প্রকাশ করেছে।
১৯৬২ সালে তৎকালীন গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে প্রথমবার জাতীয় ক্ষমতা দখল করেছিল মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। দেশটিতে সামরিক বাহিনীবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর উত্থানও ঘটে ওই সময়ে থেকেই।
Advertisement
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৬২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী ও তাদের স্থাপনাকে লক্ষ্য করে যত হামলা ঘটেছে, সেসবের মধ্যে বৃহস্পতিবারের হামলাটি সবচেয়ে বড়। নাগ জোটের নেইপিতৌ শাখার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, জোটের প্রতিরক্ষা বিভাগের নির্দেশে পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) এই হামলা চালিয়েছে।
মিয়ানমারে বর্তমানে জান্তাবিরোধী যত সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে, সেগুলোর ঐক্যমঞ্চের নাম পিপলস ডেমোক্রেটিক ফোর্স।
২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারকে হটিয়ে জাতীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনা বাহিনী। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং এ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
অভ্যুত্থানে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চিসহ তার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি’র (এনএলডি) সরকারের মন্ত্রিসভা, সংসদ সদস্য, ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে জান্তা ক্ষমতা দখলের পর পর মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনগণ বিক্ষোভ শুরু করেছিল; কিন্তু সেই বিক্ষোভ সামরিক সরকার কঠোর হাতে দমনের পর নতুন করে উত্থান ঘটতে থাকে জান্তাবিরোধী সামরিক গোষ্ঠীগুলোর। ইতোমধ্যে দেশটির জান্তাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ) নামের একটি জোটও গঠন করে। সেই জোটের সঙ্গে ঐক্য স্থাপিত হওয়ার পর পিডিএফ গঠন করে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো।
Advertisement
২০২২ সালের অক্টোবর থেকে পিডিএফের সঙ্গে মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশে যুদ্ধ শুরু হয়েছে জান্তা বাহিনীর। সেই যুদ্ধে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে পিডিএফ।