ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),যশোর প্রতিনিধি,বুধবার, ০৬ মার্চ ২০২৪ : বহুল আলোচিত উদীচী বোমা হামলার ২৫ বছর পূর্তি হলেও এখনো হামলাকারীদের শনাক্ত এবং তাদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। মামলাটি পুনরায় চালুর জন্য উচ্চ আদালতের একটি আদেশের জন্য এক যুগ ধরে অপক্ষো করছেন ওই ঘটনায় আহত ও নিহতদের পরিবারসহ যশোরবাসী।
Advertisement
বাংলাদেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি কলঙ্কিত দিন ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ। এদিন যশোর টাউন হল ময়দানে উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে বর্বর বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। আজ বুধবার দুই যুগ পার হয়ে গেল, এখনো পর্যন্ত এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত বিচার হয়নি।
ক্ষতিগ্রস্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের অভিযোগ, রাষ্ট্রযন্ত্রের অবহেলার কারণেই বিচার পাচ্ছেন না তারা।
উদীচী হামলায় নিহত তপনের বড় বোন নাজমুন সুলতানা বিউটি বলেন, ‘ আজ ২৫ বছর হয়েছে ভাইকে হারিয়েছি। সারা বছরই কষ্ট। কিন্তু মার্চ মাস আসলেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। আমার মা শয্যাশায়ী। আমার মায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরাও এই হত্যার বিচার দেখতে চাই। প্রত্যেক বছর সাংবাদিকরা এই বিষয়টা সামনে নিয়ে আসেন। সবাই এই বিচারের আশায় আছে। কিন্তু জেগে ঘুমায় থাকলে সেই ঘুম ভাঙানো যায় না। আমরা চাই আমার ভাই হত্যার বিচার হোক। রাষ্ট্রের কাছে এই একটাই আবেদন।
Advertisement
এই সরকার দাবি করে বলেন, গত ২০/২৫ বছরে বাংলাদেশে বহু হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে। উদীচীর মতো একটা বড় হত্যাকাণ্ড, যেটা জাতীয় পর্যায়ের, এর বিচার না হওয়ায় সরকারের দায় আছে। আমরা মনে করি রাষ্ট্র যদি চায় এখনই এর বিচার সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, উদীচীর ঘটনায় পা হারিয়ে নানাবিধ কষ্টের মধ্যে আছি। এর মধ্যে বড় ব্যথা বিচার না পাওয়ার। ন্যায় বিচারটা পেলে দোষীদের দণ্ডিত হতে দেখতে পারলে সব কষ্ট ম্লান হয়ে যেত।
উদীচী যশোরের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান খান বিপ্লব বলেন, আমাদের আক্ষেপ যে ২৫ বছর ধরে আমাদের বিচার চাইতে হচ্ছে। ২০০৬ সালে এই মামলার প্রথম রায়ে সব আসামিকে খালাস দেয়া হয়। সেখানে বিচারক দুর্বল তদন্তের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। ন্যায় বিচার পেতে আমরা আপিল ও পুনঃতদন্তের আবেদন করি। সেটাও ১৮ বছর হয়ে গেছে। দীর্ঘ এই সময়েও একটা তদন্ত পেলাম না। বর্তমান প্রজন্ম উদীচী ট্রাজেডির কথা জানেই না। ফলে এর বিচার নিয়ে আমাদের মধ্যে সংশয় রয়েই গেছে। তবে আমরা চাই এই সরকার একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।
Advertisement
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরের সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার আলম খান দুলু বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একটি কলঙ্কিত দিন ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ। এদিন যশোর টাউন হল ময়দানে উদীচীর জাতীয় সম্মেলনে বর্বর বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। আজকে দুই যুগ পার হয়ে গেল, এখনো পর্যন্ত আমরা এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত বিচার পেলাম না। প্রকৃত দোষীদের শাস্তির মুখোমুখি করা হলো না।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইদ্রিস আলীর দাবি, এ মামলার আপিল শুনানির জন্য তদবির প্রয়োজন। শুনানি সম্পন্ন হলে মামলাটি গতি পাবে এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষে আজ বুধবার (৬ মার্চ) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, বিকেলে প্রতিবাদী মৌন মিছিল, আলোচনা সভা, শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মশাল প্রজ্বলন এবং প্রতিবাদে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করবে উদীচী যশোর।
Advertisement
জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ রাতে যশোরে এ টাউন হল মাঠে উদীচীর দ্বাদশ মহাসম্মেলনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় নিহত হন ১০ সাংস্কৃতিক কর্মী। অঙ্গহানি ঘটেছে সুকান্ত, নাহিদসহ কয়েকজনের। আর বোমার স্প্রিন্টারের আঘাতে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক মানুষ; যার দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। কিন্তু দুর্বল তদন্তের কারণে বিভীষিকাময় ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৬ সালের ৩০ মে খালাস পেয়ে যায় সব আসামি।
এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে উদীচী ও ২০১১ সালে সরকার হাইকোর্টে আপীল করলে তা গৃহীত হয়। এরপর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৭ আসামি আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
Advertisement
মামলাটি পুনরায় চালুর জন্য উচ্চ আদালতের একটি শুনানি ও আদেশের প্রয়োজন। কিন্তু এক যুগ ধরে সেই শুনানি হয়ে ওঠেনি। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বিচার না পেয়ে হতাশ ক্ষতিগ্রস্ত ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। তাদের অভিযোগ রাষ্ট্রযন্ত্রের অবহেলার কারণেই বিচার পাচ্ছেন না তারা।