ঢাবির মেডিকেল সেন্টার এক ডাক্তারের দখলেই চার অ্যাম্বুলেন্স

SHARE

ডা. মো. তানভীর আলী

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : শিক্ষার্থীরা অ্যাম্বুলেন্স পাক বা না পাক, প্রতিদিন সকাল ৭টায় বাসার নিচে একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকা চাই-ই তার। ওই অ্যাম্বুলেন্সে সন্তানকে স্কুলে দিয়ে আসার পর ছুটি মেলে আগের রাতে ডিউটি করা চালকের। এরপর দিনের শিফটের অ্যাম্বুলেন্সও ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন তিনি। এমন অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের চিফ মেডিকেল অফিসার (সিএমও) ডা. মো. তানভীর আলীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে মেডিকেল সেন্টারের অর্ধশতাধিক ফলদ ও ঔষধি গাছ কেটেছেন তিনি। ডাক্তার-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গেও করেন দুর্ব্যবহার। পদোন্নতি আটকে দেওয়ার ভয় দেখান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স চারটি। এগুলোই পালাক্রমে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন ডা. মো. তানভীর আলী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিকেল সেন্টারের এক কর্মচারী জানান, প্রতিদিন সকাল ৭টায় একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বেইলি রোডে ডা. তানভীরের বাসায় যেতে হয়। অ্যাম্বুলেন্সে তিনি তাঁর ছেলেকে দিতে যান ধানমন্ডি-১১ নম্বরের একটি স্কুলে। এ সময় একজন অফিস পিয়ন তাঁর সঙ্গে থাকেন। এরপর তিনি সেই অ্যাম্বুলেন্সে মেডিকেল সেন্টারে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে একজন পিয়ন তাঁর ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। এরপর বিকেলে ডা. তানভীর অ্যাম্বুলেন্সে করে বাসায় ফেরেন। যতক্ষণ তিনি বাসায় থাকেন, ততক্ষণ অ্যাম্বুলেন্সটি সেখানেই থাকে। সন্ধ্যার আগে তিনি ছেলেকে নিয়ে কাকরাইল সার্কিট হাউস মসজিদে যান নামাজ পড়তে। সেখান থেকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সের ছুটি মেলে। সাধারণত, নাইট ডিউটিতে থাকা চালকরা সকালে গিয়ে তাঁর ছেলেকে বাসা থেকে স্কুলে নিয়ে যান। বাকি আনা-নেওয়ার কাজ করেন দিনের শিফটে কাজ করা চালকরা। এমন ঘটনা ঘটছে সপ্তাহের পাঁচ দিন।

Advertisement

ছুটির দিনেও (শুক্র ও শনিবার) তিনি মেডিকেল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স নিজের কাজে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে চালককে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বাসায় যেতে বলেন তিনি। ওই অ্যাম্বুলেন্সে সকাল ১০টার দিকে ব্যক্তিগত কাজে বেরিয়ে যান। বনানী কবরস্থানসংলগ্ন মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ পড়েন। এর পর গাড়িটি ছেড়ে দেন। বিকেল ৩টার দিকে আরেকটি গাড়ি গিয়ে তাঁকে বনানী থেকে নিয়ে আসে। শনিবারও সকাল ৮টায় তাঁর বাসার সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছে যায়। সাড়ে ৮টার দিকে তিনি সেটিতে তাঁর ছেলেকে নিয়ে শান্তিনগরে একটি কোচিং সেন্টারে যান। পরে সেখান থেকে মেডিকেল সেন্টারে আসেন। এভাবে ব্যক্তিগত কাজে অ্যাম্বুলেন্স ব্যস্ত রাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অসুস্থ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক সময় কল করে অ্যাম্বুলেন্স পান না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী মেডিকেল সেন্টারের কোনো অ্যাম্বুলেন্স কেউ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারেন না। সিএমও ডা. তানভীরের বিরুদ্ধে এর আগেও ব্যক্তিগত কাজে মেডিকেল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। কারণ দর্শাতে বলা হলে তিনি আর এ কাজ করবেন না বলে তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’
গত রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্সের চলাচল অনুসরণ করে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো-ছ ৭১-২৮০২ নম্বরের একটি অ্যাম্বুলেন্সে ডা. তানভীর তাঁর ছেলেকে ধানমন্ডির স্কুলে নামানোর পর মেডিকেল সেন্টারে আসেন।

Advertisement

 

ডা. মো. তানভীর আলীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, এক মাস ধরে ছুটির দিনগুলোতে তিনি মেডেকেল সেন্টারের গাছ কাটছেন। এর মধ্যে ৫০ বছরের পুরোনো গাছও রয়েছে। এরই মধ্যে কাটা পড়েছে আম, কাঁঠাল, কড়ই, বরই, হরীতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। মেডিকেলে সেন্টারের একটি সূত্র জানায়, এসব গাছ তিনি রাতের আঁধারে বিক্রি করে দেন। পরে গাছের গোড়া তুলে মাটি দিয়ে সেই গর্ত ভরাট করে রাখেন, যাতে বোঝা না যায়। এই কাজে অফিসের এক পিয়ন তাঁকে সহায়তা করেন বলে জানা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, ক্যাম্পাসের গাছ কাটা বা ডাল ছাঁটাইয়ের জন্য আরবরি কালচার সেন্টারের অনুমতি নিতে হয়। ডা. তানভীর ওই অনুমতি চেয়েছিলেন; কিন্তু তাঁকে তা দেওয়া হয়নি। তার পরও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে গাছগুলো কাটেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আরবরি কালচার সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সমকালকে তিনি বলেন, ‘আরবরি কালচার সেন্টার থেকে মেডিকেলে সেন্টারের গাছ কাটতে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
মেডিকেল সেন্টারের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিয়ম থাকলেও ডা. তানভীর রোগী দেখেন না। কিন্তু কল ভাতা ঠিকই নেন। সবার সঙ্গে বাজে আচরণ করেন। ডিউটি চাপিয়ে দেন অন্যদের ওপর। অফিস স্টাফকে দিয়ে বাসার কাজ করান। পদোন্নতি আটকে দেওয়ার ভয় দেখান।

Advertisement

ডা. তানভীর আলী অবশ্য দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্স প্রতিদিন আমাকে বাসা থেকে নিয়ে আসে। তখন শুধু ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসি। এর বাইরে আর অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করি না।’ ব্যক্তিগত গাড়ি থাকতেও কেন মেডিকেল সেন্টারের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেন– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আগে থেকে চলে আসছে। আগেও সিএমওদের প্রতিদিন অ্যাম্বুলেন্সে বাসা থেকে আনা হতো।’ আর যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মেডিকেল সেন্টারের গাছ কেটেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমি অনেকের কাছে ডা. মো. তানভীরের ব্যাপারে শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’