মেডিকেল ভর্তিতে ওএমআর শিট ছেঁড়া সন্দেহভাজন সেই চিকিৎসক লাপাত্তা! (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় নকল না করলেও শিক্ষার্থীর ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ নিয়ে চলছে তোলপাড়। পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত যে চিকিৎসক পরিদর্শকের দিকে সন্দেহের তীর, ঘটনার পর থেকে তিনি লাপাত্তা। আসেন না হাসপাতাল ও কলেজে। বন্ধ ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরও।

Advertisement

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়ার চিঠির প্রেক্ষিতে জানা যায়, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় তিনি শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২৩ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার পাশের এক পরীক্ষার্থী ডিভাইস ব্যবহার করে নকল করছিলেন। এক ঘণ্টা পরীক্ষার ৪০ মিনিট পর দায়িত্বরত এক নারী পরিদর্শক ডিভাইস ব্যবহার করা শিক্ষার্থীকে ধরে ফেলেন।

Advertisement


হুমাইরার দাবি, এ সময় নকল করা শিক্ষার্থীর মতো সন্দেহবশত তারও ওএমআর শিট ছিঁড়ে ফেলেন ওই নারী পরিদর্শক। পরে, হুমাইরার দাবির মুখে যাচাই করে তার উত্তরপত্র সঠিক ছিল বলে প্রমাণ হয়। পরে দুঃখ প্রকাশ করে তাকে নতুন একটি ওএমআর শিট দেয়া হয়। তবে তখন সময় ছিল অল্প। এতে হুমাইরার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।

স্বজনরা জানান, কক্ষের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শকের ভুলের শিকার হন ওই ভর্তিচ্ছু। তারা এ ঘটনার প্রতিকার চান। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরে দেয়া হুমাইরা ইসলাম ছোঁয়ার চিঠি। ছবি: ভিডিও থেকে নেয়া

ওই কেন্দ্র ছিল সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধীনে। ঘটনার পর শুরুতে শেরেবাংলা কেন্দ্র এবং পরে মেডিকেল কলেজে এসেও কোনো সুরাহা পায়নি হুমাইরার পরিবার। শেষমেষ ১১ ফেব্রুয়ারি ফলাফল ঘোষণার দিন অধিদফতরে এসে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেই অভিযোগ জানান হুমাইরা ও তার পরিবার। মন্ত্রী চলে যাবার পর ঘটে মারধরের ঘটনা।

Advertisement

 

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ওই কক্ষে পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন তিনজন চিকিৎসক। যাদের মধ্যে দুজন নারী অপরজন পুরুষ। দুই নারী চিকিৎসকের একজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের। হুমাইরা বলছেন, যিনি তার ওএমআর ছিঁড়েছেন তিনি বাঙালি। নথি বলছে, ডা. নাফিসা ইসলামের সঙ্গেই হুমাইরার ওই কাণ্ড ঘটে।

যদিও ঘটনার পর থেকে নাফিসা ইসলাম লাপাত্তা। তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালের কোথাও পাওয়া যায়নি। বন্ধ পাওয়া গেছে পরিদর্শন নথিতে দেয়া তার মোবাইল নম্বরটিও। হাসপাতালে থাকা তার সহকর্মীরাও অবস্থান জানাতে পারেননি।

Advertisement


ফলে সন্দেহের তীর যার দিকে, সেই চিকিৎসক পরিদর্শকের কাছ থেকে ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়নি।
যদিও পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের উপাধাক্ষ্য ডা. সোহেল মাহমুদের দাবি, অভিযোগকারী যা বলছে তা সত্য নয়। সেদিন এ রকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।

তিনি বলেন, ‘অভিযোগ আসার পর হল সুপারদের আমি ডাকাই। তাদের তিনজনের সাক্ষাৎকার নেই। তারা বলে, এরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি।’

এমন অবস্থায় অভিযোগকারী সেই শিক্ষার্থী এবং তার পরিবারও ঘটনার কোন ইতিবাচক ফল আশা করছেন না। তারা জানান, কেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এমন অভিযোগ জানানো হয়েছে ‘সেই অপরাধে’ যিনি মারধরের নেতৃত্বে ছিলেন তাকেই স্বাস্থ্য অধিদফতর তদন্ত কমিটির প্রধান করেছে।
 

হুমাইরার পরিবারের দাবি, চার সদস্যের সেই কমিটির সভাপতি আফজালুর রহমান সেদিন মারধরের নেতৃত্বে ছিলেন। ছবি: সময় গ্রাফিক

এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে কমিটির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি মেলেনি। সময় সংবাদের সামনে পড়েও এড়িয়ে যান কমিটির চার সদস্য। এরপর আফজালুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি বুধবার আসতে বলেন। বুধবার ফোন করা হলে জানান, তিনি ওইদিন অফিসে আসতে পারবেন না। পরে এ বিষয়ে মিডিয়াতে কথা বলবেন।

Advertisement


সব শুনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলছেন হুমাইরার সঙ্গে কোনো অন্যায় ঘটবে না। তিনি বলেন, আমি খুবই দুঃখিত। একটা মেয়ে কোনোভাবে কারো গাফলতিতে বঞ্চিত হোক, সেটা কোনোভাবেই কাম্য না। আমি দেখবো মেয়েটির সাথে যাতে কোনো অন্যায় না হয়।  


হুমাইরার পরিবারের দাবি, চিকিৎসক পরিদর্শক নাফিসার সঙ্গে হুমাইরার সাক্ষাত করানো হোক এবং বাকি পরীক্ষার্থীদের কাছেও শোনা হোক সেদিন আসলে কী ঘটেছিল।