ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),সিরাজগঞ্জের তাড়াশ প্রতিনিধি,বুধবার, ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ : পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করেই মামা, মামি এবং মামাতো বোনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করে আপন ভাগিনা। সিরাজগঞ্জের তাড়াশের আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলার মূল আসামি রাজীব কুমার ভৌমিককে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র। বুধবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার।
Advertisement
জানা যায়, ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ চন্দ্র সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচার ব্যবসায় যুক্ত হয় ভাগিনা রাজীব ভৌমিক। নিহত বিকাশ সরকার তার ভাগিনা রাজীবকে ব্যবসার পুঁজি হিসেবে ২০ লাখ টাকা দেন। ব্যবসা চলমান থাকা অবস্থায় রাজীব তার মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেয় এবং চলতি বছরে এসে ভাগিনার কাছে তার মামা অতিরিক্ত আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। গত ২২ জানুয়ারি সকালে ভাগিনার বাড়িতে গিয়ে ৭-৮ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য চাপ দেয় এবং তার মাকে বকাবকি করে।
Advertisement
রাজীব টাকা ম্যানেজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মামার বকাবকিতে ক্ষিপ্ত হয়ে মামাসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
এর এক পর্যায়ে ২৭ জানুয়ারি শনিবার সন্ধ্যায় মামাকে ফোন করে পাওনা টাকা দিতে তাড়াশ বারোয়ারি বটতলা মামার বাসায় আসে। এ সময় রাজিবের মামা বাহিরে থাকায় ভাগিনাকে আপ্যায়ন করার জন্য মামি কফি আনতে বাসার নিচে দোকানে গেলে রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড দিয়ে তার মামাতো বোন দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার তুষির মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করে পরে হাসুয়া দিয়ে গলা কেটে মুত্যু নিশ্চিত করে।
Advertisement
ইতোমধ্যে মামি কফি কিনে বাসায় প্রবেশ করলে একইভাবে তার মামি স্বর্ণা সরকারকে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং গলাকেটে হত্যা নিশ্চিত করে। এর কিছুক্ষণ পর মামা বিকাশ সরকার বাড়িতে এলে একইভাবে রড দিয়ে পিটিয়ে এবং গলাকেটে হত্যা করে ঘরে তালা লাগিয়ে মোটরসাইকেলে করে নিজ বাড়িতে চলে যায়। যাবার পথে হত্যায় ব্যবহৃত লোহার রডটি একটি পুকুরে ফেলে যায় আর হাসুয়াটি বাড়িতে নিয়ে যায়।
Advertisement
এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নিহত স্বর্ণা সরকারের ভাই সুকমল সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি করে তাড়াশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা দায়েরের পর নিহত বিকাশের ফোনে অডিও রেকর্ডর সূত্রধরে ভাগিনা রাজীবকে শনাক্ত করে পুলিশ এবং পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় আটক রাজীব। পরে পুলিশ তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে হত্যায় ব্যবহৃত হাসুয়া এবং লোহার রড উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তার রাজীব উল্লাপাড়া উপজেলার তেলিপাড়ার বাসিন্দা। সে নিহত বিকাশের বড় বোন প্রমিলা সরকারের ছেলে। বুধবার বিকেলে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে উপজেলা সদরের বারোয়ারি বটতলা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে একই পরিবারের তিনজনের গলাকাটা মরাদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- বিকাশ সরকার (৪৫), তার স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) ও মেয়ে পারমিতা সরকার তুষি (১৫)। সে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।