ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,বার,৩০ জানুয়ারি ২০২৪ : দলের নতুন চেয়ারম্যান ও মহাসচিব ঘোষণার একদিন পরই আগামী ২ মার্চ জাতীয় সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করে পুরোনো কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটিকে আমলে নিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির রওশনপন্থীরা।
Advertisement
তাদের দাবি, নিয়ম মেনেই দায়িত্ব তারা নিয়েছেন। তাই মুজিবুল হক চুন্নুর বক্তব্য আমলে নিচ্ছেন না তারা।
এদিকে রওশন এরশাদকে অসুস্থ দাবি করে কিছু মানুষ তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তাকে ব্যবহার করছে বলে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। নতুন কমিটি ঘোষণার পরদিনই নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে চিঠি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যান রওশনপন্থীরা। তাদের এই চিঠিতে পুরোনো কমিটি বাদ দিয়ে নতুন কমিটিকে আমলে নিতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছেন তারা।
সোমবার নির্বাচন কমিশনে রওশনপন্থীদের মুখপাত্র সুনীল শুভরায় বলেন, আগে যিনি প্রধানপৃষ্ঠপোষক ছিলেন তাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে এবং কাজী মামুনুর রশিদকে মহাসচিব করা হয়েছে এই বিষয়টা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পদ থেকে। দল থেকে নয়। এতে দল বিভক্ত হবে না।
Advertisement
এর আগে সকালে দলের কর্মপন্থা ঠিক করতে নতুন চেয়ারম্যানের গুলশানের বাসভবনে বৈঠক করেন রওশনপন্থীরা। সেখানে এই অংশের মহাসচিব দলের পদপদবি পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেন।
রওশনপন্থী মহাসচিব কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা যখন অসুস্থ তখন তিনি (জিএম কাদের) ঘুম থেকে তুলে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলেন। এটা কী মারাত্মক লজ্জার বিষয় ছিলো না? এটা অপরাধ নয়?
তিনি বলেন, আগামী ২ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সকালে দলের চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দল ঘোষণা করায় স্পিকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে রওশনপন্থীদের দলে কোনো পদ না থাকায় তাদের কোনো তৎপরতাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে জানান মহাসচিব চুন্নু।
তিনি বলেন, যারা পদ রাখেন না, তারাও কথা বলছেন। এটা ঠিক না। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার মানসিক অবস্থায় নেই অসুস্থ রওশন এরশাদ। তিনি সম্মানীয়। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তাকে ব্যবহার করছে। তারা ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দলের নামে যারা কমিটি করছে, তারা দলের কেউ না।
যেসব নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাদের আর দলে ফেরানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে কাকরাইল কার্যালয়ে ঢোকার যে কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশন শুরুর দু’দিন রোববার নিজেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ঘোষণা করে নতুন নাটকীয়তার জন্ম দেন রওশন এরশাদ।
রোববার সকালে রওশন ঘোষণা দিয়ে চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধারায় অব্যাহতি দেন। নিজেকে চেয়ারম্যান এবং কাজী মামুনুর রশিদকে মহাসচিব ঘোষণা দেন তিনি।
এদিকে গত কয়েকমাস ধরেই রওশনপন্থী নেতাদের বহিষ্কার করে আসছেন জিএম কাদের। সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বহিষ্কার করা হয়েছে ভোটের কয়েকমাস আগেই।
গত ১২ জানুয়ারি অব্যাহতি দেয়া হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় দুই নেতা সাবেক মন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ ও এইচএম এরশাদের সাবেক প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায়কে।
জাতীয় পার্টিতে বহিষ্কার-পাল্টাবহিষ্কার নতুন কিছু নয়। এর আগেও রওশন দলের কাউন্সিল ঘোষণা করেছিলেন।
টানা দুই মেয়াদে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন রওশন এরশাদ। জাতীয় পার্টিতে কর্তৃত্ব নিয়ে রওশন এবং জিএম কাদেরের দ্বন্দ্ব চলছে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে থেকে। দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সেনা শাসক এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে বিবাদ আরও প্রকাশ্যে আসে।
বিএনপির বর্জন করা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে জাতীয় পার্টির দ্যোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন রওশন।
সেই নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে প্রার্থিতা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ। তখন দলে রওশনকে ঘিরে তৈরি হয় আরও একটি বলয়। তারা জানান, ভোট করবেন। এরপর নানা নাটকীয়তা হয় দলে।
Advertisement
থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদের নামে ২০২২ সালের ৩০ আগস্ট দলের কাউন্সিল ডাকা হয়। এর পাল্টা হিসাবে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা রওশনকে বাদ দিয়ে কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে সেপ্টেম্বরের শুরুতে চিঠি দেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে।
সেই বিরোধের মধ্যে দুজনে মিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।
রোববার রওশন দলের যে গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধরার ক্ষমতাবলে জিএম কাদের ও মহাসচিব চুন্নুকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দেন।
জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ওই ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টিতে একজন প্রধান পৃষ্ঠপোষক থাকবেন। তিনি দলে সর্বোচ্চ সম্মান পাবেন। কোনো জনসভায় তিনি দলের চেয়ারম্যানের ওপরে স্থান পাবেন। চেয়ারম্যান প্রয়োজন মনে করলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক তার পরামর্শ নেবেন। প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতা সম্পর্কে সেখানে কিছু বলা হয়নি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ২৬ আসনে সমঝোতা করে জাতীয় পার্টি। তবে ভোটে আসন পায় মাত্র ১১টি। ঢাকা থেকে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের জামানতও জারিয়েছেন।
Advertisement
ভোটের পর থেকেই হেরে যাওয়া প্রার্থী এবং দলের কিছু নেতা জিএম কাদের ও মুজিবুল চুন্নুর প্রকাশ্যে বিরোধিতায় নামেন। তাদের অভিযোগ, সরকারের কাছ থেকে টাকা নিয়েও দলের প্রয়োজনে তা খরচ করেননি চেয়ারম্যান ও মহাসচিব।
ঢাকা উত্তরের ছয় শতাধিক নেতা-কর্মী চেয়ারম্যান ও চুন্নুর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারের অভিযোগ তুলে পদত্যাগও করেন।