ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ : যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় অর্থদাতা হিসেবে গ্রেফতার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
Advertisement
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) তিনদিনের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জামিন চেয়ে আবেদন করেন।
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরী আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে, শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় অর্থদাতা হিসেবে গ্রেফতার এই বিএনপি নেতাকে শনিবার (৬ জানুয়ারি) রাজনৈতিক সহিংসতার মামলায় আদালতে হাজির করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা শাকিলা সুমু চৌধুরীর আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক আশরাফুল আলম নবীর ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত নবীর জামিন আবেদন খারিজ করে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ওই রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছিল, মামলার এজহারভুক্ত আসামি নবী উল্লাহ নবী ৫ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানাধীন যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ধোলাইপাড়গামী রাস্তার সড়কে বিজিবি মার্কেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর বেআইনিভাবে দলবল নিয়ে দেশীয় অস্ত্র, ইট পাটকেল, বাঁশের লাঠি ও ককটেলসহ অবস্থান নেন। তারা সরকারবিরোধী উসকানিমূলক ও অবমাননাকর স্লোগান দিতে থাকেন। সড়কে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে চরম জনভোগান্তি তৈরি হয়।
Advertisement
নবীসহ অন্য আসামিরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে এবং সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে রাস্তার পাশে পার্কিং করা গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির দুটি বাসে অগ্নিসংযোগসহ ককটেল বিস্ফোরণ করে সড়কে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধায়। অগ্নিসংযোগে দুটি বাসের ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়।
সেখানে আরও বলা হয়, আসামি নবী উল্লাহ নবীর নির্দেশ ও হুকুমে পলাতক নেতাকর্মীরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় বিএনপির দুষ্কৃতকারীরা নাম না জানা অনেকের প্ররোচনা, নির্দেশনা, যোগসাজস এবং সহযোগিতায় বেআইনিভাবে সংঘবদ্ধ হয়ে যান চলাচল বন্ধ করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের কাজে বাধাসহ পুলিশকে আক্রমণ এবং ককটেল বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অভিযানকালীন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় কাজী মনসুর নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, যুবদলের কয়েকজন নেতা ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনার পরিকল্পনা করেছিলেন। তারা বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে আগুন লাগানোর জন্য লালবাগ এলাকার কয়েকজন দাগী আসামিকে দায়িত্ব দেন। এই ঘটনায় অর্থ সহায়তা এবং পরিকল্পনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবী।
এর আগে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কমলাপুরে প্রবেশের সময় ট্রেনের একটি কামরায় আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। এতে যাত্রীরা যে যেভাবে পারেন কামরা থেকে বেরিয়ে আসেন। এ সময় এক যুবক আগুনে আটকা পড়েন। তিনি বেশ কিছুক্ষণ আগুনের ভেতরেই দৌড়ঝাঁপ করে বাঁচার চেষ্টা চালান। তবে শেষ পর্যন্ত আর পারেননি।
Advertisement
আগুনের এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া দগ্ধ ৮ জনের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।