ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ : আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে রাজধানীতে ট্রেনে নাশকতার পর, এবার টার্গেট হতে পারে মেট্রোরেল। এমন শঙ্কা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের। এই কারণেই ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। তবে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম ও জনবল না থাকায় সব স্টেশনে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে এমআরটির বিশেষ পুলিশ ইউনিটের জন্য।
Advertisement
উদ্বোধনের প্রথম বছরে এখন পর্যন্ত বড় কোনো গোলযোগ ছাড়াই চলছে মেট্রোরেল। ঢাকার বিশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থার ত্যক্ত-বিরক্ত নগরবাসী প্রথমবারের মতো নতুন এই বাহনে চড়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। ধাপে ধাপে চালু হওয়া ১৪টি স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে কমপক্ষে দেড় লাখ যাত্রী।
তবে আসন্ন ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে গণপরিবহনের নাশকতা আর তেজগাঁওয়ে ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে চার যাত্রীর দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ।
এ সময় কয়েকজন যাত্রী শঙ্কার কথা জানিয়েছেন চ্যানেল 24 কে। তারা জানিয়েছেন, বাসে-ট্রেনে যেভাবে নাশকতা, হামলা হচ্ছে তা মেট্রোরেলেও পড়তে পারে। এ অবস্থায় মেট্রোরেল ও যাত্রীর নিরাপত্তায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন দিয়ে চারজনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার পরদিন থেকে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে মেট্রো স্টেশনগুলোতে। প্রতিটি স্টেশনের প্রবেশ মুখে সতর্ক পাহাড়ায় রয়েছেন এমআরটি পুলিশ। কেউ ব্যাগ নিয়ে ঢুকলে পড়তে হচ্ছে তল্লাশির মুখে। ডিএমপির আশঙ্কা চলমান নাশকতায় টার্গেট হতে পারে মেট্রোরেল।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ফারুক হোসেন বলেন, ‘ঢাকা নগরবাসীর কাছে মেট্রোরেল এখন একটি স্বস্ত্বির জায়গা। তবে এখন মেট্রোরেলে নাশকতা হতে পারে এমন শঙ্কার কথা মাথায় রেখেই পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সেখানে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করেছি।’
Advertisement
চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় মেট্রোরেলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বৃহস্পতিবার থেকে এমআরটি পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির ১৩২ জন সদস্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন।
আনসারের পাশাপাশি মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় কাজ করছে নবগঠিত এমআরটি পুলিশ। প্রথমদিকে প্রতিটি স্টেশনের জন্য তাদের চার সদস্য থাকলেও, এখন তা বাড়িয়ে ১২ জন করা হয়েছে।
মেট্রোরেলের নিরাপত্তায় চলতি বছরের অক্টোবরে এমআরটি পুলিশ কাজ শুরু করে ২৩১ সদস্যের জনবল নিয়ে। আড়াই মাসের ব্যবধানে তা বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৮ সদস্যে। তবে নতুন ইউনিট এমআরটি পুলিশ মনে করে ১৬টি মেট্রোস্টেশনে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই সংখ্যা যথেষ্ট হবে না।
এ বিষয়ে এমআরটি পুলিশ ইউনিটের পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, অটোমেটেড লাগেজ স্ক্যানার, আর্চওয়ে স্থাপন এবং রেলট্র্যাকের দুই পাশে যেসব স্থানে ভবনগুলো থেকে হামলার শঙ্কা রয়েছে সেসব জায়গায় নেট ফ্যান্সিং এর ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি, আমাদের জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব যদি সরকার যথাযথভাবে বিবেচনা করে তা হলে মেট্রোরেলের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভবপর হবে।
মেট্রোরেলে সার্বিক নিরাপত্তা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষও। বাহিনীটি মনে করে মেট্রোস্টেশনগুলোতে কোনো অগ্নিকাণ্ড বা নাশকতা হলে কীভাবে তা মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে দরকার সমন্বিত প্রস্তুতি।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মেট্রোরেলে কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে কীভাবে তা নির্বাপণ করা যেতে পারে সে বিষয়ে আসলে আমরা ততটা ওকিবহাল নই। অত্যাধুনিক স্থাপনা মেট্রোরেল, পাতাল রেল এগুলোর বিষয়ে আমরা পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত নই। তাই এসব সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে আমাদের সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
Advertisement
চলতি মাসেই খুলে যাচ্ছে মেট্রোরেলের সব স্টেশন। ফলে যাত্রীর চাপ বাড়ার সঙ্গে বাড়বে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জও। তাই, নিরাপত্তা জোরদার তো বটেই, যাত্রীদের চাওয়া রাজনৈতিক স্বার্থের লড়াইটা যেনো আর গণপরিবহনে টেনে আনা না হয়।