ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩ : দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মগবাজারে গ্যাস বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যুর ঘটনায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পুলিশ।
Advertisement
তদন্ত সংস্থা, সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন ইউনিট ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে তদন্ত শেষ করে বলেছে, তিতাসের পরিত্যাক্ত পাইপ লাইনের ছিদ্র থেকেই এই বিস্ফোরণ।
কার অবহেলায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষের কাছে থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারিদের তালিকা ও তথ্য চেয়েও কোনো সাড়া পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। এ কারণেই আটকে আছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কাজ। গুলিস্থান ও সাইন্সল্যাবেও একই ধরনের বিস্ফোরণে মারা যায় ৪৪ জন।
তবে তিতাস কর্তপক্ষ বলছে ওই ঘটনায় তিতাসের কোনো দায় নেই। তাদের দাবি, সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে এই দাবির পেক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
২০২১ সালের ২০ জুন মগবাজারে একটি ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিরাপত্তা কর্মী ও নিচতলায় থাকা শরমা হাউজে তিনজন, বেঙ্গল মিটের দুইজন ও রাস্তায় বাসে থাকা দুইযাত্রীসহ সাতজন মারা যায়।
ঘটনার তদন্তে পুলিশের সন্ত্রাসবাদ ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন ইউনিট প্রথমবারের মতো বিদেশি বেশ কয়েকটি সংস্থার সহযোগিতায় বিস্ফোরণের ধরন, তথ্য উপাত্ত ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী একটি ত্রিমাত্রিক সিমুলেশন তৈরি করে।
সংস্থাটির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা পূর্ণাঙ্গ বৈজ্ঞানিক তদন্ত করার চেষ্টা করেছি। এজন্য আমরা ত্রিমাত্রিক সিমুলেশন তৈরি করেছি, বিস্ফোরণ নিয়ে কাজ করে এ ধরনের বিদেশি ৭-৮টি সংস্থার সাথে কথা বলেছি, তাদের কাছ থেকে ধারণা নিয়েছি, কেন এই বিস্ফোরন হয়েছে আমরা এখানে সেই সত্য উদঘাটন করতে চেয়েছি। আমার জানা মতে কোনো বিস্ফোরনের ঘটনায় বাংলাদেশে এর আগে এভাবে কখনো তদন্ত হয়নি।
তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে বেঙ্গল মিটের চিলার রুম থেকেই এই দুর্ঘটনা। চিলার রুমের মাটির নিচে গ্যাস লাইনে ছিদ্রও খুঁজে পান তদন্তকারীরা। জমে থাকা সেই গ্যাসই ছিলো বিস্ফোরণের কারণ।
Advertisement
কিন্তু যে লাইন থেকে বিস্ফোরণ তিতাসের কাগজে কলমে সেটি পরিত্যাক্ত। সেই পরিত্যাক্ত লাইন থেকেই বের হতো গ্যাস। এটি কার দেখার কথা, সেই দায় নিরূপনের জন্য তিতাসের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাননি তদন্ত কর্মকর্তা। আর এ কারনেই দাখিল করা যাচ্ছে না অভিযোগপত্র।
রহমত উল্লাহ চৌধুরী আরও জানান, তারা তদন্তের সময় গ্যাস লাইনটি খুঁজে পান এবং তখনও দেখতে পান সেখান থেকে গ্যাস বের হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা তদন্তের নিশ্চিত এটি তিতাসের অবহেলার কারনে হয়েছে। সেজন্য তারা এই লাইন দেখার দায়িত্ব কার, এই পরিত্যাক্ত লাইন কেন পুরোপুরি বন্ধ হয়নি- সেসব জানার জন্য তিতাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে চিঠি দিয়েছেন কিন্তু তারা কোন সহযোগিতা করছে না।
এ বিষয়ে তিতাসের নিজস্ব তদন্ত কমিটির সদস্য মহাব্যবস্থাপক সত্যজিৎ ঘোষ দাবি করেন, তাদের কাছে মনে হচ্ছে, এটি এলপি সিলিন্ডার গ্যাসের লিকেজের কারণে হয়েছে। তিনি বলেন, কারণ সিলিন্ডার সেখানে ছিল সেই বরাবর ছাদ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
একাত্তর তিনি বলেন, এটি তাদের ধারণা। এ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক কোনো তথ্য-প্রমান এই প্রতিবেদকরেক দেখাতে পারেননি।
তবে তদন্ত সংস্থার তদারক কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ঘটনাস্থলে যে সিলিন্ডার পাওয়া গিয়েছিল তা একেবারে অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তারা পরীক্ষা করেও দেখেছেন সেই সিলিন্ডার থেকে কোন গ্যাস বের হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মগবাজারের সেদিন যে বিস্ফোরণ হয়েছিলো তার তীব্রতা এতোটা বেশি ছিল যে, সিলিন্ডারের এলপি গ্যাসের প্রকৃতি অনুযায়ী তাতে এতো বড় বিস্ফোরণ ঘটার কোনো সম্ভবনা নেই।
Advertisement
গুলিস্তান ও সাইন্সল্যাবে বিস্ফোরণেও তিতাসের দায় পেয়েছে পুলিশ। কিন্তু কোনো তদন্তেই দায়ীদের শনাক্তে তিতাস কতৃপক্ষ পুলিশকে কোনো সহযোগিতা করছে না। এই তিনটি ঘটনায় মোট ৪৪ জন মারা যান।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ভারতের একটি হত্যার ঘটনা নিয়ে সিনেমা হয়েছিল, নো অন কিলড জেসিকা, অর্থাৎ জেসিকাকে কেউ হত্যা করেনি। কারন তদন্তকারীরা তাদের তদন্তে প্রভাবশালী হত্যাকারীকে ইচ্ছা করেই খুঁজে বের করেনি। সেই সিনেমার মতোই বাংলাদেশের গ্যাস বিস্ফোরণের কোনো ঘটনারই দায় কারোর নয়। কারণ সব ঘটনারই তদন্ত হয় দায় সারাভাবে এবং একটি পর্যায়ে এসে দায়ীদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না বা বের করা হয় না।