ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩ : পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তারা হতে পারতেন আদর্শ শিক্ষক। পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুদের শেখাতেন নীতি-নৈতিকতার পাঠ। অথচ তাদেরই কেউ কেউ জড়িয়েছেন চরম অনৈতিকতায়। জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে তারা নকল করে পরীক্ষায় পাসের চেষ্টা চালিয়েছেন। জনপ্রতি ১০-১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হওয়ার ছক কষেছিলেন তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নপত্র চলে যায় কেন্দ্রের বাইরে। এর পর একটি চক্র দ্রুত প্রশ্নপত্রের সমাধান করে কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনায় যুক্তদের প্রচেষ্টায় তাদের সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
Advertisement
গতকাল শুক্রবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতিতে জড়িত চক্রের ১৩ সদস্য, পরীক্ষার্থীসহ ১২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধায় র্যাবের অভিযানে ধরা পড়েছেন চক্রের ৩৭ জন। পাঁচজন কেন্দ্রের বাইরে থেকে সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। তাদের মধ্যে রেলওয়ের কর্মী, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষক রয়েছেন। আর রংপুরে ১১ পরীক্ষার্থীসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের তিনজন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও পাঁচজন ছাত্রলীগ নেতা। এ ছাড়া বহিষ্কার করা হয়েছে ৮৩ জনকে। গতকাল প্রথম ধাপে রংপুর, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ১৮টি জেলায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সমকালকে বলেন, একটি অসাধু চক্র মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অনৈতিক উপায়ে পরীক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল।
এর ভিত্তিতে চক্রটিকে শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছিল র্যাব। এক পর্যায়ে গতকাল পরীক্ষা চলাকালে অভিনব উপায়ে মাস্টারকার্ডের মধ্যে ইলেকট্রনিক ডিভাইস যুক্ত করে নকল প্রক্রিয়ায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৪টি ইলেকট্রনিক ডিভাইসযুক্ত মাস্টারকার্ড, ২০টি ব্লুটুথ ডিভাইস, ১৭টি মোবাইল ফোন, ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প জব্দ করে র্যাব।
গাইবান্ধায় র্যাবে কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে এসেছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের ইলেকট্রনিক ডিভাইসে প্রশ্নপত্র আসার তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে। কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে চক্রটি কাজ করেছে। কেন্দ্রে নিয়োজিত শিক্ষক, কর্মচারী ও পরীক্ষার্থীদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র বাইরে আসে। কেন্দ্রের বাইরে একটি বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে, যারা দ্রুত প্রশ্নের উত্তরের অনুলিপি ডিভাইসের মাধ্যমে কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
র্যাব সূত্র জানায়, প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরুর পর, নাকি আগেই ফাঁস হচ্ছে– তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, হলে প্রশ্নপত্র বিতরণের সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষার্থীদের কেউ ডিভাইসের মাধ্যমে তা চক্রের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছে। পরে ফাঁস হওয়া সেই প্রশ্ন জালিয়াত চক্রের ‘এক্সপার্ট গ্রুপ’ স্বল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করে আবার চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। টাকার বিনিময়ে এই অনৈতিক প্রক্রিয়ায় কাদের পাস করানো হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। এ জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেওয়া হয়। গাইবান্ধায় গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, তারা চক্রের আরেক ধাপের সদস্যদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্রটি পেয়েছে।
জালিয়াত চক্রের কৌশল
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় চক্রটি ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে। দ্রুত বাইরে প্রশ্ন পাঠাতে চক্রকে পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনো কর্মচারী বা শিক্ষক সহায়তা করতেন। আবার কোনো পরীক্ষার্থীও প্রশ্ন পাঠিয়েছেন। পরে বাইরে থেকে ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর পাঠানো হতো। ব্লুটুথের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর কানের সঙ্গে যুক্ত থাকত সেই ডিভাইস। আর সেটির সঙ্গে বাইরের চক্রও যুক্ত থাকত। তারা প্রশ্ন পেয়ে উত্তর তৈরির পর ডিভাইসে কল দিয়ে পড়ে শোনাত। পরীক্ষার্থীর ডিভাইসে কল স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিসিভ হতো। হলে থাকা পরীক্ষার্থীরা তা শুনে উত্তর লিখত। বাইরে যারা থাকেন তাদের কাজ হলো, প্রশ্ন সমাধানকারীদের কাছে পৌঁছানো, সমাধান করে পরীক্ষার্থীদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষা শুরুর আগে বেশ কিছু কাজ ঠিক করে রাখা হতো। এগুলোর মধ্যে রয়েছে– সমাধানকারী খুঁজে বের করা, ফটোকপির জন্য দোকান ঠিক করা, যেখানে বসে প্রশ্নপত্র সমাধান করা হবে, তেমন একটি নিরাপদ স্থান ঠিক করা।
শুধু গাইবান্ধায় গ্রেপ্তার ৩৭ জন
র্যাব-১৩ গাইবান্ধা ক্যাম্পের কর্মকর্তা (গণমাধ্যম) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ গতকাল বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জালিয়াত চক্রের ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সকালে গাইবান্ধার বিভিন্ন কেন্দ্রে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালে একটি চক্র ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করছিল। বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন কেন্দ্রে অভিযান চালানো হয়। এ সময় গ্রেপ্তারদের মধ্যে জালিয়াত চক্রের পাঁচ সদস্য হলেন– বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নজরুল ইসলাম, রেলওয়ের কর্মী মারুফ হাসান, মুন্না মিয়া, সোহাগ রহমান ও সোহেল রানা। তাদের মধ্যে নজরুল পরীক্ষার্থী সংগ্রহ করতেন এবং সোহেল ডিভাইস সরবরাহ করতেন। আর মারুফ ও মুন্না হলের বাইরে থেকে প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করতেন।
র্যাব-১৩ এর এ কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জালিয়াত চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।
রংপুরে শিক্ষক, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১৯
রংপুরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতিতে জড়িত চক্রের ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে রংপুর ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। তিনি জানান, পরীক্ষায় বিটু এক্স ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্নপত্রের উত্তর সরবরাহের চুক্তি করা হয়। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার সময় বৃহস্পতিবার রাত ও গতকাল সকালে রংপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন তিনজন শিক্ষক। তারা হলেন– রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহমুদুল হোসেন, লায়ন্স কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মো. নুরুন্নবী ও কাউনিয়ার টেপামধুপুর মাদ্রাসার শিক্ষক মো. রেজওয়ান। এ ছাড়া চক্রের সদস্যদের মধ্যে আছেন পাঁচজন ছাত্রলীগ নেতা। তারা হলেন– রংপুর মহানগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক আল মাহাদী খান হৃদয়, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভ সাহা, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর আলম, রংপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোতাহার হোসেন দুখু ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা সেতু। আর গ্রেপ্তার ১১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে আটজন নারী বলে জানা গেছে। তাদের পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্র থেকে ডিভাইসসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১টি ডিভাইস, ৮০টি মোবাইল ফোন ও প্রবেশপত্র জব্দ করা হয়।
কমিশনার বলেন, একটি অসাধু চক্র ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির চেষ্টা চালায়। মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ পরীক্ষার আগের রাতে বৃহস্পতিবার এবং গতকাল পরীক্ষা শুরুর আগেই কেন্দ্র থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। এ কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে পারেনি চক্রটি। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ সময় রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিবি) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান, ডিসি (ক্রাইম) আবু মারুফ হোসেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগের উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর-রংপুর বিভাগের উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরীক্ষা বাতিল হবে কিনা– এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয়ের। রংপুর বিভাগীয় কমিশনারও বিষয়টির তত্ত্বাবধান করছেন।
দিনাজপুরে ৯ নারীসহ গ্রেপ্তার ১৮
পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে দিনাজপুরে ৯ নারীসহ ১৮ পরীক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলা সদরের ৮টি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানার ওসি ফরিদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তাররা হলেন– বিরল উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মো. কামরুজ্জামান, একই উপজেলার রানীপুর গ্রামের রাহেনা খাতুন, বীরগঞ্জ উপজেলার এলেঙ্গা গ্রামের শেফালী রায়, একই উপজেলার পশ্চিম কালাপুকুর গ্রামের মো. মনিরুজ্জামান, কগিরপাড়ার জামিল বাদশা, বনগাঁও গ্রামের মো. রাকিব, দিনাজপুর সদর উপজেলার মুরাদপর গ্রামের মুসলিমা খাতুন, একই উপজেলার দাইনুর গ্রামের শরিফুল আলম, ঘুঘুডাঙ্গা গ্রামের উম্মে সালমা, খানপুর গ্রামের নাসরিন জাহান, চিরিরবন্দর উপজেলার দক্ষিণ আলোকদিঘি গ্রামের কবিতা রানী রায়, সবুজ চন্দ্র রায়, হাকিমপুর উপজেলার মাধবপাড়ার জাকিয়া ফেরদৌস, বিরামপুর উপজেলার দক্ষিণ দায়োরপুর গ্রামের মহিদুল ইসলাম, নবাবগঞ্জ উপজেলার মতিহারা গ্রামের তানিয়া মোশতাবী, বোচাগঞ্জ উপজেলার শহীদপাড়ার সায়েম মোল্লা তন্ময়, ফরিদপুর জেলার নগরবান্দা থানার দফা গ্রামের ঊর্মিলা আক্তার ও ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বকুয়া গ্রামের সুজন আলী।
Advertisement
ওসি জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের ৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা ১৮ জনকে ব্লুটুথ ও ব্যাটারি জাতীয় ডিভাইসসহ আটক করেন। পরে তাদের পুলিশে সোপর্দ করেন। তাদের বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ পরীক্ষার্থী গ্রেপ্তার
ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করায় চারজন এবং ওএমআর শিট নিয়ে প্রবেশ করায় তিনজনসহ মোট সাত পরীক্ষার্থীকে আটক করে সদর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ডিভাইসসহ আটকরা হলেন– রানীশংকৈল উপজেলার আলশিয়া গ্রামের সোহানুর রহমান, একই উপজেলার বাজেবকশা গ্রামের টংকনাথ বর্মণ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলোকছিপি গ্রামের আনোয়ার খালিদ ও পীরগঞ্জ উপজেলার পটুয়াপাড়া গ্রামের ওমর ফারুক। ওএমআর শিটসহ আটকরা হলেন– পীরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের মোছা. আর্জিনা, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিণমারী গ্রামের হাসনা হেনা ও সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের রোজিনা খাতুন। সদর থানার ওসি ফিরোজ কবীর জানান, তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
নাগেশ্বরীতে ২ জন বহিষ্কার
নাগেশ্বরীতে নকলের দায়ে দুই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ফরমান আলী কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার এবং মেহেদী হাসান ফুলবাড়ী উপজেলার পূর্ব রামরাম সেন এলাকার। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ জানান, তারা বিশেষ কায়দায় মোবাইল ফোনের সঙ্গে যুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নের উত্তর লিখছিলেন।
হবিগঞ্জে পরীক্ষার্থী বহিষ্কার
হবিগঞ্জে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে এক নারী পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, অভিনব উপায়ে তৈরি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের কারণে শহরের টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের ওই পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।
পঞ্চগড়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার, গ্রেপ্তার ৭
পঞ্চগড়ে পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার ও বদলি হিসেবে (প্রক্সি) পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অভিযোগে তিন নারী পরীক্ষার্থীসহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল সদরের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তারা হলেন– বোদা পৌরসভার নগরকুমারী এলাকার রাবেয়া সুলতানা, একই উপজেলার ময়দানদিঘি ইউনিয়নের তাসেরপাড়া এলাকার মাসুমা বেগম মনিরা ও লক্ষ্মীপাড়া এলাকার ভাস্কর রায়, সদর উপজেলার মাগুড়া ইউনিয়নের খালপাড়া এলাকার নুরুজ্জামান, একই উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের নুনিয়াপাড়া এলাকার উম্মে সুবাহ সাদিয়া, দেবীগঞ্জ উপজেলার টেপ্রীগঞ্জ ইউনিয়নের আদর্শপাড়া এলাকার কবির হোসেন এবং আটোয়ারী উপজেলার তোড়িয়া ইউনিয়নের নিতুপাড়া এলাকার মুস্তাফিজুর রহমান। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষার্থীদের সতর্ক করার পরও কয়েকজন পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করছিলেন। আমরা পরীক্ষার শুরুতেই তাদের আটক করতে সক্ষম হই।
ভোলায় বহিষ্কার ৬১, গ্রেপ্তার ১২
ভোলায় নিয়োগ পরীক্ষায় ৩০ কেন্দ্রে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে ৬১ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, পরীক্ষার সময় নানা ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করায় ২২ জনকে পরীক্ষার হল থেকে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
সরকারি শেখ ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ন কবির জানান, ভোলা সরকারি কলেজে ১০ জন, সরকারি ফজিলাতুন নেছা মহিলা কলেজে ৮ জন, বাংলাবাজার ফাতেমা খানম কলেজ কেন্দ্র থেকে একজন, শহীদ জিয়া আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে একজন, চরনোয়াবাদ মুসলিম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজনসহ মোট ৬১ জনকে বহিষ্কার করা হয়।
লালমনিরহাটে ১৩ পরীক্ষার্থী আটক
লালমনিরহাটে পরীক্ষায় ডিভাইস ব্যবহারের অভিযোগে ১৩ পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন– হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম বেজ গ্রামের আশিক সিদ্দিকী, একই উপজেলার জাওরানী গ্রামের পরঞ্জন রায়, নাজমুন নাহার, পূর্ব সারডুবি গ্রামের রবিউল ইসলাম, পারশেখ সুন্দর গ্রামের সাহেরা খাতুন, উত্তর জাওরানি গ্রামের লাভলী খাতুন, পাটগ্রাম উপজেলার রহিমপাড়া এলাকার আফরিন আক্তার, কালীগঞ্জ উপজেলার বৈরাতি গ্রামের রাফিয়া সুলতানা, রুদ্ধেশ্বর গ্রামের খাদিজা খাতুন, আদিতমারী উপজেলার সরলখা গ্রামের তৃপ্তি রানী, নামুড়ি গ্রামের সোহাগী বেগম, গোবর্ধন গ্রামের মাহবুবা রায়হানা ও সদর উপজেলার আদর্শপাড়ার তুলি রানী রায়।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, অসদুপায় অবলম্বন করায় ১৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে ১৩ জনকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করার অভিযোগে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
কুড়িগ্রামে ৩ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার, আটক ৯
কুড়িগ্রামে পরীক্ষায় প্রক্সি ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতির অভিযোগে ৯ পরীক্ষার্থীকে আটক ও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলার রাজারহাট ফাজিল দাখিল মাদ্রাসায় ২০৩ নম্বর কক্ষে আবু বক্কর নামে এক সহকারী শিক্ষকের সহায়তায় মোবাইল ফোন সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজারহাট ফাজিল দাখিল মাদ্রাসার এক পরীক্ষার্থী বলেন, আমার পেছনের সারিতে একজন শিক্ষক এসে এক পরীক্ষার্থীকে মোবাইল ফোন সরবরাহ করেন। ওই পরীক্ষার্থীকে ঘিরে আশপাশের বাকি পরীক্ষার্থীরাও নকল করে পরীক্ষা দেন।
Advertisement
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রংপুর অফিসের স্বপন চৌধুরী, গাইবান্ধা প্রতিনিধি এনামুল হক ও দিনাজপুর প্রতিনিধি বিপুল সরকার সানিসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা)