ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ : র্যাব জানিয়েছে, বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন রুবিনা, ঝগড়া হলে এনামুল মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে খুন করেন।
ভালোবেসে নিজের হাতে মেহেদি দিয়ে প্রেমিক এনামুল সানার নাম লিখেছিলেন নারসিংদীর পোশাক কর্মী রুবিনা খাতুন। বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যার পর সেই নামের ওপর এক টিউব মেহেদি দিয়ে লাশ নদীতে ফেলে দেন এনামুল।
Advertisement
ঢাকার আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকার বংশাই নদী থেকে গত শনিবার রুবিনার লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে নেমে সোমবার রাতে আশুলিয়া থেকে এনামুল সানা এবং তার সহযোগী সোহাগ রানাকে গ্রেপ্তারের পর এ হত্যা রহস্য উদঘাটনের কথা জানায় র্যাব।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ানবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এনামুলও এক সময় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। এখন ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালান। তার বাড়ি খুলনার পাইকগাছায়, কাজের সূত্রে থাকেন আশুলিয়ায়।
এনামুল বিবাহিত, তার সন্তানও আছে। মারামারি, শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা থাকার তথ্য পেয়েছে র্যাব।
এনামুলের দুঃসম্পর্কের আত্মীয় সোহাগ বাসের হেলপার। এর আগে তিনি মাদক মামলায় এক মাস জেলও খেটেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, গত ৯ ডিসেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় বংশাই নদীতে এক নারীর মরদেহ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন নৌ পুলিশ ও র্যাবকে জানায়।
পরে র্যাব-৪ এর গোয়েন্দা টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ওই নারীর নাম-পরিচয় শনাক্ত করে।
২৪ বছর বয়সী রুবিনা খাতুন নরসিংদীর পলাশ এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর থানার রঘুনাথপুর দোলাপাড়া গ্রামে। বাবার নাম আব্দুল ওয়ারেছ।
Advertisement
লাশ উদ্ধারের পরদিন গত ১০ ডিসেম্বর রুবিনার ভাই আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জেনেছে, মাস ছয়েক আগে এনামুলের সঙ্গে রুবিনার সোশাল মিডিয়ায় পরিচয় হয়। এরপর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। এনামুল প্রায়ই রুবিনাকে বেশি বেতনে চাকরির আশ্বাস দিয়ে আশুলিয়ায় আসতে বলতেন।
“গত ৩ ডিসেম্বর এনামুলের স্ত্রী-সন্তান পাইকগাছায় চলে গেলে সে রুবিনাকে আশুলিয়ায় তার বাসায় নিয়ে আসে। ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত রুবিনা ওই বাসায় ছিল। সে সময় রুবিনা বারবার এনামুলকে বিয়ের কথা বললে সে রাজি হয়নি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিবাদও হয়।”
র্যাবের মুখপাত্র বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে এনামুল বলেছেন, ৮ ডিসেম্বর রুবিনা ফের বিয়ের কথা তুললে দুজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। এক পর্যায়ে এনামুল ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করেন।”
র্যাব-৪ এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুর রহমান জানান, রুবিনার হাতে মেহেদি দিয়ে এনামুলের নাম লেখা ছিল।
“ভালোবেসে প্রিয় মানুষের নামটি লিখেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে এনামুল রুবিনার হাতে লেখা নিজের নামের ওপর এক টিউব ইনস্ট্যান্ট মেহেদি মাখিয়ে পুরো জায়গাটা কালো করে ফেলেন।”
সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার মঈন বলেন, “রুবিনাকে হত্যার পর এনামুল পরিস্থিতি সামাল দিতে সোহাগকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানিয়ে তাকে বাসায় ডেকে আনে। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী দুজনে মিলে রাত ৩টার দিকে রুবিনার মৃতদেহ চাদরে পেঁচিয়ে এনামুলের মোটরসাইকেলে করে ৫ কিলোমিটার দূরে বংশাই নদীর উপর রাঙ্গামাটি ব্রিজে নিয়ে যান। পরে ব্রিজ থেকে রুবিনার লাশ নদীতে ফেলে দেন তারা।”
Advertisement
রুবিনার ভাইয়ের করা মামলার তদন্তে নেমেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কমান্ডার মঈন।
র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার রুবিনার প্রেমিক এনামুল সানা (বামে) ও তার সহযোগী সোহাগ রানা