ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ : চার বছরের নূরজাহান আর সাত বছর বয়সী আকলিমা। দুই বোন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধনে যোগ দেয়। তাদের সাথে ছিলো আরও কয়েকজন শিশু। নূরজাহান ও আকলিমার মা হাফসা আক্তার ঢাকার আদালত চত্বরে বোমাবাজির ঘটনায় কারাগারে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই দুই শিশুর বাবা হামিদ ভূঁইয়া আদালতে বোমাবাজির দায়ে পালিয়ে আছেন।
Advertisement
দুই শিশু নূরজাহান ও আকলিমা গত ২৯ নভেম্বর যে মানবন্ধনে যোগ দিয়েছিল তার আয়োজন করেছিল ‘রাজবন্দীদের স্বজন’ নামে তথাকথিত সংগঠন। যদিও মানববন্ধন প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। আর বক্তব্য রাখেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি নুরুল হক আরও অনেকে।
আদালতে নাশকতা
গত ২০ নভেম্বর বিকেল ৩টা ৫২ মিনিটে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। উদ্দেশ্য ছিল আইনজীবী ও আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীদের জীবন বিপন্ন করা। ককটেল বিস্ফোরণের শব্দে লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিচার কার্যক্রমও বিঘ্নিত হয়। রাতেই রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ কামরুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে এই মামলাটি দায়ের করেন।
এরপর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, বোরকা পরিহিত এক নারী ও এক পুরুষ মহানগর দায়রা জজ আদালতের চারতলা থেকে ককটেল সদৃশ বস্তু নিচে ফেলেন। এ সময় তাদের সঙ্গে একটি ছোট শিশুও ছিল। এই শিশুর নাম নূরজাহান আক্তার নূরী (৪), যাকে বিএনপির মানববন্ধনে হাজির করা হয়েছে।
কে এই আফসা আক্তার
ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা ৫০ থেকে ৬০টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে পুলিশ। এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামি হাফসা আক্তার পুতুলকে শনাক্ত করা হয়। পরে ২৬ নভেম্বর শ্যামপুর থানার গ্লাস ফ্যাক্টরির গলি এলাকায় অভিযান চালিয়ে হাফসা আক্তার পুতুলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ককটেল হামলায় ব্যবহৃত একটি মোটরবাইক ও ঘটনার দিন ব্যবহৃত একটি ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
হাফসা আক্তারের স্বামী হামিদ ভূঁইয়াও এই নাশকতার সাথে যুক্ত। যদিও ঘটনার পর থেকে পলাতক তিনি। হামিদ ভূঁইয়া ওয়ারী থানা যুবদলের সদস্য ও বিভিন্ন নাশকতার মামলার আসামি। হাফসা আক্তার পুতুল মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার ফুলতলা গ্রামের মোসলেম মাতুব্বরের মেয়ে। স্বামী-স্ত্রী ঢাকার শ্যামপুর থানার সততা হাউজিং এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
গ্রেপ্তারের পর হাফসাকে তিন দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার পুলিশ রিমান্ড শেষে হাফসা আক্তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এ সময় তিনি লিখিতভাবে জানান, গত ২০ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় তার দেবর রহমানকে কোর্টে আনবে বলে জানার পর সে ও তার স্বামী আব্দুল হামিদ ভূঁইয়া ও তাদের ছোট মেয়ে নূরজাহান আক্তার নূরীসহ মোটরসাইকেল নিয়ে কোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। মহানগর দায়রা জজ আদালতের ১ নং গেইট দিয়ে তারা দায়রা জজ আদালতে প্রবেশ করে।
প্রথমে মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় কিছুক্ষণ অবস্থান করে ৪র্থ তলায় উঠে। এক পর্যায়ে আব্দুল হামিদ ও তার স্ত্রী হাফসা আক্তার ভ্যানিটি ব্যাগে থাকা ককটেল বের করে নিচের দিকে ছুড়ে মারেন। এরপর তারা পায়ে হেঁটে ঢাকা বার ভবন হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে গিয়ে তাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাসায় পালিয়ে যায়।
Advertisement
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, বিচারিক আদালতে নাশকতামূলক ঘটানোর চেষ্টা চালিয়েছিল তারা। এটি আইনগতভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এই ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ সাহসিকতার সাথে তাদেরকে শনাক্ত করে এবং হাফসা আক্তারকে গ্রেফতার করেছে। হাফসার স্বামী যুবদল সদস্য আব্দুল হামিদ ভূঁইয়াকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পারলে নেপথ্য সক্রান্তকারীদের গ্রেফতার করা যাবে।
আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, অভিযুক্ত হামিদ ও হাফসা সরাসরি নাশকতার ঘটনায় জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজে তাদের দেখা গেছে। হাফসা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। বিএনপির নেতাদের নির্দেশে নাশকতা করতে গিয়ে তাদের এই অবস্থা।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, অভিযুক্ত আসামিদের কোমলমতি দুই শিশুকেও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে বিএনপি। শিশুদের পুঁজি করে তাদেরকে মিডিয়ার সামনে হাজির করে স্বার্থ হাসিলের জন্য মিথ্যা গল্প সাজিয়ে একটি প্রহসন রচনা করছে। এভাবে কোমলমতি শিশুকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা জঘন্যতম কাজ। এই অপরাধের জন্য বিএনপি নেতাদের শান্তি হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।