সাজায় বন্ধ বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রার্থী হওয়ার পথ (ভিডিও)

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),বিশেষ প্রতিনিধি,সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩ : সংসদ নির্বাচনের তফসিলে সাড়া না দিয়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সম্প্রতি বিভিন্ন মামলায় দলটির প্রথম সারির নেতৃবৃন্দসহ একে একে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী দণ্ডিত হওয়ায় বেশিরভাগই প্রার্থী হওয়ার জন্য আইনগতভাবে অযোগ্য। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়ার চেয়ে সরকার পতন আন্দোলনকে গুরুত্ব দেওয়ার কথাই ভাবছেন দলটির নেতারা।

Advertisement

দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যেই আদালতের রায়ে দণ্ডিত।

দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির মনোনয়ন পেতে পারে এমন সম্ভাব্য প্রার্থীসহ আন্দোলনে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই ক্ষমতাসীন দলের টার্গেট। বেছে বেছে তাদের কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসেই আলাদা ২৭ মামলায় সাজা হয়েছে ৪৮২ নেতাকর্মীর। গত বৃহস্পতিবার একদিনেই পাঁচ মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে ১৯৯ জন নেতাকর্মীকে। রায়ে সর্বনিম্ন দেড় বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বিএনপির সম্ভাব্য ১৫৮ জন প্রার্থীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী কেউ কোনো মামলায় কমপক্ষে দুই বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হলে এবং মুক্তির পাঁচ বছর পার না হলে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হন।

দলের আইনজীবীরা বলছেন, নির্বাচনের আগে দলটির যোগ্য প্রার্থীদের অযোগ্য ঘোষণা করতে এবং চলমান আন্দোলন ব্যাহত করতে টার্গেট করে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছে সরকার।

এদিকে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি গ্রেপ্তার এখনো চলছে। যে কারণে গ্রেপ্তার আতঙ্ক কাটছে না নেতাকর্মীদের। অনেকে গ্রামে থাকতে না পেরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এ পরিস্থিতিতে শীর্ষ নেতাদের অনেকেই আত্মগোপনে থেকে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তাবায়নে জোর দিচ্ছেন। বেশ কয়েকজন রাজপথে সক্রিয়ও হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি নেতারা ভেবেছিলেন তফসিলের পর নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তারের মনোভাব থেকে সরে আসবে সরকার। কিন্তু তফসিলের আগে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এখনো তাই হচ্ছে। এ থেকেই আরও স্পষ্ট ইসির আচরণও সরকারের মতোই। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ করছে। একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে, বলছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকার যেকোনো কিছুর বিনিময়ে একতরফা নির্বাচন করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এর জন্য প্রয়োজনে বিরোধীদলশূন্যসহ শান্তিকামী জনগণকে গুম-হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করছে না। আজকে সরকারের উচ্ছিষ্টভোগীদের নিয়ে, রাষ্ট্রের টাকা দিয়ে গরু বেচাকেনার মতো অনেককে ক্রয় করার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু সফল হয়নি। এক্ষেত্রেও যেমন সফল হয়নি, তেমনি একদলীয় নির্বাচন করতেও এ সরকার সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ।’

বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ-পরবর্তী মামলা, গ্রেপ্তার, সাজা, ধারাবাহিক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের বাধা, দলের প্রধান কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া, স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মদতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চিরুনি অভিযান এবং নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানিতে সরকারবিরোধী এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে।

হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে থাকলেও মাঠের অবস্থানে বিএনপির সেই কঠোরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। দলের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাগারে। বাকিরাও আত্মগোপনে থাকায় কর্মসূচি সফল করতে রাজপথে বড় কোনো জমায়েত নেই। পিকেটিংয়ের ক্ষেত্রেও নেই তেমন কোনো তৎপরতা। কোথাও কোথাও ঝটিকা মিছিল বা পিকেটিং থাকলেও তাতে খুব বেশি নেতাকর্মী সমবেত হন না। এসব কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই অবরোধ শিথিল হয়ে পড়ছে। দূরপাল্লার গাড়ি কম চললেও নগর পরিবহন অনেকটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে।

Advertisement

অন্যদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে নানা মেরুকরণ হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে কিছু ‘কিংস পার্টি’ গঠন করে বিরোধী দলগুলোতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে আলোচনা-গুঞ্জন আছে। এরই ধারাবাহিকতায় তৃণমূল বিএনপিসহ কয়েকটি দলে বিএনপির কয়েকজন সাবেক নেতা যোগ দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত যারা যোগ দিয়েছেন, তারা রাজনীতিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নন। ফলে দলের নেতাদের নিয়ে এখনো তেমন অস্তিত্ব সংকটে পড়েনি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

আন্দোলনে থাকা নিবন্ধিত দুই মিত্র বিএনপিকে ছেড়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেওয়ায় নতুন করে চাপে পড়েছে দলটি। তবে এমন পরিস্থিতিতেও নেতাকর্মীদের হতাশ না হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, ধারাবাহিক আন্দোলন এবং পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপে শিগগির পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। সেজন্য আরও কিছুদিন আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।

এদিকে মাঠপর্যায়ের নেতারা মনে করেন, বিএনপির কৌশলগত ভুলের কারণে আন্দোলন এখন অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে। অতিউৎসাহীদের খপ্পরে পড়ে গেছে দলটি। ফলে দলের ভেতরেই সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ এবং অবিশ্বাস।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম ঢাকা টাইমস বলেন, ‘আজকে সরকার যেভাবে গণদাবিকে উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে করে তারা নিজেরাই দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হায়েনার মতো হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু সরকার নিজেও নিজেদের পতন সম্পর্কে আচ করতে পেরেছে। তাই নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করে জনদৃষ্টি অন্যদিকে ধাবিত করে রাখছে।’

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের এক দফা দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, ওইদিনই শুরু হবে আন্দোলনের মহাযাত্রা। একই দিন ঢাকার শাপলা চত্বরে বিএনপির অনুরূপ কর্মসূচি দেয় গত ডিসেম্বর মাসের পর থেকে যুগপৎ আন্দোলন থেকে দূরে থাকা জামায়াতে ইসলামী। এদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ রাখে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যে ‘সহিংস ঘটনা’ ঘটল তা চিন্তায় ছিল না বিএনপির। মহাসমাবেশে জড়ো হওয়া জনসমাগমকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ছিল না পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক। তা ছাড়া মহাসমাবেশকে ঘিরে কিছু ঘটলে পরবর্তী সময়ে কী করা হবে বিএনপির তরফে এমন কোনো নির্দেশনাও আগত নেতাকর্মীদের দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে মহাসমাবেশের জনসমাগমকে নয়াপল্টন এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার মুহূর্তে মঞ্চ থেকে ২৯ অক্টোবরের হরতাল কর্মসূচিও তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষিত হয়।

Advertisement

এর আগে বিএনপি ও তার সমমনাদের মধ্যে এই কর্মসূচি নিয়েও আলোচনা হয়নি। বিএনপি এখন যেসব কর্মসূচি দিচ্ছে, তাতে তাদের আন্দোলন সফল হওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।