রংপুরে এডিসি হারুনের কাজ কী? কীভাবে সময় কাটে তার? স্বরাষ্ট্রের তদন্ত কতদূর এগিয়েছে?

SHARE

য়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩ : কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় ধরে এনে বেদম প্রহার করে সাময়িক বরখাস্ত হন ডিএমপির রমনা জোনের তৎকালীন এডিসি হারুন অর রশীদ। আলোচিত এই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পৃথক আরেকটি তদন্ত কমিটি করে। হারুনকে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। কিন্তু সেখানে তিনি কী দায়িত্বে আছেন? তিনি কি নিয়মিত অফিস করেন? কীভাবে সময় কাটে তার? তাকে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়ায়ই বা কী? এসব নিয়ে ঢাকাটাইমস সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে।

Advertisement

সূত্র জানিয়েছে, সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে প্রথম রংপুর রেঞ্জে হাজিরা দেন এডিসি হারুন। এরপর তিনি সেখানেই আছেন। যে নারীর কারণে এই ঘটনা ঘটল সেই এডিসি সানজিদা আফরিনও ডিএমপিতে স্বপদে দায়িত্ব পালন করছেন।

জানা গেছে, হারুন প্রতিদিন অফিসে গেলেও সেখানে তার বসার কোনো নির্দিষ্ট রুম নেই। পাশাপাশি কোনো দায়িত্বও নেই। অফিসে আসেন, বসে থাকেন। অফিসের সময় শেষ হলে তিনি বেরিয়ে যান। চাকরির বিধি অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত হওয়ায় তিনি কোনো দায়িত্ব পাননি। রংপুরে কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকেন।

এদিকে হারুনকাণ্ডের পর ডিএমপি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘ ৪০ দিন চলে গেলেও প্রতিবেদন জমা দেয়নি তদন্ত কমিটি। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির একজন সদস্য ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছে, আমাদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে গেছে। এখন পর্যালোচনা চলছে। দ্রুতই প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরের ঘটনায় চারজনের দায় পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তারা হলেন রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক, পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ, শাহবাগ থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশনস) মো. গোলাম মোস্তফা ও এডিসি হারুনের দেহরক্ষী মো. আলী হোসেন। পরোক্ষভাবে এ ঘটনায় অনেকের দায় রয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

Advertisement

পুলিশের রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হারুন রংপুরে সংযুক্ত। এখানে সংযুক্ত থাকায় তাকে অফিসিয়ালি কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি প্রতিদিনই হাজিরা দেন। অফিস সময়ে তাকে অবশ্যই থাকতে হয়।’

চেয়ার টেবিল বা অফিসের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তিনি পান কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তিনি এই ধরনের সুযোগ পান না। তবে বসেন…, তার মতো করে। তিনি তো একজন অফিসার। তাকে তো বসতে দিতেই হয়।’

অপর আরেক সূত্র ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছে, হারুন রংপুরেই বাসা নিয়েছেন, সেখানেই থাকছেন। সকালে অফিসে যাওয়ার পর শেষ করে সরাসরি বাসায় চলে আসেন। খুবই কমই বাইরে বের হন। রংপুরে যাবার পর গ্রামের বাড়িতেও বেড়াতে গেছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি আদালতে সাক্ষ্য দিতেও গেছেন। নতুন জায়গা আর বিতর্কিত কাণ্ডের কারণে কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালেই থাকেন তিনি।

৯ সেপ্টেম্বর থানা অভ্যন্তরে অস্ত্রের বাঁট ও পুলিশের বুট দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। ভুক্তভোগীরা হলেন- ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম। পুলিশের নির্মম নির্যাতনে (বুট ও অস্ত্রের আঘাতে) আনোয়ার হোসেন নাঈমের পাঁচটি দাঁত উপড়ে যায়। তাদের নির্যাতনে সরাসরি জড়িত ছিলেন এডিসি হারুন ও পুলিশের কতিপয় সদস্য। আলোচিত এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে ডিএমপি। কয়েক দফা তারিখ পেছানোর পরেও প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। এতেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কী ধামাচাপা পড়তে যাচ্ছে এডিসি হারুন-সানজিদা কাণ্ড?

এদিকে ঘটনা তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করেছে। কমিটির সভাপতি যুগ্মসচিব (পুলিশ-১ অধিশাখা) মো. আবুল ফজল মীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আমরা এখন অ্যানালাইসিস করছি।’ প্রতিবেদন কবে নাগাদ শেষ হতে পারে জানতে চাইলে আবুল ফজল মীর বলেন, ‘সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। অ্যানালাইসিস চলছে। একটু সময় লাগবে। এর মধ্যে যদি আর কোনো নাম লাগে আরেকটু সময় লাগবে।’

পুলিশের তদন্ত কমিটির সভাপতি ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি, অপারেশনস) মো. আবু ইউসুফকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, এডিসি হারুন অর রশীদ রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক এবং তার স্ত্রী সানজিদা আফরিনের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শাহবাগ থানায় ধরে এনে মারধর করেন। এ ঘটনায় তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। দুই দিনের ভেতরে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। চারদফা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখে পেছানো হলেও সর্বশেষ তা আর জমা হয়নি। সম্প্রতি ডিএমপির নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, এডিসি হারুন-সানজিদার ঘটনাটির তদন্ত চলছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

থানা হেফাজতে পুলিশি নির্যাতনের শিকার ছাত্রলীগ নেতা শরীফ আহমেদ মুনিম ঢাকা টাইমসকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনোয়ার হোসেন নাঈম ১ অক্টোবর হাসপাতাল ছাড়েন। তিনি আগের চেয়ে একটু সুস্থ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় হলে থেকে তিনি দাঁতের চিকিৎসা করাচ্ছেন। তবে নাকের অপারেশন করতে আরও সময় লাগবে, কারণ শরীর পরিপূর্ণ সুস্থ না।

Advertisement

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এডিসি হারুনের ঘটনায় প্রকাশ্যে কোনো পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি। এ নিয়ে সাধারণ কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে।’

তিনি বলেন, ‘হয়তো পুলিশ নির্বাচনের আগে হারুনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে না। এতে যদি তাদের ব্যাচের অন্য কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হন সিটিও একটি কারণ। তবে যেভাবে পুলিশ মারধর করেছে এর দ্রুত শাস্তি চেয়েছিলাম আমরা।