ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আইন আদালত,সোমবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৩ : ৬০ বছর বয়সেও এক অন্যরকম আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরও ফিরে পাচ্ছেন না নিজের জমি। তাই তো যে বয়সে নাতি-নাতনী নিয়ে খেলার কথা, সে বয়সে ঘুরছেন আদালতের বারান্দায়। কারণ, ঠাঁই নেই মাথা গোঁজার।
Advertisement
জানা যায়, ঘটনার শুরু ১৯৭৯ সালে। দিনাজপুর উপশহরে হাউজিং এ একটি বাড়ি পান রোকেয়া বেগম। ১৯৯০ সালে ৪ সেপ্টেম্বর নথি আসে তার নামে। কিন্তু কিছুদিন পর একই বাড়ির নথি আসে নুর ইসলামের নামে।
এরপর একে একে দিনাজপুর জজ কোর্ট, হাইকোর্ট, আপিল বিভাগ সবখানে হেরে যায় নুর ইসলাম। কিন্তু বাড়ি আর বুঝে পাননি প্রকৃত মালিক রোকেয়া বেগম। আর তাই তো ৩৩ বছরের কান্নার সমাধান করতে প্রায় দিনই আসেন আদালতে।
বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম বলেন, আমি একজন অসহায় মানুষ। আমার তো বাড়ি-ঘর কিছু নাই। আমি অসুস্থ। আমার দুইটা কিডনির সমস্যা। দুটো কিডনিই আমার নষ্ট। ৩৩ বছর আমার এই কেসে এসব কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করে আর হাঁটতে পারি না, দুই হাটু ব্যাথা। কোমর ব্যাথা। দয়া করে আমার যদি বাড়িটা রেজিস্ট্রি করে দিত, আমাকে অনুমতি দিত, তাহলে আমি খুশি হতাম।
Advertisement
মামলাটি বিনামূল্যে লড়তে রোকেয়া বেগমকে সহায়তা করছে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড। এর আইনজীবীও বলছেন, আপিল বিভাগের রায়ের পরও জমি বুঝিয়ে না দিয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
লিগ্যাল এইড-এর আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, আমি আজকে ডাইরেক্টরের সাথে ফোনে কথা বলেছি। এরপর দিনাজপুরের অ্যাসিস্টেন্ট ডিরেক্টরের সাথে ফোন করেও তাকে বলেছি- আপনারা এটা কেন ঘুরাচ্ছেন। আপনারা কেন যারা ফ্রড (প্রতারণা) করছে, আপনাদের কাগজপত্র, কোর্টের আদেশ আছে- তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন না। কেন তাদের বুঝিয়ে দেন না। এই নয়-ছয় করে ডাইরেক্টর বলছে, আবার নাকি বোর্ডে পাঠাবে। আমি বলছি, বোর্ডে পাঠানোর কিছু নাই। ওনার নামে বরাদ্দ আছে। আগের বরাদ্দ এখনো বহাল আছে। এফিলিয়েট ডিভিশনের রায় আছে। সুতরাং আপনি এই মহিলাটিকে আর কষ্ট দিয়েন না।
এ আইনজীবী আরও বলেন, ওনাকে (বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম) দেখলে আমার গিল্টি ফিল হয়। এটা কিন্তু আমাদের জাতির লজ্জা। আদালতের রায় নিয়েও যদি এইভাবে নয়-ছয় করা হয়, তাহলে মানুষের আস্থা কোথায় যাবে, আমি জানি না।
Advertisement
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সদুত্তর দিতে পারেনি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। তবে মৃত্যুর আগে ৩৩ বছরের আইনি লড়াইয়ের ফল ভোগ করে যেতে চান বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম।