ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,সোমবার, ০৬ নভেম্বর নভেম্বর ২০২৩ : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে তাণ্ডব চালিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই এখন কারাগারে। ভাঙচুর, আগুন সন্ত্রাস ও পুলিশসহ সাধারণ মানুষ হত্যার ঘটনায় অনেক নেতা ঘরছাড়া। বিএনপির তৃণমূলও বেসামাল, স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও মাঠে নেই।
এ অবস্থায় সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে দলের নেতৃত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। তাই দফায় দফায় হরতাল, অবরোধ দিয়ে বিএনপি কোনপথে হাঁটছে তা নিয়েই চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি রাজপথে শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি কখনও। সঠিক নেতৃত্ব, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, কর্মসূচি ঘিরে নেতাদের প্রতিশ্রুতির অভাবের কারণে আবারও বিএনপির আন্দোলন চোরাগলিতে ঘুরপাক খেতে যাচ্ছে। আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারাই এর বড় উদাহরণ।
Advertisement
বিএনপির ২৮ অক্টোবর সমাবেশের পর ২৯ অক্টোবর হরতাল কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত। পরে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলগুলো। বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাস আর জ্বালাও-পোড়াওয়ের বলি হন পুলিশ, সাংবাদিক ও পরিবহন শ্রমিকসহ ৯ জন।
৫ নভেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফার অবরোধেও জ্বালাও-পোড়াও এবং তাণ্ডব দেখেছে দেশবাসী। এতে দেশের পরিবহন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের লোকসানও হয়।
শান্তিপূর্ণ সমাবেশ থেকে বিএনপির সহিংসতার শুরু
২৮ অক্টোবর সমাবেশের দিন দুপুর থেকে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। পল্টনকে কেন্দ্র করে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা, আগুন-সন্ত্রাস, বিচারপিতর বাড়িতে হামলাসহ পরিবহনে হামলা চালায় তারা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালে পুলিশ এবং সাংবাদিকদের ওপরও বর্বর হামলা চালানো হয়। ২৫ জনের মতো সাংবাদিক মারধরের শিকার হন। পুলিশের কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ প্রাণ হারান। এছাড়া যুবদলের এক নেতাও সংঘর্ষে প্রাণ হারান বলে দাবি করেছে বিএনপি। যদিও পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
এ অবস্থায় সহিংসতার রাজনীতির আঁকা ছক অনুযায়ী ২৯ অক্টোবর হরতালের ডাক দেয় বিএনপি।
দ্বিতীয় দফার অবরোধে পুড়ল কত গাড়ি
দ্বিতীয় দফার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে সোমবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস জানায় দুদিনে মোট ২১টি আগুনের খবর পেয়েছে তারা। এরমধ্যে ঢাকা সিটিতে ১২টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর, কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জ) ৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (খাগড়াছড়ি, আনোয়ারা, পটিয়া) ৪টি, রাজশাহী বিভাগে (বগুড়া) একটি ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ১৫টি বাস, দুটি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার, একটি সিএনজিচালত অটোরিকশা, একটি লেগুনা পুড়ে যায়। এই ২১টি অগ্নিকাণ্ড নির্বাপণ করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪১টি ইউনিট এবং ২৪২ জন কাজ করে।
রাজনীতির নামে অপরাধে জড়িয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা
সরকার পতনের ডাক দিয়ে সাধারণ মানুষের জান-মালের ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি মানুষ হত্যার মাধ্যমে অপরাধে জড়ান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এখন পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির তাণ্ডব, জ্বালাও-পোড়াওয়ে পরিবহন খাতে মোট ২১ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ।
তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে পরিবহন খাতে এ ক্ষতি হয়েছে।
Advertisement
এ সময়ের মধ্যে ঢাকায় ৬৪টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং ১৫০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০টি বাস এবং চারটি ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান।
হরতাল-অবরোধের কারণে শুধু পরিবহন মালিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না বরং শ্রমিকরাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন মন্তব্য করে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জানান, হরতাল-অবরোধ বারবার দেয়া হলে পরিবহন খাত বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে। কাজেই এ ধরনের কার্যক্রম নিরুৎসাহিত করেন তিনি।
মাঠে নেই বিএনপির নেতারা
এদিকে কঠোর কর্মসূচির ডাক দিয়েই অজ্ঞাতস্থানে চলে যান বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। মাঠে কর্মীদের রেখে এ যেন নেতাদের স্বার্থপরের মতো পলায়ন। সমাবেশের দিন বিকেলে মঞ্চে উঠে হরতালের ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এরপর থেকেই নয়াপল্টন এলাকা ছাড়তে শুরু করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকে মোটরসাইকেলে করে রাতের আঁধারে দলীয় কার্যালয় ছাড়তে দেখা যায়। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে তিনি অজ্ঞাতস্থান থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচির বিষয়ে নানা তথ্য দিচ্ছেন।
এছাড়া বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনও মুখ ঢেকে কার্যালয় ছাড়েন বলে এক ভিডিওবার্তায় নিজেই স্বীকার করেছেন। ওই ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি সমাবেশের দিন সন্ধ্যায় সিনিয়র নেতা রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে দেখা করে মুখ ঢেকে কার্যালয় ছাড়ি। কারণ আমাদের প্রতি ধরা না পড়ার নির্দেশনা ছিল। যে কারণে সিনিয়র সব নেতা সমাবেশের পর দ্রুততম সময়ে অজ্ঞাতস্থানে চলে যান।’ ইশরাকও অজ্ঞাতস্থান থেকে ভিডিওবার্তায় এসব তথ্য জানান।
তবে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে অপরাধের দায়ে পুলিশের জালে ধরাও পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এখন পর্যন্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন।
এছাড়া দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরামের অন্য সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ কয়েকজন অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে নিষ্ক্রিয়। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং সালাউদ্দিন আহমেদ রয়েছেন বিদেশে।
স্থানীয় পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাও ঘরছাড়া থাকায় সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলনে দলের নেতৃত্ব নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। একজন গ্রেফতার হলে বিকল্প আরেকজনকে নেতৃত্ব নিতে তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে হাইকমান্ড। ফলে মাঠের কর্মসূচি বাস্তবায়নে মধ্যম সারির নেতাদের ওপর এখন নির্ভর করতে হচ্ছে দলটির।
মির্জা আব্বাসের গ্রেফতারের পর তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস গণমাধ্যমকে জানান, সমাবেশের দিন সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি মির্জা আব্বাস। তিনি আরও বলেন, মাঠে নেতাদের অনুপস্থিতি আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে না। কর্মীরাই আন্দোলন চালিয়ে নেবেন বলে জানান তিনি।
বিএনপির সহিংস কর্মসূচিতে প্রাণহানি
২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৯ জনের প্রাণ গেছে। এরমধ্যে সমাবেশের দিন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ এবং বিএনপির দাবি করা এক যুবদল নেতা প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া সমাবেশের দিন আহত গণমাধ্যমকর্মী রফিক ভূইয়ার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
২৯ অক্টোবর হরতালের দিন এক পরিবহন শ্রমিককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া বাসে আগুন দিতে গিয়ে জনতার ধাওয়ায় প্রাণ যায় আরেক বিএনপি কর্মীর। লালমনিরহাটে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
৩১ অক্টোবর শুরু হওয়া টানা তিনদিনের অবরোধের প্রথম দিন কিশোরগঞ্জে বিএনপির দুই কর্মী এবং সিলেটে যুবদলের এক নেতা প্রাণ হারান।
আগেও মানুষ পুড়িয়েছে বিএনপি-জামায়াত
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দেশের অভ্যন্তরে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ২০১৩ সালে মানবতাবিরোধীদের বিচার বন্ধে বিএনপির সমর্থন নিয়ে জামায়াত-শিবির দেশব্যাপী তাণ্ডব চালায়। ওই সময় সহিংসতার ৪১৯টি ঘটনা ঘটে।
নাশকতা, হামলা, ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াওয়ে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা।
গণমাধ্যমের হিসাব মতে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পরবর্তী দুদিনেই জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন প্রাণ হারান। এদের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধিতা করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। সে সময় বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা শত শত যানবাহন ভাঙচুরের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়।
গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ওই ঘটনায় পেট্রোল বোমা, হাতে বানানো বোমা এবং অন্যান্য সহিংসতায় কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারান। সহিংসতার সময় রাস্তার পাশে থাকা হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এছাড়া ছোট দোকান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও আগুন দেয়া হয়।
সহিংসতার কারণে নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং অফিসারসহ বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। সারাদেশে ৫৮২টি স্কুলের ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি নির্বাচনের বছরপূর্তির দিন আবারও জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিএনপি-জামায়াত জোট, ঘটে প্রাণহানি। এদের বেশিরভাগই পেট্রোল বোমা এবং আগুনে দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় আহত হন সহস্রাধিক। গণমাধ্যমের তথ্যমতে, সে সময় ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি এবং ৮টি যাত্রীবাহী জাহাজে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় সরকারি নানা দফতর।
পরবর্তীতে ২০১৬ সালে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডবের বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রীর আদালতে হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারাদেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ চালায়।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হন। ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি রেলগাড়ি ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেয়া হয়। পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করে ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাঙচুর এবং ৬টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দেয়া হয়।
এদিকে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া তিনদিনের অবরোধে অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। ২০১১ সালের জুলাই মাসে টানা ছয়দিন চলা হরতাল নিয়ে জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএনডিপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তখনকার ছয় দিনের হরতালে দেশের ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি হরতালে জিডিপির গড় ক্ষতি ছিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।
একই প্রতিবেদনে বলা হয়, হরতালের কারণে দেশের মোট অর্থনীতির ২০ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়ে। এছাড়া আমদানি-রফতানিতে এ ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশ এবং শুধু একদিনের হরতালের কারণে দেশে পণ্যমূল্যের দাম বাড়ে ১০ শতাংশ।
ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯-২০১৩ সালে বিএনপি ৭০টির বেশি হরতাল দিয়েছে। শুধু ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৪০। যেখানে একদিনের হরতালে এত ক্ষতি, সেখানে বছরে ৪০ দিনের হরতাল দেশের অর্থনীতিকে স্পষ্টত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সমাধান রাজনীতিবিদদের হাতে
জ্বালাও-পোড়াও সংঘাতের রাজনীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে সম্প্রতি ২৩৭ বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেন, আমরা এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়টির ওপর আলোকপাত করতে চাই। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে এই ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই এই দলগুলোর নেতৃত্বের নিছক উদাসিনতা প্রকাশ করে। বিশ্বের এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে আবারও বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশ। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে এমন সহিংসতার জন্য হাজার হাজার ডলার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বাংলাদেশের।
বিশিষ্টজনেরা অবিলম্বে ক্ষতিকর রাজনৈতিক কর্মসূচি ও আগুন-সন্ত্রাস থেকে দেশকে রক্ষায় দলগুলোকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানান।
এদিকে রাজনৈতিক জ্বালাও-পোড়াওয়ে সবচেয়ে ক্ষতি সাধারণ মানুষের। অর্থনৈতিক চাপটা তাদেরই নিতে হয়। এ অবস্থায় সহিংসতার রাজনীতি কোন পথে যাচ্ছে তা নিয়ে বিশ্লেষকরাও শঙ্কা জানিয়েছেন।
Advertisement
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির যে অবস্থা তা এক ধরনের সাংঘর্ষিক। দুই পক্ষের কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের মধ্যে আছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যা থাকবেই। সাধারণ মানুষকে তাই দ্বাদশ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সংঘাত ও অনিশ্চয়তার মধ্যেই থাকতে হবে।
তবে সমাধানের পথ রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই বের করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কারণ দু’পক্ষ কঠোর অবস্থানে থাকলে ভোগান্তি পোহাতে হবে জনগণকেই।