ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চট্টগ্রামে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’প্রতিনিধি,শনিবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৩ : কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল উদ্বোধন হবে শনিবার (২৮ অক্টোবর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন করবেন। এর পরদিন থেকে টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে।
Advertisement
প্রধানমন্ত্রীর সফর সূচি থেকে জানা যায়, তিনি পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীরে একটি এবং টানেল পার হয়ে আনোয়ারায় নদীর দক্ষিণ তীরে আরেকটি ফলক উন্মোচন করবেন। এরপর দুপুরে জনসভার মঞ্চে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভা শেষে তিনি ঢাকায় ফিরে আসবেন।
টানেল উদ্বোধন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে আরও কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী দিনের খাম এবং প্রথম পানির নিচের সড়ক টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে একটি বিশেষ সিলমোহরও প্রকাশ করবেন তিনি।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলার মধ্যে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলটি ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। টানেলটি সোমবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
এদিকে টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে জেলাজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের জন্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি সারাদেশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) মাঠে এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হবেন বলে আশা করছেন মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে আমাদের জনসভা বিশাল জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানস্থলে নৌকার আদলে একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ অনুষ্ঠানস্থলে স্যানিটেশন ও পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে এবং নারীদের নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হবে।
Advertisement
যোগাযোগের ক্ষেত্রে রাখবে বৈপ্লবিক ভূমিকা
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই পুরোদমে চলে প্রকল্পের কাজ, যা কেবল উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
টানেলের এক মাথা শুরু হয়েছে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমির পাশ থেকে। নদীর তলদেশ দিয়ে তা চলে গেছে আনোয়ারার দিকে। নদীর তলদেশের এই পথের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। আগে এ পথ পেরোতে এক ঘণ্টা সময় লাগত, এখন লাগবে মাত্র পাঁচ মিনিট। এ টানেল ধরে চলে যাওয়া যাবে পর্যটননগরী কক্সবাজার ও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত।
এ ছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। বাঁশখালীতে হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। মহেশখালীতে হয়েছে এলএনজি স্টেশন। আনোয়ারায় হচ্ছে বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব মেগা প্রজেক্টের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল।
এ বিষয়ে কথা হয় টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত টানেল। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল উন্মুক্ত করা হবে।’
Advertisement
সম্প্রতি গোলটেবিল বৈঠকে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতু যেভাবে ভূমিকা রেখেছে, চট্টগ্রামে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সেভাবেই ভূমিকা রাখবে। চট্টগ্রামে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সক্ষমতা তৈরি হওয়ায় জাপানসহ বিভিন্ন দেশ চট্টগ্রাম ও পাশের দেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে লক্ষ্য করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
বহুল প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের পাশাপাশি ১০ লাখের বেশি মানুষের সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। ফাইল ছবি