ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),মাদারীপুর প্রতিনিধি,বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩ : মাদারীপুর শহরের একটি বনেদি পরিবারের একমাত্র সন্তান সোহান (ছদ্মনাম)। বন্ধুদের আড্ডায় পড়ে প্রথমে সিগারেট পরে ইয়াবা সেবনে আসক্ত হন। টাকার জন্য প্রতিদিন বাড়িতে চলে অশান্তি। ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। একসময় এসব ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে সোহানের স্ত্রীও চলে যায়। শাকিল (ছদ্মনাম) শহরের এক শিল্পপতির ছেলে। জেলায় ইটভাটাসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। শাকিল বন্ধুদের আড্ডায় পরে ফেনসিডিল সেবনে আসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকাসক্ত হয়ে খুইয়েছেন জমিজমা-ইটভাটা।
Advertisement
শুধু সোহান আর শাকিল নয়, এমন শত শত যুবকের পরিবারে বিরাজ করছে অশান্তি। শুধু যুবকরাই নয়, নারীরাও আসক্ত হচ্ছেন মাদকে। স্থানীয়দের দাবি, মাদারীপুর শহরে হাত বাড়ালেই মেলে মাদকদ্রব্য। এতে করে বিভিন্ন সংসারে তৈরি হয়েছে অশান্তি। সম্প্রতি মাদারীপুর শহরের কলেজ রোড এলাকায় এক বাড়িতে মদের আসর বসিয়ে অতিরিক্ত মদপানের ফলে দুই নারী মারা যায়। অথচ এ ঘটনায় মদ বিক্রির হোতাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সোহানের বাবা বলেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। সুখের সংসার ছিল। ছেলে মাদকাসক্ত হওয়ায় এখন সংসারে অশান্তি। ছেলের বউ চলে গেছে তালাক দিয়ে। কয়েকদিন আগে ছেলেকে মাদক নিরাময় কেন্দ্র দিয়েছি। এর আগেও একবার মাদক নিরাময় কেন্দ্র দিয়েছিলাম। কিছুদিন ভালো ছিলো, পরে আবার শুরু করছে ইয়াবা সেবন।
সচেতন মহলের দাবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই মাদারীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে মাদকদ্রব্য।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের আশপাশেই রয়েছে কমপক্ষে ৫০টি মাদক বিক্রির স্পট। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস ও পুলিশ কর্মকর্তারা এসব দেখেও না দেখার ভান করে এবং রহস্যজনক কারণে নীরব থাকে। তবে পুলিশ মাঝেমধ্যে বিভিন্ন স্থানে লোক দেখানো অভিযান চালায়। আবার কখনও মাদকসেবীদের আটক করে অর্থের বিনিময়ে গোপনে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি, প্রবাসী এক মাদকসেবীর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটেছে।
Advertisement
জানা গেছে, মাদারীপুর শহরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইয়াবা, ফেনসিডিল, বাংলা মদ আর গাঁজা পাইকারি বেচাকেনা হয়। পুরো মাদারীপুর জেলা-ই এখন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে চুক্তিতে মাসে মাসে টাকা দেয়। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত বলে প্রতিদিন বানের পানির মতো মাদক আসছে। মরণ-নেশা ইয়াবা সেবন করে স্থানীয় শত শত কিশোর-যুবক তাদের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। অনেক ধনী ব্যক্তির সন্তানরা এখন নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, প্রশাসনের মনিটরিংয়ের অভাবে মাদকের বিস্তার ঘটছে। সম্প্রতি অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে দুই নারী মারা গেছে। নারীরাও আসক্ত হচ্ছে। অথচ কয়েক বছর আগে নারী মাদকাসক্তদের কথা মাদারীপুরে কল্পনাও করা যেত না। আমরা চাই. প্রশাসন কঠোর নজরদারি করুক। এতে করে মাদকের বিস্তার কমবে।
Advertisement
এ ব্যাপারে মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, আমরা মাদকবিরোধী অভিযান প্রতিনিয়তই পরিচালনা করে থাকি। মাদক ব্যবসায়ীদের কোনও ছাড় নেই। মাদকের সাথে যারাই জড়িত থাকুক, সবাইকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।