গাজায় ত্রিমাত্রিক অভিযান শুরুর সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ইসরাইলি সেনারা

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি,সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাংশ থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যেতে ছয় ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিল ইসরাইলের সেনাবাহিনী। সেই সময় শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটার দিকেই শেষ হয়ে যায়। এরপর সে সময় আরও তিন ঘণ্টা বাড়ানোর ঘোষণা আসে, সেই সময়ও শেষ হয়ে গেছে বহু আগে।

Advertisement

এরই মধ্যে গাজাজুড়ে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় অভিযানের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করার জন্য জল-স্থল-আকাশ পথে সাঁড়াশি আক্রমণের লক্ষ্যে ব্যাপক সমর সজ্জা করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর বিশেষ বিশেষ ইউনিট।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী এখন শুধু দীর্ঘ প্রত্যাশিত স্থল আক্রমণের জন্য তেল আবিবের সরকার থেকে সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষায় রয়েছে। শুধু গাজাতেই নয়, লেবাননের সীমান্তে একটি নতুন ফ্রন্ট খুলছে ইসরাইলের সেনাবিহনী। তারা অভিযোগ করছে, হামাসকে সাহায্য করছে লেবাননের হেজবুল্লাহ গ্রুপ।

ইসরাইল উত্তর গাজায় বসবাস করা ১১ লাখ মানুষকে এই অঞ্চলের দক্ষিণে চলে যেতে বলেছে এবং হাজার হাজার বাসিন্দা ইসরাইলের নির্দিষ্ট কর দেয়া নিরাপদ রুট ব্যবহার অন্যত্র চলে গেছে। গাজায় বসবাস করা প্রায় ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির অর্ধেকই বাস করে শহরের উত্তর অংশে।

গাজা ছেড়ে পালাতে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের একটি কনভয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে। ঘটনার খুব কাছে থেকেই ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই হামলায় শিশুসহ বেসামরিক নাগরিক মারা গেছে। ঘটনাস্থলে অনেকগুলো যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হতে ও আগুনে জ্বলতে দেখা গেছে।

ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট রিচার্ড হেচট এবং ড্যানিয়েল হাগারি আলাদাভাবে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ৭ অক্টোবরে হামাসের হামলার পর তাদের পদক্ষেপ শুধুমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে রহিত হতে পারে। এছাড়া চলমান অভিযান বন্ধের কোন উপায় নেই। হামাসকে নির্মূল করেই শান্ত হবে ইসরাইল।

তবে গাজায় উপর্যুপরি হামলার কারণে ইসরাইল জাতিসংঘ এবং তার কিছু মিত্রদের চাপের মধ্যে রয়েছে, যারা বেসামরিক নাগরিকদের চলে যাওয়া পর্যন্ত যে কোনো স্থল আক্রমণ স্থগিত রাখতে চায়। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বলছে, তারা কখন নিরাপদ রুট বন্ধ করবে, সে সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

জাতিসংঘ বারবার বলেছে, গাজার উত্তরাংশ থেকে সব বাসিন্দার দক্ষিণে চলে যাওয়া কার্যত অসম্ভব এক বিষয়। কারণে, বিশ্বের অন্যতম জনবসতির এলাকা গাজা। ফলে সবাইকে সরিয়ে নেয়া প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া হাসপাতাল থেকে রোগীদের সরিয়ে নিলে তাদের নিশ্চিত মৃত্যু ছাড়া উপায় থাকবে না।

স্থল হামলার কারণে গাজায় বন্দি ১৫০ জন ইসরাইলি ও বিদেশি নাগরিকের জীবনও হুমকিতে পড়বে মনে করছে দুএকটি পক্ষ। রোববার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট মার্কিন সিনেটরদের সঙ্গে গাজার বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া এবং মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার গাজা সীমান্তের কাছে সেনাদের বলেন, তোমাদের জন্য আরও রসদ আসছে। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, স্থল আক্রমণ অনিবার্য। তবে কবে থেকে অভিযান শুরু হবে তা জানাননি তিনি।

ইসরাইল গাজার আশেপাশে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে বহু অপেক্ষার আক্রমণাত্মক অভিযানের জন্য। দেশটির নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই অভিযানে মধ্যপ্রাচ্যের চেহারা বদলে যাবে। তারা জানান, এমন ধরনের অভিযান চালানো হবে, যা আগে কখনো দেখেনি বিশ্ব।

গাজার সীমান্তে প্রস্তুত রয়েছে ইসরাইলি বাহিনীর হাজার হাজার ট্যাঙ্ক। দেশটি জানিয়েছে, হামাস গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য শিগগরিই একটি বিস্তৃত অভিযান করা হবে গাজা ভূখণ্ডে। তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়াগত কিছু সমস্যা রয়েছে। তা কেটে গেলেই হামলা হবে গাজায়।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, গত দুদিনে গাজা ও ইসরাইলের আবহাওয়ার অবস্থা বেশ বিরূপ ছিল। আকাশে ছিল মেঘ। সে জন্যই এই হামলা শুরু করেনি ইসরাইল। কারণ স্থলপথে হামলা চালিয়ে মূলত হামাস জঙ্গিদের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে চায়। টানেলে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের খুঁজে খুঁজে মারতে চায় ইসরাইল।

Advertisement

সে জন্য স্থলপথে যখন ইসরাইলি সেনা গাজার বিভিন্ন শহরে ঢুকবে, তখন তাঁদর সাহায্য করার জন্য আকাশ পথে নজরদারি চালাবে ড্রোন ও হেলিকপ্টার। কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় তা সে কাজ চালাতে অসুবিধা হবে। সে জন্যই ইসরাইল কিছুটা সময় নিয়ে আক্রমণ করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরাইলে হামলার জন্য হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে দায়ী করেছে তেল আবিব। বলা হচ্ছে, হামলার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে সিনওয়ারকে জীবিত বা মৃত ধরা। সামরিক মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট রিচার্ড হেচট বলেছেন, সেই লোকটি আমাদের দৃষ্টিতে রয়েছে। সে মৃত হলেও আমরা তার কাছে যাব।

হামাস যে ১৫০ জন ইসরইলি ও বিদেশি নাগরিককে গাজায় যুদ্ধবন্দি করে নিয়ে গিয়েছে, তাঁদের মুক্ত করার চেষ্টা করা হবে। এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লাগাতার আকাশপথে গাজা ভূখণ্ডে বোমা বর্ষণ করে গিয়েছে ইসরাইল। তাদের দাবি, হামলা হয়েছে শুধু হামাসের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে।

আক্রমণে দেরি করার কারণ হিসাবে আরও এক বিষয় উঠে আসছে। ইসরাইলের অনেক বাসিন্দাকে পণবন্দি বানিয়ে গাজায় নিয়ে গেঝে হামাস। ইসরাইল সেনা আক্রমণ চালালে তাঁদেরকে ঢাল বানাতে পারে হামাস। তাই পরিকল্পনা করে এবং সবদিক খতিয়ে দেখে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ইসরাইল।

এদিকে, ফিলিস্তিনের গাজায় নির্বিচার হামলা চালানো ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছেন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়া। গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে বাসিন্দাদের দক্ষিণে যেতে ইসরাইল সময়সীমা বেঁধে দিলেও বাসিন্দারা সে নির্দেশ মানছেন না বলে দাবি করেছেন তিনি।

রোববার ইসরাইলকে হুমকি দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দুল্লাহিয়ান। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যদি গাজায় ইসরায়েলি সেনারা প্রবেশ করে তাহলে গাজাকে দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের সমাধিস্থলে পরিণত করবে হামাসের প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

গত সপ্তাহে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের ভূখণ্ডে হামলা চালায় এবং এতে প্রায় ১৩০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছে। জিম্মি করা হয়েছে আরও অন্তত দেড়শ’ জনকে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইসরাইলও ব্যাপক বোমা বর্ষণ করায় গাজায় নিহত হয়েছে ২,৩০০ ফিলিস্তিনি।

ইসরাইল-হামাস দ্বন্দ্বের বিষয়ে এক খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোটের আয়োজন করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে আহবান জানিয়েছে রাশিয়া। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যকে প্রস্তাবটি পাঠানো হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে সোমবার নাগাদ ভোটের আয়োজন করা হবে।

Advertisement

ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতময় অঞ্চলে দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে শত্রুতাপূর্ণ কার্যক্রম মোকাবেলার জন্য। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মোতায়েন রণতরী জেরাল্ড আর ফোর্ডসহ সেখানে থাকা আরও যুদ্ধজাহাজকে সহায়তার জন্য আইজেনহাওয়ার রণতরীকে পাঠানো হচ্ছে।