ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),আস্তর্জাতিক প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৩ : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের অভিযানের প্রতিশোধ নিতে গাজা সীমান্তে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে ইসরাইল। এছাড়া জড়ো করা হয়েছে অসংখ্য ট্যাঙ্ক ও সাজোয়া যান। আল জাজিরা।
Advertisement
এদিকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে উপত্যকার ১১ লাখ বাসিন্দাকে উত্তরাঞ্চল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেনারা যেকোনো সময় গাজায় ঢুকে স্থল অভিযান চালাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে হামাস বলেছে, তারা ইসরাইলের স্থল অভিযানের ভয় পায় না। তারা অভিযান মোকাবিলা প্রস্তুত।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ’র মুখপাত্র জোনাথন কনরিকাস জানিয়েছেন, গাজার চারপাশে সীমানা প্রাচীর ফের স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গাজা সীমান্তের কাছে পদাতিক, সাঁজোয়া সেনা, আর্টিলারি সেনাদল পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ সংরক্ষিত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী গাজা উপত্যকার কাছাকাছি রয়েছে এবং ইসরাইল সরকার তাদেরকে যে মিশন দিয়েছে তা সম্পন্ন করতে প্রস্তুত হচ্ছে। এই লড়াইয়ের শেষে ভবিষ্যতে ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার মতো হামাসের যাতে আর কোন সামরিক সক্ষমতা অবশিষ্ট না থাকে তা নিশ্চিত করাই এই মিশনের লক্ষ্য।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য মতে, গাজায় স্থল অভিযান চালাতে সেনা ছাড়াও অসংখ্য ট্যাঙ্ক, সাজোয়া যান, কামান ও বুলডোজার জড়ো করা হয়েছে।
Advertisement
সপ্তম দিনের মতো বিমান হামলা অব্যাহত
হামাসের অভিযানের প্রতিশোধ নিতে গাজা উপত্যকাকে টার্গেট বানিয়েছে ইসরাইল। গত শনিবার (৭ অক্টোবর) থেকে নির্বিচারে অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সপ্তম দিনের মতো হামলা অব্যাহত রয়েছে। হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে। সবশেষ তথ্য মতে, গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩৭ জনে। আহতের সংখ্যা ৬ হাজার ৬১২ জন।
ইসরাইলের বিমান হামলা থেকে বাঁচতে দিগ্বিদিক পালাচ্ছে গাজাবাসী। কিন্তু আসলে তাদের পালানোর কোনো জায়গা নেই। পুরো গাজা উপত্যকা ইসরাইলের দেয়া উঁচু সীমানা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা।
সীমান্তের চেকপয়েন্টগুলোও বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল ও মিশর। ফলে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। গোলার আঘাতে মৃত্যুই যেন তাদের নিয়তি।
ফিলিস্তিনের অধিকৃত গাজা উপত্যকায় ২৩ লাখ মানুষের বাস। পৃথিবীর বৃহত্তম উন্মুক্ত কারাগার হিসেবে পরিচিত এ ভূখণ্ডের মানুষগুলোর প্রতিটি মুহূর্ত এখন কাটছে সীমাহীন ভয়-আতঙ্কে।
মাথার ওপর আকাশে ঘুরছে ইসরাইলের যুদ্ধবিমান। অবিরাম পড়ছে বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র। তাতে মুহূর্তে উড়ে যাচ্ছে ঘারবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও মসজিদ। বেঘোরে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।
১১ লাখ অধিবাসীকে সরে যাওয়ার নির্দেশ
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই উপত্যকায় স্থল অভিযান চালানোর সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে ইসরাইল। গাজাবাসীর বেশিরভাগই উত্তরের ওয়াদি গাজা এলাকায় বসবাস করেন। ওই অঞ্চলের ১১ লাখ বাসিন্দাকে তাদের আবাসস্থল ছেড়ে ছিটমহলের দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে বলেছে ইসরাইল।
জাতিসংঘকে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে হবে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, সংস্থাটি মনে করে কোনো বিধ্বংসী মানবিক পরিস্থিতি তৈরি না করে এ ধরনের স্থানান্তর অসম্ভব। যেকোনো ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা এড়াতে এ ধরনের নির্দেশের প্রত্যাহার চায় জাতিসংঘ।
ডুজারিক আরও বলেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর আদেশটি জাতিসংঘের সকল কর্মী, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ক্লিনিকসহ জাতিসংঘ শিবিরে আশ্রয়প্রাপ্তদের জন্যও প্রযোজ্য। জাতিসংঘ আরও জানায়, এখন পর্যন্ত গাজার প্রায় সোয়া চার লাখ বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গত শনিবার (৭ অক্টোবর) সকালে হামাসের অতর্কিত হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের এক হাজার ৩০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এছাড়া বহু ইসরাইলি ও বিদেশি নাগরিককে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস। এদের মধ্যে ৯৭ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছে ইসরাইলি সরকার।
ভয় পাই না: হামাস নেতা গাজী হামাদ
ইসরাইলের স্থল অভিযান নিয়ে শঙ্কিত নয় বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতা গাজী হামাদ। আল জাজিরাকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমরা ভয় পাই না। আমরা শক্তিশালী। এই অভিযান অব্যাহত রাখতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের অনেক যোদ্ধা ও সমর্থক রয়েছেন; যারা আমাদের সহায়তা করতে চান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি জর্ডান সীমান্ত, লেবানন ও সব জায়গার মানুষ এখানে আসতে চায় এবং আমাদের জন্য লড়াই করতে চায়। গাজা কোনো (ফুলের) বাগান নয়। তারা যদি কোনো হামলা চালায় তাহলে এটি তাদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল হবে।
হামাসের এই নেতা আরও বলেন, ‘অভিযান শুরুর পর আমরা ইসরাইলে ১ হাজার ২০০ যোদ্ধাকে পাঠিয়েছি। যারা ইসরায়েলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সমর্থ হয়েছে। ইসরাইলের নিরাপত্তা, ইসরাইলের গোয়েন্দা তথ্য এবং ইসরাইল যে একটি পরাশক্তি সেই ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সমর্থ হয়েছে।
Advertisement