পাবনা-১: ঘরের শত্রু বিভীষণ ও জামায়াত ফ্যাক্টার (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),পাবনা প্রতিনিধি,৭ অক্টোবর ২০২৩ :  মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের সূত্র ধরে দীর্ঘদিন নির্বাচন হতো পাবনা-১ আসনে। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেই চিত্র এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর দুর্বল হয়ে গেছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শিবির।

Advertisement

কিন্তু ভোটাররা মনে করেন, মনোনয়ন নিয়ে বিভক্তি এবং একজন প্রবীণ নেতা দল ত্যাগ করায় খানিকটা সঙ্কটে আছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূল নেতা কর্মীদের মত নির্বাচনের আগে এই বিভাজন কাটিয়ে ওঠা দরকার। ভোটাররা আরও জানান, বেড়া এবং সাঁথিয়ার কোন উপজেলা থেকে প্রার্থী দেয়া হচ্ছে এবার সেটাও নির্বাচনের ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করবে।

সাঁথিয়া উপজেলার একটি পৌরসভা, ১০টি ইউনিয়ন, বেড়া উপজেলার একটি পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে আসনটি গঠিত। এটি একটি কৃষি নির্ভর এলাকা। ইছামতি নদীর মাছ আর কৃষি পণ্যই নির্ভর এখানকার বেশিরভাগ মানুষের পেশা। একসময় এই অঞ্চলে জামায়াতে ইসলামীর শক্ত ঘাঁটি ছিলো। যুদ্ধাপরাধের দায়ে মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের পর সেই ঘাঁটি কিছুটা দুর্বল হয়েছে।

Advertisement

এই আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক টুকু জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য থাকাকালে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের ফলে আগের তুলনায় আওয়ামী লীগের সমর্থন আরও বেড়েছে।

পাবনা-১: ঘরের শত্রু বিভীষণ ও জামায়াত ফ্যাক্টার

তবে সাথিয়ার মানুষের অভিযোগ, আয়তন ও ভোটারের দিক থেকে তারা বেড়ার চেয়ে বড় হলেও উন্নয়নে পিছিয়ে। সব সময় বেড়া থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার কারণে তাদের ভাগ্য বদল হয়নি। এবার এই পাবনা-১ আসনে কমপক্ষে তিন জন নতুন প্রার্থী নির্বাচনে আগ্রহ জানিয়েছেন।

আগামী নির্বাচনেও এই আসনের আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থী জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু। তিনি ছাড়াও তার সহোদর বেড়া পৌরসভার দীর্ঘ ২২ বছর মেয়রের দায়িত্বপালনকারী আবদুল বাতেনও সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানান।

এছাড়াও এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী তালিকায় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ দেলোয়ার, সাবেক রেল সচিব মানবাধিকার কমিশনের সদস্য এম সেলিম রেজা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য অধ্যাপক আব্দুল আওয়ালের নাম শোনা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আওয়াল জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য এবং তার ভাই আওয়ামী লীগ নেতা বাতেনের মধ্যে বিরোধের কারনে অতিষ্ঠ সাধারণ কর্মীরা। তাদের দুজনকে এক না করতে পারলে বিজয় হাত ছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সারাদেশের উন্নয়নের সাথে সাথিয়া বেড়া উন্নয়নের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।

votejog 3

যদিও আওয়ামী লীগের আরেক অংশের নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমান সময় এলাকার উন্নয়নের মাইলফলক। সাধারণ মানুষের কাছে তারা এই উন্নয়নের তথ্য পৌছে দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে। তারা মনে করেন, যোগ্য প্রার্থীর হাতে নৌকা তুলে দিলে সহজেই পার হওয়া যাবে নির্বাচনী বৈতরণী।

আর বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, এঅঞ্চলের উন্নয়ন শুরু হয়েছে তাদের সময়ে। এরপর যে চলমান উন্নয়ন এতে সাধারণ মানুষের কোন উপকার হয়নি। এ আসনে বিএনপির শক্ত অবস্থান থাকলেও ১৯৯৬ সালের পর দলটি নিজেদের কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি। জোটবদ্ধ নির্বাচন করায় আসনটি তারা জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের হতাশা বিরাজ করছে।

বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মেজর (অব.) মনজুর কাদের। তার এই আসনে রয়েছে  বড় ভোট ব্যাংক। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে সিরাজগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করে হেরে যান।

এ নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদের মনে রয়েছে অসন্তোষ। তাই বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার চান দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন। বিএনপির প্রার্থী তালিকায় আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হচ্ছেন- বেড়া পৌর বিএনপির সভাপতি ফজলুর রহমান ফকির, সাঁথিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম ওরফে ভিপি শামসুল, তাঁতি দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সিআইপি ইউনুস আলী।

Advertisement

এই আসনে জামায়াতের বড় ভোট ব্যাংক রয়েছে। আগামী দ নির্বাচনে এ আসনে জামায়াত সাবেক আমীর মতিউর নিজামীর ছেলে নাজির মোমেনের নাম বেশ কিছুদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে। তবে বেড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ডা. আব্দুল বাছেত খানকে প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।

জামায়াতের ভোট ব্যাংক ছাড়াও অধ্যাপক আবু সাইয়িদের ব্যক্তিগত অনুসারিদের ভোট ব্যাংক রয়েছে। তিনি যদি ভোটে প্রার্থী হন তাহলে নৌকার সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতাই ভোটের আগেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দু’ভাইয়ের বিরোধ মীমাংসার তাগিদ দিয়েছেন।