শহীদুল্লার কাছে অর্ধকোটি চাঁদা চেয়েছিল সন্ত্রাসীরা

SHARE

সাবেক দুদক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লা

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চট্টগ্রাম প্রতিনিধি,শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৩ : পুলিশ হেফাজতে মারা যাওয়া সাবেক দুদক কর্মকর্তা ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লার কাছে দেড় মাস আগে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় মামলা করেছিলেন তিনি। এর ১১ দিন পর তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি করা হয়, যেটিকে মিথ্যা বলছে তাঁর পরিবার। মামলার সমন নোটিশ গোপন করে বের করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সেই পরোয়ানাতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের এক ঘণ্টার মধ্যে প্রাণ হারান শহীদুল্লা। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রভাবশালী আসাদুজ্জামান আসাদ ও মো. জসীম উদ্দিন মিলে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেন।

Advertisement

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুদকের সাবেক উপপরিচালক শহীদুল্লার স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ারের বাবা আনোয়ার মতিনের কাছ থেকে ১১ শতক জায়গা পান তারা। সেখানে সাতটি ঘর তুলে ভাড়া দেন শহীদুল্লা ও তাঁর স্ত্রী। জায়গাটি দীর্ঘদিন ধরে দখলের চেষ্টা করে আসছেন একই এলাকার প্রভাবশালী আসাদুজ্জামান আসাদ। তাঁর সহযোগী হিসেবে ছিলেন এস এম জসিম, লিটন, শাহীন ও শাহজাহান। তারা পেরে না উঠে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দাবিদার জসীম উদ্দিনকে জায়গাটির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়োগ করেন।

 

গত ১৮ আগস্ট শহীদুল্লার তিনটি ভাড়া ঘর দখলের চেষ্টা করেন তারা। এ সময় শহীদুল্লা ও তাঁর স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ার গিয়ে বাধা দিলে তাদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন জসীম ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গো। শহীদুল্লা ৯ জনকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গৃহিণী তানিয়াকে শহীদুল্লার বাসার গৃহকর্মী সাজিয়ে গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন জসীম ও তাঁর সহযোগীরা।

মামলার বাদী রণি আক্তার তানিয়া সমকালকে বলেন, মামলায় কী লেখা হয়েছে, আমি জানি না। আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি। আমি কখনও শহীদুল্লার বাসায় কাজ করিনি। ওই বাসা চিনিও না। মামলাটি সাজানো ছিল। মামলার আইনজীবী মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, বাদী যেভাবে বলেছেন, সেভাবে মামলা করেছি। বাদী মিথ্যা তথ্য দিলে তো এ দায় আমার নয়।

Advertisement

অভিযোগ প্রসঙ্গে জসীম উদ্দিন বলেন, জায়গাটি ছিল এস এম জসিমের বাবা মৃত ফিরোজ বক্সের। এটি ভুলে শহীদুল্লার স্ত্রীর নামে বিএস জরিপ হয়। ওই জায়গার পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আমাকে দিয়েছেন এস এম জসিম ও তাদের লোকজন। আমি কখনও শহীদুল্লাকে দেখিনি। তাঁর কাছ থেকে চাঁদাও চাইনি। অভিযোগের বিষয়ে এস এম জসিমের নম্বরে ফোন করা হলে তিনি নিজেকে করিম পরিচয় দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

শহীদুল্লার ছেলে নাফিস শহীদ বলেন, আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের বিরোধ। তিনি জসীমকে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে নিয়োগ করেছেন। তাঁর সাঙ্গপাঙ্গো মিলে আমাদের জায়গা দখলের চেষ্টা করেন। দখল করতে না পেরে আমার বাবার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমার বাবার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। মামলার সমন গোপন করে আদালত থেকে ওয়ারেন্ট জারি করিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমার বাবাকে হত্যা করেছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, শহীদুল্লার সঙ্গে আমার বিরোধ ছিল। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে যে নারী মামলা দায়ের করেছেন, তাঁকে আমি চিনি না। আমার সঙ্গে তাঁর কখনও দেখা হয়নি। আসাদের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালে আদালতের আদেশ জাল করার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া শহীদুল্লার স্ত্রী ফৌজিয়া আনোয়ারের করা একটি চেক প্রতারণার মামলায় কারাগারে যান তিনি।

এ ব্যাপারে চান্দগাঁও থানার ওসি খাইরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি মিথ্যা নাকি সত্য– এটি আদালত বিবেচনা করবেন। কারণ, মামলাটি দায়ের হয়েছিল আদালতে। আমরা শুধু আদেশ পালন করেছি।

Advertisement

পুলিশের দুই এএসআই প্রত্যাহার

ছৈয়দ মোহাম্মদ শহীদুল্লাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় চান্দগাঁও থানার এএসআই মো. ইউসুফ আলী ও এ টি এম সোহেল রানাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এম এ মাসুদ স্বাক্ষরিত এক আদেশে প্রত্যাহার করে তাদের দামপাড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। এর আগে বুধবার সাবেক দুদক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে সিএমপি।