ভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে ব্যবহার করে বিএনপির অপপ্রচারের পর্দা ফাঁস (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি), আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ,বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) প্রকাশিত খবর বলে একটি নিবন্ধকে হাতিয়ার বানিয়ে বিএনপির সরকারবিরোধী প্রচারণার পর্দা ফাঁস হয়ে গেছে। ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ – এমন শিরোনামে একটি খবর প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া, যা নিজেদের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ফলাও করে প্রচারণা চালাচ্ছে বিএনপি। পিটিআইয়ের বরাতে টাইমস অব ইন্ডিয়া নিউজটি করলেও পিটিআইয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের দাবি, আদৌ এ ধরনের কোনো নিবন্ধ তারা করেনি।

Advertisement

‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ - এমন শিরোনামে একটি খবরকে পিটিআই-এর বলে দাবি করে বিএনপি তাদের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রচারণা চালায়। অথচ পিটিআই আদৌ এ ধরনের কোনো নিবন্ধ যে প্রকাশ করেনি, তা নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ – এমন শিরোনামে একটি খবরকে পিটিআই-এর বলে দাবি করে বিএনপি তাদের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে প্রচারণা চালায়। অথচ পিটিআই আদৌ এ ধরনের কোনো নিবন্ধ যে প্রকাশ করেনি, তা নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
একটি দেশের নির্বাচনের আগে ভারতীয় গণমাধ্যমকে অপপ্রচারের অংশ হিসেবে ব্যবহার করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, ভারতের কিছু গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে আগামীতে আরও গুজব রটাতে পারে পাকপন্থি বেশকিছু রাজনৈতিক দল এবং তাদের সহযোগী মিডিয়া হাউসগুলো। তাই শেষ পর্যন্ত গুজব থেকে সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন খোদ ভারতীয় সাংবাদিকরাই।
পিটিআই এবং গ্রহণযোগ্যতা
১৯৪৭ সালের ২৭ আগস্ট প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া বা পিটিআই নামে ভারতের সরকারি সংবাদ সংস্থাটির যাত্রা শুরু। শুধু ভারতে নয়, পিটিআই পরিবেশিত খবর বিশ্বের প্রায় সব দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে শতভাগ বিশ্বাসযোগ্য খবর হিসেবে নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
 
সরকারি সংবাদ সংস্থা হলেও, নিরপেক্ষভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ সব বিষয়ে শতভাগ সত্য তথ্য দিয়ে খবর প্রকাশ করায় সংবাদ সংস্থাটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। ভারতের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশেও সমানভাবে গ্রহণযোগ্য পিটিআই। 
 
সরকারি বার্তা সংস্থা হওয়ায় ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে – এমন প্রায় সব দেশের সরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে পিটিআই। ফলে খবর প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তথ্য নিশ্চিত এবং দায়িত্বশীল থাকতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
 
বিশ্বাসযোগ্যতাকে অপপ্রচারের হাতিয়ার বানিয়ে ধরা পড়ল বিএনপি!
 
পিটিআই-এর গ্রহণযোগ্যতাকে হাতিয়ার করে নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে গিয়েই ধরা পড়ে গেছে বিএনপি – এমনটাই বলছেন ভারতের গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা। 
তারা বলছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকায় ‘একটি পিটিআই প্রতিবেদন: বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। পরে সেই প্রতিবেদনের সূত্র দিয়ে এবং মূল প্রতিবেদনের লিংক নিজেদের ফেইসবুক পেইজের কমেন্টের ঘরে দিয়ে পিটিআই-এর বিশ্বাসযোগ্যতা ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচারণা শুরু করে বিএনপির মিডিয়া সেল। 
 
পিটিআই যেহেতু রাজনৈতিক নিবন্ধ প্রকাশ করে না, তাই এ ধরনের একটি প্রতিবেদন তাদের বরাত দিয়ে প্রকাশ হয়েছে বলে খবর বের হতেই সব মহলে শুরু হয় তুমুল হৈ-চৈ।

Advertisement

 
যেভাবে পর্দা ফাঁস!
সময় সংবাদের পক্ষ থেকে সরাসরি যোগাযোগ করা হয় পিটিআই-এর দায়িত্বশীলদের সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘খবরটি পিটিআই-এর নয়। কারণ পিটিআই এ ধরনের কোনো নিবন্ধ প্রকাশ করে না। বিষয়টি নজরে রাখা হয়েছে। 
 
পিটিআই-এর নাম ব্যবহার করে এমন রাজনৈতিক অপপ্রচারে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। 
 
খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, এই ধরনের রাজনৈতিক নিবন্ধ প্রকাশ করে না পিটিআই। আর প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে তো নয়-ই।
 
আরও জানা যায়, ভারতের ‘দ্য ওয়্যার’ নামে একটি সংবাদমাধ্যম মোবাশ্বার হোসেন নামে নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করে। ওই প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘কেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে’। প্রবন্ধের ভেতরে পিটিআই-এর পরিবেশন করা একটি ছবি ব্যবহার করা হয়। আর ছবিটি ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এ ছবি দিয়ে পুরো নিবন্ধটিকে পিটিআই-এর বলে বিশ্বাসযোগ্য করার চেষ্টা করেছে বিএনপি।
 
এ ঘটনায় বিস্ময় এবং ক্ষোভ প্রকাশ করছেন খোদ ভারতীয় সিনিয়র সাংবাদিকরা। তাদের দাবি, এভাবে একটি রাষ্টীয় গণমাধ্যমকে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার্থে ব্যবহার করা গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে ভারতের বর্ষীয়ান সাংবাদিক সুবীর ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রচার করবে – এটা নতুন নয়। তবে সেই খবরের সত্যতা কিংবা বিকৃত করে প্রচার করাটা অপরাধ।’ 
 
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দ্য ওয়্যারের প্রতিবেদন থেকে নেয়া একটি নিবন্ধকে এভাবে পিটিআই-এর বরাত দিয়ে প্রকাশ করার পরও সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম দুঃখ প্রকাশ করেনি।’ 
 
এ বিষয়ে কলকাতা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক স্নেহাশীষ সুর বলেন, ‘গণমাধ্যম গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ। আর গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান উৎসব ভোট। তাই যেকোনো দেশের ভোটের সময় অন্য একটি দেশের গণমাধ্যমের খবরকে ইস্যু করাটা দুঃখজনক। সবাইকে এ বিষয়ে অনেক সচেতন হতে হবে।’

Advertisement

 
সম্প্রতি সময় সংবাদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ভারতের আরেক বর্ষীয়ান সাংবাদিক সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত দাবি করেছিলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে গুজবের বাক্স খুলবে পাকিস্তানপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো। সিঙ্গাপুরে বৈঠকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গুজব রটানোর দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অখ্যাত পত্রিকা ও ফেইসবুক পেইজ।’