ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,শুক্রবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজির বেশি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনাটি সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) সীমাবদ্ধ রাখার ইচ্ছা ছিল কর্মকর্তাদের!
Advertisement
শুধু তাই নয়, এসির পাশে গরম বাতাস বের হওয়ার ভাঙা জায়গা দিয়ে মানুষ ঢোকার আশঙ্কা ও অনেক আগে সিলিংয়ের ওপর থেকে একজনকে আটকের গল্প বানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিজেদের দায় এড়ানোর চেষ্টা অবাক করেছে তদন্তকারী সংস্থাকেও।বিমানবন্দর থানা, উত্তরা বিভাগসহ আইনশৃাঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই মিলেছে। এমনকি এজাহার যেভাবে করা দরকার ছিল তাতেও কর্মকর্তারা তেমন সহযোগিতা করেনি বলে জানা গেছে।
মামলার পর চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাইকে জিজ্ঞাসার জন্য আটক করেছিল বিমানবন্দর থানা। দীর্ঘ সময় প্রায় ৫টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় পালাক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তবে কেউই এর সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেনি।
যদিও পুলিশের উত্তরা বিভাগ জানিয়েছে, মূলহোতা হিসেবে চিহ্নিত করা সাইদুল ইসলাম শাহেদ ও শহিদুল ইসলাম এবং সিপাই মো. নিয়ামত হাওলাদার মিলে গুদাম থেকে ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণ সরিয়েছেন। এ নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে।
পুলিশ আগেই জানিয়েছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে রাজস্ব দুই কর্মকর্তা ও এক সিপাইয়ের বিভিন্ন সময়ে এবং ঘটনার আগে ও পরে বিমানবন্দর চত্বরে অবস্থান নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্বর্ণ হারানো বিষয়ে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের পর থেকে রাখা বিভিন্ন সময়ের জব্দ করা স্বর্ণের অনেকগুলো খোয়া গেছে আলমিরা থেকে। সুযোগ বুঝে যে যখন পেরেছে আত্মসাৎ করেছে।
কিন্তু গোডাউনের দায়িত্বে থাকা যে দুজন কর্মকর্তাকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাদের একজন সাইদুল ইসলাম শাহেদ, যিনি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে দায়িত্বে আছেন আরেক কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম। কিন্তু ২০২০ সালের পর থেকে স্বর্ণ উধাওয়ের ঘটনা শুরু হলে ২০২০ ও ২০২১ সালে যারা গোডাউনের দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরকে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হয়নি।
এদিকে গোডাউনে নিরাপত্তা হিসেবে কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রযুক্তির যে ব্যবস্থা থাকার কথা ছিল তাতেও দুর্বলতা দেখতে পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। ঘটনার পর একজন অভিজ্ঞ সাব ইন্সপেক্টরকে পর্যবেক্ষণে পাঠানোর জন্য কাস্টমস কর্মকর্তারা থানায় কল করেছিলেন। এছাড়া পর্যবেক্ষণে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, পরিত্যক্ত বা অবহেলিত অবস্থায় রাখা হয়েছিল এসব সম্পদ। পাশেই মূলবান সম্পদ রাখার গোডাউন থাকলেও সেখানে রাখেননি তারা।
শোনা যাচ্ছিল মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতেই জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার দেখাতে পারে বিমানবন্দর থানা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঠিক সেই রাতেই মামলা হস্তান্তর করা হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কাছে।
এতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় ও কাস্টমসের কর্মকর্তাদের অনেকের মন্তব্য, অপরাধীদের হাত এতাটাই শক্তিশালী যে, থানা পুলিশ এ মামলা পরিচালনায় ব্যর্থ হবে। এমনকি সঠিকভাবে তদন্ত হলে এমন ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের নাম উঠে আসবে তাতে থানা কর্তৃপক্ষই বিব্রত হতে পারে। এজন্যই ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
তবুও অনেকেই বলছেন, ধামাচাপা দিতেই গোয়েন্দা পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে মামলার দায়িত্ব। কিন্তু এমন সব সন্দেহ বা ধারণা উড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
Advertisement
ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনার সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের কেউ থাকলেও তাকে খুঁজে বের করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘চুরির সঙ্গে জড়িত শীর্ষ পর্যায়ের কেউ থাকলেও আমরা খুঁজে বের করব। সিসি ক্যামেরা নষ্ট ছিল কিংবা গুদাম থেকে সিসি ক্যামেরা গায়েব হয়ে গেছে— এ বিষয়টিও তদন্তে আনা হবে। অপরাধ তো অপরাধই। সে যত বড় নেতা কিংবা কর্মকর্তাই হোক আপরাধীকে আমরা ছাড় দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগেও ডিবি কাউকে ছাড় দেয়নি, ভবিষ্যতেও দেবে না। ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরির ঘটনায় যত বড় কর্মকর্তাই জড়িত থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করা হবে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর বিমানবন্দরের ঢাকা কাস্টম হাউজের গুদামে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি, অর্থাৎ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আসা ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে চারজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও চারজন সিপাই।’
Advertisement
গত রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজির বেশি স্বর্ণ চুরির ঘটনা ঘটে। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ কোটি টাকা। মূলত এসব স্বর্ণ যাত্রীদের কাছ থেকে জব্দ করার পর কাস্টম হাউজের গুদামে রাখা হয়েছিল।