চকরিয়ায় পুলিশ-জামায়াতের সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণকারীর ছবি-ভিডিও ভাইরাল

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কক্সবাজারের চকরিয়া প্রতিনিধি ,বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৩ : কক্সবাজারের চকরিয়ায় যুদ্ধাপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফোরকানুর রহমান নামে জামায়াতের এক নেতা নিহত হয়।

Advertisement

গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ফোরকানের মরদেহ বুধবার (১৬ আগস্ট) ময়নাতদন্তের পর তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ঘটনার পর মঙ্গলবার এবং বুধবার দুপুরে দু’দফায় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, গায়েবানা জানাজা শেষে ফেরার পথে জামায়াত-শিবিরের লোকজন পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। এই সময় পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধুমাত্র টিআরশেল নিক্ষেপ করেছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে কোন ধরণের গুলি ছোঁড়া হয়নি। হলফ করে বলতে পারি পুলিশের বন্দুক থেকে রাউন্ড গুলিও বের হয়নি। কে বা কারা গুলি করেছে সেই বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।’

চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, সংঘর্ষে পুলিশের ৬ সদস্য আহত হয়েছে। তারপরও আমরা গুলি করিনি।

পুলিশ যদি গুলি না করলে তাহলে জামায়াত নেতা ফোরকানুর রহমান কার গুলিতে মারা গেলো এমন প্রশ্ন এখন সাধারণ মানুষের মুখে মুখে।

এদিকে বুধবার সকাল থেকে মঙ্গলবারের সংঘর্ষের কয়েকটি ছবি ও একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ৩৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে একটি মিছিল পৌর শহরের মহাসড়ক দিয়ে পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে বায়তুশ শরফ সড়কের দিকে যাচ্ছে। ওই সময় বেলাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে হেলমেট পরা অবস্থায় গুলি করতে দেখা যায়। মিছিলে ৬০ থেকে ৭০ জন ছিলেন।

ছবিগুলোতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা অস্ত্র ও লাটিসোঁটা হাতে দৌঁড়াচ্ছেন। প্রথম সারিতে অস্ত্র হাতে বেলাল উদ্দিন, পাশে তার ভাই প্রবাসী মিরাজ উদ্দিন। তাঁদের পেছনে আরও ১০-১২ জন আছেন। তাঁদের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর ও তার অনুসারীদেরও দেখা যায়।

জানা গেছে, বেলাল উদ্দিন চকরিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি। পুলিশ ও জামায়াতের সাথে সংঘর্ষের সময় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বে যুবলীগ নেতা বেলালসহ ৬০/৭০ জন নেতাকর্মী হামলা চালায়। এসময় এলোপাতাড়ি গুলি চালায় বেলাল।

Advertisement

 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শাকিল আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, ‘সাঈদীর গায়েবানা জানাজাকে কেন্দ্র করে চকরিয়ায় সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরিহিত অস্ত্রধারীদের কোনো ভিডিও এবং ছবি এখন পর্যন্ত দেখিনি, তবে শুনেছি। পুলিশ অস্ত্রধারীদের খুঁজছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর গায়েবানা জানাজা পড়তে অনুমতি দেয়নি উপজেলা প্রশাসন। এরপর তিনবার জানাজার স্থান বদল করা হয়। সর্বশেষ চকরিয়া পৌরসভার নামারচিরিংগা এলাকার মামা-ভাগিনার মাজার-সংলগ্ন স্থানে গায়েবানা জানাজা পড়ার সিদ্ধান্ত হয়। জানাজা পড়তে বিকেল চারটার দিকে মানুষ মামা-ভাগিনার মাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। আবার অনেকে ফেরত আসছিলেন। ওই সময় বায়তুশ শরফ সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢোকেন চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শোভন দত্ত। ওই সড়ক দিয়ে তাদের যেতে দেখে জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দেন এবং ওসি ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার গাড়িতে হামলা করেন। পরে ২০-৩০ জন হেলমেট ও মুখোশ পরা ব্যক্তি ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ, মুখোশ পরা ব্যক্তি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে জামায়াত কর্মী ফোরকানুর রহমান নিহত হন।

কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া ফোরকান জামায়াতের চকরিয়া পৌরসভা শাখার একটি ইউনিটের সেক্রেটারী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে মাথায় হেলমেট পরে যুবলীগ নেতা বেলাল প্রকাশ্যে গুলি করছে। কিন্তু পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আমরা ফোরকান নিহতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবী করছি।’ তিনি বলেন, জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা গাড়ি ভাংচুর করেনি। উত্তেজিত সাধারণ মানুষ ভাংচুর করেছে।

এদিকে সংসদ সদস্য জাফর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জামায়াত মিথ্যাচার করছে। কোনো কারণ ছাড়া পরিকল্পিতভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ সংগঠনের কেউ ঘটনাস্থলে ছিলেন না। শোক দিবসের কর্মসূচি ও বন্যা কবলিতদের ত্রাণ সহায়তায় ব্যবস্থায় ছিলেন সকলেই। পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে জেনেই নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি।’

Advertisement

চকরিয়া ও পেকুয়ায় জামায়াত শিবিরের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার ঘটনায় ৬টি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী নিহত ফোরকানের স্ত্রী। অন্য মামলার বাদী পুলিশ সদস্যরা। সংঘর্ষের সময় ইউএনও, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড এবং ওসির গাড়িতে হামলা করা হয়েছিল।