ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,বুধবার, ১৬ আগস্ট ২০২৩ : মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসা দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের ডাক্তার এস এম মোস্তফা জামানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অবগত করে রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ওই চিকিৎসক।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) রাতে তিনি এই জিডি করেন।
জিডিতে ডাক্তার জামান জানান, তিনি বিএসএমএমইউয়ে হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। রোববার (১৩ আগস্ট) রাতে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী অসুস্থ অবস্থায় সেখানে ভর্তি হন। সাঈদী বিএসএমএমইউয়ের হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক চৌধুরী মেশকাত আহমেদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
সোমবার (১৪ আগস্ট) সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদী মৃত্যুবরণ করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিমের একজন সদস্য হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও ইউটিউবে বিভিন্ন আইডি থেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
জিডিতে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে কতিপয় ব্যক্তিদের আচরণে ভীত ও শঙ্কিত। কয়েকটি ফেসবুক ও ইউটিউব পেজের ব্যবহারকারী এবং তাদের অনুসারীরা যেকোনো সময় আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের খুন-জখমসহ বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। মূলত এসব বিষয় উল্লেখ করে নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেন তিনি।
ধানমন্ডি থানার ডিউটি অফিসার এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেননি তিনি।
Advertisement
এদিকে থানায় উপস্থিত হয়ে জিডি করে ডাক্তার জামান বলেন, আমরা একজন সাধারণ রোগীকে যেভাবে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করি, তাকেও (সাঈদী) সেভাবেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার চিকিৎসায় কোনো ধরনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। আমরা তাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসা দিয়েছি। কোনো ধরনের ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে সাঈদীর চিকিৎসার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুর তিনটায় সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাঈদীর মৃত্যু হয়।
রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বুকে ব্যথাজনিত সমস্যার কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে তার ইসিজিসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় পাঠানো হয়। রোববার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয় সাইদীকে।
২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় সাঈদীকে। পরে ওই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
Advertisement
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগের মধ্যে দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এতদিন ওই সাজা ভোগ করছিলেন তিনি।
ডাক্তার এস এম মোস্তফা জামান (ছবি : সংগৃহীত)