সিনহা হত্যার তিন বছর, দ্রুত রায় কার্যকর চায় পরিবার (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কক্সবাজার-টেকনাফ প্রতিনিধি, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০২৩ : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার বহুল আলোচিত ঘটনার তিন বছর আজ (সোমবার)। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সিনহা। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

Advertisement

আলোচিত এ হত্যা মামলা মোট ১৫ আসামির মধ্যে আদালত টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাস ও বাহারছড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ লিয়াকত আলীকে (বরখাস্ত) মৃত্যু দণ্ডাদেশ এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত ও পুলিশের তিন সোর্সসহ ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আর মামলা থেকে সাত পুলিশ সদস্যকে বেকসুর খালাস দেন। বর্তমানে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন আসামিরা।

এদিকে ভাইকে হারানোর তিন বছরে এসে হত্যাকারীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকরের আশায় দিন গুনছেন শাহরিয়ার ফেরদৌস। তিনি বলেন, ‘যারা আমার ভাইকে হত্যা করেছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতের সব প্রক্রিয়া শেষ করে তাদের যেন ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। আমি সেই দিনের জন্য আশায় বুক বেঁধে আছি, যেদিন এদের ফাঁসি হবে আর আমার পরিবারের সবার মন কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।’

রোববার (৩০ জুলাই) কথাগুলো বলছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে যান। চাকরিজীবনে অসম্ভব মেধাবী ও বিচক্ষণ অফিসার ছিলেন তিনি। তার বাবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মোহাম্মদ এরশাদ খান; তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৭ সালে তিনি মারা যান।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে সিনহা ছিলেন মেজো। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে। অবসর গ্রহণের পর থেকে সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ ‘জাস্ট গো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য বিভিন্ন ডকুমেন্টারি ভিডিও তৈরির কাজ শুরু করেন। বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছা ছিল তার প্রবল। কিন্তু তার সে ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ৯টায় কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। এই হত্যাকাণ্ডে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।

Advertisement

মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ, বিচক্ষণ, উদ্ভাবনশীল এবং একজন চৌকস স্বাধীনচেতা সেনা অফিসার। তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্র কর্তৃক ঘোষিত অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফের সদস্যও ছিলেন। তার জন্ম ১৯৮৪ সালের ২৬ জুলাই।

সিনহা ১৯৯৯ সালে ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং ২০০১ সালে রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন।

২০০৩ সালের ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৫১তম লং কোর্সে যোগ দেন সিনহা। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি কমিশন লাভ করেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি-বিএমএ থেকে ২০০৪ সালে ব্যাচেলর অব সাইন্স ডিগ্রিতে ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করেন। চাকরি জীবনে তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গিন যোদ্ধা (আন্তঃইউনিট সঙ্গিন যুদ্ধ প্রতিযোগিতা-২০০৭), আন্তঃইউনিট বেয়নেট ফাইটিং প্রতিযোগিতা ২০০৭ এর শ্রেষ্ঠ প্রতিযোগী হন।

২০০৯ সালে সিনহা ক্যাপ্টেন পদে ‘স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের প্রটেকশন কোর্স-৫০’ সম্পন্ন করেন। ২০১১ সালের ১৩ মে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘ভিআইপি প্রটেকশন কোর্স’ সম্পন্ন করেন। ২০১৩ সালে তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আইভোরি কোস্টে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত এসআই অ্যান্ডটি থেকে ‘বিপিসি-১৯’ কোর্স সম্পন্ন করেন।

২০১৫ সালে সাভারের বাংলাদেশ পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং সেন্টার থেকে ‘সিভিল-মিলিটারি রিলেশন অ্যান্ড গুড গভর্ন্যান্স’ সার্টিফিকেট অর্জন করেন সিনহা। একই বছর বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি) থেকে ‘ওয়ার্কশপ অব ডিজেস্টার অ্যান্ড হিউম্যান সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট’ সার্টিফিকেট অর্জন করেন। পরের বছর ডিএসসিএসসি থেকে ‘মাস্টার অব সায়েন্স ইন মিলিটারি স্ট্যাডি’ এবং ‘পিএসসি’ কোর্স সফলতার সঙ্গে শেষ করেন।

Advertisement

মেজর সিনহা ছিলেন সংস্কৃতিমনা মেধাবী ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। চাকরি থেকে অবসর নিয়ে বিভিন্নমুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। মায়ের ভাষ্যমতে, মেজর সিনহা বিশ্বভ্রমণের প্রস্তুতি নিয়েও করোনা মহামারির কারণে অভিযান পিছিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি প্রিয় মাতৃভূমির সৌন্দর্য বিশ্বদরবারে তুলে ধরার জন্য ‘জাস্ট গো’ নামের প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করছিলেন। এ জন্য ফিল্ম তৈরিতে পারদর্শী স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। প্রথমে প্রায় আড়াই মাস রাজশাহীতে শুটিং শেষ করে ২০২০ সালের ৩ জুলাই কক্সবাজার যান প্রামাণ্যচিত্রের পরবর্তী চিত্র ধারণ করতে।