কুড়িল-বিশ্বরোড-আব্দুল্লাহপুর ১১ কিলোমিটার সড়কে সক্রিয় ৭ অপরাধী চক্র (ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,রোববার, ২৩ জুলাই ২০২৩ : রাজধানীর কুড়িল থেকে আব্দুল্লাহপুর। এগারো কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই সড়কপথে সক্রিয় রয়েছে অন্তত সাত ধরনের অপরাধী চক্র। এসব চক্রের হাতে প্রতিদিন সর্বস্ব খোয়াচ্ছে মানুষ। ছিনতাইবিরোধী বিশেষ অভিযানের মধ্যেও থামছে না চক্রের দৌরাত্ম্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চালকবেশী ডাকাত, ভাসমান ছিনতাইকারী, পকেটমার, বিমানবন্দরে যাত্রীবেশী ডাকাত, কয়েনপার্টি, অজ্ঞানপার্টিসহ আরও একাধিক চক্র এই সড়ক ঘিরে সক্রিয়। বিশেষ করে বিমানবন্দর এলাকায় বিদেশ ফেরত যাত্রী এবং এই পথে চলাচলকারী মানুষ এদের খপ্পরে পড়ছেন বেশি।

বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় খিলক্ষেতের কাওলা এলাকায় যানজটে আটকে ছিল ভিক্টর পরিবহণের একটি বাস। ওই বাসে জানালার পাশে বসা যাত্রী কল্পনা রানীর একটি মোবাইল ফোন থাবা দিয়ে নিয়ে যায় এক ছিনতাইকারী। ওই বাসের আরেক যাত্রী আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গত ৬ মাসে তিনি দুবার এই সড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। একবার মোবাইল ফোন, আরেকবার মানিব্যাগ নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। একাধিক উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় এই সড়কে যানজট বেশি হয়। তাই যাত্রীদের পড়তে হয় ছিনতাইকারী, পকেটমারসহ অপরাধী চক্রের কবলে।

কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় ছিনতাই চক্রের সদস্যরা প্রাইভেটকারসহ ওতপেতে থাকে। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তারা প্রাইভেটকারে তুলে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়।

৮ জুলাই প্রবাস থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন নেহারুল নামের এক যাত্রী। তিনি বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে পার্কিং এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তখন তার সঙ্গে পরিচয় এবং সখ্য গড়ে তোলে ডাকাত বারেক। এরপর নিজেকে একই এলাকার দাবি করে গাড়ি শেয়ার করার প্রস্তাব দেয়। এক সুযোগে তাকে গাড়িতে তুলে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয়।

একইভাবে ১১ জুলাই ইসমাইল হোসেন নামের এক যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেয় ডাকাত আমির। এই ঘটনায় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ১৪ জুলাই আমির এবং বারেককে গ্রেফতার করে। এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এ ধরনের অপকর্ম করে আসছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিমানবন্দর এলাকায় অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

ট্রাস্ট ব্যাংকের নরসিংদীর মাধবদী শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার সৈয়দ মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি থাকেন বাড্ডা এলাকায়। ৬ মার্চ তিনি কুড়িল বিশ্বরোডের কুড়াতলি থেকে একটি প্রাইভেটকারে উঠেন। পথে তাকে জিম্মি করে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তিনি খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

খিলক্ষেত থানার ওসি কাজী সাহান হক যুগান্তরকে বলেন, গ্রেফতাররা সবাই পেশাদার অপরাধী। এদের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও খুনের একাধিক মামলা রয়েছে।

Advertisement

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কে ডিউটি করা ট্রাফিক পুলিশের একাধিক সদস্য যুগান্তরকে জানিয়েছেন, খিলক্ষেত, কাউলা, এয়ারপোর্ট, জসীমউদ্দীন, আজমপুর, হাউজ বিল্ডিং, আবদুল্লাপুর এলাকায় প্রায়ই অপরাধীদের খপ্পরে পড়েন যাত্রীরা। বাসে উঠার সময় কারও মোবাইল, মানিব্যাগ নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। আবার কখনো যানজটে আটকে থাকা বাসের জানালার পাশ দিয়ে টানা পার্টির সদস্যরা যাত্রীদের মোবাইল ফোনসহ জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এই রুটে দিন দিন অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

আসমানী পরিবহণের হেলপার জসিম যুগান্তরকে বলেন, এই রুটের অপরাধীদের আমরা চিনি। কিন্তু রাস্তায় চলাচল করতে হয়, এই কারণে তাদের কিছু বলি না। অনেক সময়, এসব অপরাধী বাসে উঠে। তখন পকেট সাবধান, মোবাইল সাবধান, এসব কথা বলে আমরা আকার ইঙ্গিতে যাত্রীদের সতর্ক করে দেই। জসিম বলেন, এসব অপরাধীদের কাছে ব্লেড থাকে। ওরা টার্গেট করলে বুকে, পেটে, হাতে পোছ দিয়ে জখম করে।

আব্দুল্লাহপুরে এক ছিনতাইকারীর সঙ্গে কথা হয় যুগান্তরের। ১৮-১৯ বছর বয়সি ওই যুবক যুগান্তরকে জানায়, এই সড়কে খিলক্ষেত থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত ছিনতাইকারী, ডাকাত আর পকেটমারের তৎপরতা বেশি। আব্দুল্লাহপুর এলাকায় যারা ছিনতাই করে, তারা আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর এলাকা থেকে আসে। ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ ঘটিয়ে তারা দ্রুত এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

সূত্র জানিয়েছে, উত্তরা পূর্ব থানা, উত্তরা পশ্চিম থানা এবং বিমানবন্দর থানা এই তিনটি থানা এলাকায় ছিনতাইকারীদের আনাগোনা বেশি। আব্দুল্লাহপুরের অধিকাংশ ছিনতাইকারী টঙ্গী থেকে আসে।

উত্তরা পূর্ব থানার ওসি বলেন, ছিনতাই কমানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে ডিএমপির পক্ষ থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। ছিনতাইবিরোধী বিশেষ অভিযান চলমান রয়েছে। সাদা পোশাকে এমনকি আরও ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম যুগান্তরকে বলেন, অপরাধীদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। তবে চলাচলকারী যাত্রী এবং লোকজনকে সতর্ক হতে হবে। নিজের নিরাপত্তার দায়িত্বটা আগে নিজেকেই নিতে হবে।

Advertisement

ডিএমপির উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা মহানগরীকে অপরাধমুক্ত রাখতে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অপরাধতো একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়। তাই, স্ব স্ব ক্ষেত্রে সচেতন থাকলে এসব অপরাধীদের কবল থেকে রেহাই মিলবে।