লোহার বাক্সে রেলের টাকা গেল কোথায়? (ভিডিও)

SHARE

 

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),চিলাহাটি প্রতিনিধি, শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০২৩ : রেলওয়ের টাকা লেনদেন সুরক্ষিত করতে সেই বৃটিশ আমল থেকে লোহার বাক্স ব্যবহার করা হয়। প্রথমে স্টেশনের আয়ের টাকা স্টেশন মাস্টারের উপস্থিতিতে বিশেষ ব্যাগে ভরে সিলগালা করা হয়। এরপর সেই ব্যাগগুলো রাখা হয় লোহার বাক্সে। পরে টাকা ভর্তি বাক্স পাঠানো হয় ক্যাশ শাখায়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ক্যাশ সেফ পদ্ধতি। লোহার বাক্স এমনভাবে তৈরি করা যে, ব্যাগগুলো বাক্সে রাখার পর মাঝপথে বের করা কোনো সুযোগ নেই। যদিও বিভিন্ন সময় স্টেশনের আয়ের টাকা এই পদ্ধতিতে পাঠাতে গিয়ে চুরির ঘটনা ঘটছে।

Advertisement

অনুসন্ধান বলছে, উত্তরের জেলা নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশনে টাকা খোয়ানোর ঘটনা ঘটেছে অন্তত ৬ বার। কখনো টাকা কম পাঠানো, কখনো বা টাকা রেখে ফাঁকা ব্যাগ পাঠানো হয়। আবার কখনো গায়েব করা হয় পুরো টাকার ব্যাগ। কোনো কোনো স্টেশনে আলমারি থেকে টাকা চুরির ঘটনাও ঘটছে। যে অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট স্টেশনের মাস্টারের বিরুদ্ধে। বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও তেমন কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে।

তথ্য বলছে, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ২৩৮টি স্টেশনের মধ্যে ১৭০টিতে এখনও বৃটিশ পদ্ধতিতে বাক্সে করে টাকা পাঠানো হয়। প্রযুক্তির এই যুগেও অনলাইন কিংবা ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা যায়নি। শুধু বৃটিশ পদ্ধতিতে বিভিন্ন স্টেশনের আয়ের টাকা পাঠানো হয় না, রেলওয়ের অনেক কিছুই চলে বৃটিশ পদ্ধতিতে। বারবার রাষ্ট্রীয় টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ক্যাশ শাখার কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, আমাদের এখান থেকে কোনোভাবেই টাকা চুরি বা খোয়ানোর সুযোগ নেই। কারণ বাক্সে করে যখন বিভিন্ন স্টেশন থেকে টাকাগুলো ক্যাশ শাখায় পাঠানো হয়। তখন হিসাব শাখাসহ কয়েকটি বিভাগের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাক্স ও ব্যাগগুলো খোলা হয়।

Advertisement

তিনি বলেন, চিলাহাটি স্টেশন থেকে যে টাকাগুলো পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে কিছু টাকা কম পাওয়া যায়। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি এবং সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারকেও জানানো হয়। শুধু চিলাহাটি স্টেশন থেকেই কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে বলেও জানান তিনি।

পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যাশ সেফ পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো সময়সাপেক্ষ। বৃটিশ আমল থেকে যে পদ্ধতি চালু ছিলো, ডিজিটাল যুগে এসেও সেই প্রক্রিয়ায় টাকা পাঠানো হচ্ছে। এতে সুযোগ নিচ্ছেন কোনো কোনো স্টেশন মাস্টার। রেলের পূর্বাঞ্চলের মতো পশ্চিমাঞ্চলের সব স্টেশনে ব্যাংকিং চ্যানেল চালু হলে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড রোধ হবে এমনকি স্বচ্ছতাও বাড়বে বলে জানান তারা।

Advertisement

রেলওয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। সাধারণ মানুষের যাতায়াতে নির্ভরতার প্রতীকও। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আস্থার প্রতীক রেলওয়ের এই দুষ্ট চক্র নিয়ে কথা বলেছেন রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান। তিনি বলেন, এমন ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি বৃটিশ পদ্ধতির পরিবর্তন করে ব্যাংকিং চ্যানেল বা নগদের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন স্টেশনের আয়ের টাকা লেনদেন করা হবে।