ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি ,শনিবার, ০৮ জুলাই ২০২৩ : মুগদা মেডিকেল কলে হাসপাতালের বিছানা আর মেঝে এখন ডেঙ্গু রোগীর দখলে। প্রতিদিনই আসছেন নতুন রোগী। রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের।
Advertisement
হাসপাতালের নয় তলায় প্রায় দুশ রোগীর চিকিৎসা করছে মাত্র পাঁচজন নার্স। এদের মধ্যে ফ্লোরা হালদারের জ্বর ১০২। নমুনা পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। প্লাটিলেট নেমেছে সত্তর হাজারে। কিন্তু নার্স সংকটের কারণে ছুটি মিলছে না। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েও চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন ফ্লোরা।
তবে নিজের শারীরিক অবস্থা নিয়ে কিছু বলতে চাননি ফ্লোরা। শুধু বলেন, ‘এগুলা থাক ভাই। বলা লাগবে না।’
কত কঠিন পরিস্থিতিতে সেবা দিতে হচ্ছে তা জানালেন আরেকজন নার্স। তার কথায়, দেড় শতাধিক রোগীর চিকিৎসায় সকাল থেকে পাঁচজন কর্মরত রয়েছে।
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ও স্বজনদের দিন কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মেধ্যে। ছয়দিন হলো ডেঙ্গু আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতালে রেখে সুস্থ করেছেন এক মা। কিন্তু মুক্তি মিলেনি। কারণ, ডেঙ্গু জ্বরে এবার আক্রান্ত হয়েছেন মেয়ে। ছেলে মেয়ে নিয়ে আবারও হাসপাতালে ফিরেছেন তিনি।
মুগদা হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই এসেছেন জুরাইন, যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, মান্ডাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে। ২৪ ঘণ্টায় ১১১ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। জুলাইয়ের ছয় দিনে প্রায় সাড়ে পাঁচশ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।
রোগীরা বলছেন, বাড়িঘর পরিষ্কার রেখেও রক্ষা হচ্ছে না। রাস্তাঘাট খোড়াখুড়ি আর বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে এডিস মশার জন্ম নিচ্ছে।
কয়েকজন রোগী জানালেন, মশার ওষুধ সব সময় দেয় না। পানি জমে থাকে। সিটি করপোরেশন থেকে পরিষ্কার করতে আসে না। রাস্তাঘাট ভাঙা। বৃষ্টির পানি জমে মশার জন্ম হচ্ছে।
Advertisement
আর চিকিৎসকরা বলছেন, এবারের ডেঙ্গু ভয়াবহ। ঠিক সময়ে ডেঙ্গু ধরা না পড়লে রোগীদের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে কিডনিও বিকল করে দিচ্ছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ড. মো: এনায়েতুজ্জামান বলেন, ক্রিটিক্যাল ফেইজে জ্বর বা প্রাথমিক উপসর্গ কমে যায়। কিন্তু সঙ্গে কিছু নতুন উপসর্গ- বমি, পাতলা পায়খানা, শরীর ফুলে যাওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। এসব উপসর্গ সঠিক সময়ে যদি শনাক্ত করা না যায় তাহলে সমস্যা। এই সময়টা ২৪ থাকে ৪৮ ঘণ্টা। এর মধ্যেই রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা ছাড়া এই সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তাই নগরবাসীকে আরো বেশি সতর্ক হতে বলে বলেও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
Advertisement
এদিকে বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৬৬১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর ফলে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে গেল। আরও দুজনের মৃত্যুতে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেড়ে ৬৪।