স্বাধীনতার পর থেকে আত্মহত্যার চরম ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে ঝিনাইদহ পরিচিতি লাভ করেছে। ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের দফতরে ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত আত্মহত্যার কোনো রেকর্ড না থাকলেও এই সময়ে অপমৃত্যুর সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০০০ সালের পর আত্মহত্যা চেষ্টাকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও উন্নত চিকিৎসা ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কমে এসেছে মৃত্যুর হার।
পুলিশ ও হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী ২০১০ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩৮০ জন আর চেষ্টা করেছে ২১০৯ জন। ২০১১ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩০৯ জন, চেষ্টা করেছে ২৮৪৯ জন; ২০১২ সালে আত্মহত্যা করেছে ২৯৫ জন, চেষ্টা করেছে ২৫৮৩ জন; ২০১৩ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩১১ জন, চেষ্টা করেছে ২৬৩৯ জন; ২০১৪ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩০৩ জন, আর চেষ্টা করেছে ২৪০৯ জন এবং সর্বশেষ ২০১৫ সালে আত্মহত্যা করেছে ৩৬৩ জন আর চেষ্টা করেছে ২৬০০ জনের উপরে।
দেশের সবচেয়ে আত্মহত্যা প্রবণ এলাকা ঝিনাইদহে যারা আত্মহত্যা করেছেন বা চেষ্টা করেছেন তাদের অধিকাংশই নারী। এখনই এ বিষয়ে প্রতিরোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর আত্মহত্যা করে গড়ে ৩৫০ জন তবে চেষ্টা করে ২ হাজারেরও বেশি।
ঝিনাইদহ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান হাফিজুর রহমান জানান, এখানকার মানুষ খুব আবেগপ্রবণ বলে ঠুনকো কারণে আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যাকেই সকল সমস্যার সমাধান বলে মনে করে তারা। নারী নির্যাতন, পারবিারিক কলহ, সংসারে অশান্তি, অসুস্থতা, বাবা মার উপর অভিমান, প্রেম ঘটিত ব্যাপার, কৃষকের ঘরে কীটনাশকের সহজ লভ্যতা ও তুচ্ছ ঘটনায় আবেগ প্রবণ হয়ে এই জেলার মানুষ হরহামেশা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মুমিনুর রহমান বলেন, আত্মহত্যার কারণ উদঘাটন করে তা প্রতিরোধ করা যেতে পারে বলে মনে করেন। এ অভিশাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে দরিদ্রতা ও নিরক্ষরতা দূর করতে হবে এবং সামাজিকভাবে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।