টাকা না দিলে মেলে না সমাধান!

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি, শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩ :জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) আমার জন্ম তারিখ ও বাবা-মায়ের নাম ভুল রয়েছে। সংশোধন করতে রায়পুর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে এক বছর ধরে ঘুরছি। কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না। দিনের পর দিন হয়রানি করা হচ্ছে। দালাল চক্রকে যারা টাকা দেয় তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়। কিন্তু টাকা না দিলে কিছুই হয় না। রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের হাজিমারা আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দা মোহাম্মাদ আলী এমন অভিযোগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার রায়পুর উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে মোহাম্মাদ আলী যুগান্তরকে বলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনলাইনে এনআইডির ভুল সংশোধনের আবেদন করেছি। এ নির্বাচন কার্যালয়ে অন্তত ১০ বার এসেছি। আদালত থেকে এফিডেভিট করে আনার পরও সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র পাচ্ছি না। নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন-আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কার সঙ্গে দেখা করলে ভুল সংশোধন করা যাবে-তা বুঝতে পারছি না। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুরছি-কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। এনআইডি না থাকায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এতে আমার মন ভেঙে গেছে।

আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের ভেতরে-বাইরে ২০-১৫ জনকে জটলা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে কেউ নতুন ভোটার হতে এসেছেন। তবে অধিকাংশই জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুল সংশোধন করতে এসেছেন। কেউ কেউ দুই বছর বা আরও বেশি সময় তারা কার্যালয়ে ঘুরছেন। নিয়ম অনুযায়ী ৪৫ কার্য দিবসে এনআইডি সংশোধন করার কথা। বেশি জটিল হলে সংশোধন আবেদনপত্র জেলা কার্যালয়ে পাঠানোর কথা। ভুক্তভোগীরা জানান, ভুল সংশোধন ও নতুন ভোটার হওয়া নিয়ে এখানে চরম হয়রানি হতে হচ্ছে। একাধিকবার আসতে হচ্ছে। যারা দালাল চক্রকে টাকা দিচ্ছে তাদের সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়ে যাচ্ছে। আর যারা দালাল ধরছে না, তাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সোনাপুর ইউনিয়নের রাখালিয়া গ্রামের প্রবাসী শরীফ হোসাইন বলেন, আমার স্মার্ট কার্ডে ইংরেজিতে নাম ভুল হয়েছে। সংশোধনের জন্য ছয় বছর ধরে ঘুরছি। কিন্তু সমাধান হচ্ছে না।

Advertisement

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) লক্ষ্মীপুর জেলা সম্পাদক মাসুদ আলম ভুট্টু যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তাদের কারণেই বেশিরভাগ ভুল হয়েছে। লোকজনের নামের বানান ভুল করাসহ সব ভুল তারাই করেছেন। আর এ ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আর ভুল সংশোধন করতে গিয়ে মানুষ পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নির্বাচন কার্যালয়ের আন্তরিকতার ঘাটতিতে জনগণ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এনআইডিতে ভুল থাকায় পাসপোর্টসহ নানা কাজে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান (সদস্য) মামুন বিন জাকারিয়া বলেন, আমার কাছেও নানা অভিযোগ আসছে। সমস্যার দ্রুত সমাধানে নির্বাচন কার্যালয়কে অনুরোধ করা হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মারুফ বিন জাকারিয়া বলেন, কার্যালয়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সংশোধন হতে তাদের একাধিকবার বলা হয়েছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফয়সাল আলম যুগান্তরকে বলেন, মেঘনা পাড়ের বাসিন্দা (হাজিমারা আশ্রয়ণ কেন্দ্র) মোহাম্মাদ আলীর চেহারা ও বয়সের মধ্যে অনেক তফাৎ। মনে হয়-সংশোধন হবে না। এরপরও চেষ্টা করা হবে। তাকে আরও সময় অপেক্ষা করতে হবে। লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা পড়ে। ভুল সংশোধনসহ নানা সমস্যা নিয়ে আবেদন করা হয়। আবেদনের সঙ্গে সব ধরনের কাগজপত্র ঠিক থাকলে ছোটখাটো ভুল দ্রুত সংশোধন করে দেওয়া হয়। বড় ভুল হলে তদন্ত করতে হয়। এজন্য বেশি সময় লাগে।

Advertisement