ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ঢাকা প্রতিনিধি,শনিবার, ১৭ জুন ২০২৩ :মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ছিলেন একজন সাধারণ কর্মচারী। দুর্নীতির অভিযোগে সেখান থেকে চাকরিচ্যুতও হন তিনি। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম তার। তবে ভাগ্য বদলাতে বেশি সময় লাগেনি। সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) আসনে এমপি হয়েই খুলে গেছে তার ভাগ্য। এ পদটিকে আলাদিনের চেরাগের মতো ব্যবহার করেছেন তিনি। সামান্য কর্মচারী থেকে অল্পদিনেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমপি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
তার দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০ বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে শতগুণ। ওই হিসাবের বাইরে আদতে তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, হলফনামায় যা আছে তার চেয়ে বেশি সম্পত্তি আছে এমপি রতনের। নিজের এলাকায় সংখ্যালঘুসহ অন্যদের জায়গা দখল করে রাজপ্রাসাদের মতো ‘হাওড় বাংলা’ বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। এর বাইরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলকায় তার আরও ১২টি বাড়ি রয়েছে বলে যুগান্তরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জমি দখল ছাড়াও অর্থ আত্মসাৎ, নানা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি ক্যাসিনোকাণ্ডেও নাম এসেছে ওই এমপির। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক। তাকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে দুদকের তদন্ত আলোর মুখ দেখছে না। এদিকে গত ৪ বছরেও এমপি রতনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তার নির্বাচনি এলাকায়। যদিও এমপি রতনের দাবি, তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। জমি দখলসহ তার বিরুদ্ধে করা নানা অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
নির্বাচনি এলাকা ঘুরে জানা যায়, একজন সাধারণ কর্মচারী থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তাকে প্রায়ই প্রকাশ্যে বলতে শোনা যায় তিনি পারিবারিকভাবেই হাজার কোটি টাকার মালিক। মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ধর্মপাশার পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামে দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রতন দ্বিতীয়।
তিনি সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৯৯৩ সালে পাওয়ার টেকনোলজিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। দীর্ঘদিন চাকরি না পেয়ে বেকার জীবন কাটান। পরে জগন্নাথপুরে ২০০৩ সালে বেসরকারি টেলিফোন সংস্থায় যোগ দেন। কিছুদিন পর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
অবশেষে ২০০৮ সালে তার হাতে উঠে আলাদিনের চেরাগ এমপি পদ। এরপর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে তার সম্পদ বেড়েছে পাগলা ঘোড়ার মতো। ২০০৮ থেকে ২০১৮ এই দশ বছরে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কি পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে তার হিসাব নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী মাহমুদা হোসেন লতা ৪০ তোলা স্বর্ণের মালিক। তার কৃষিজমি ছিল ৩.৯৩ একর। অকৃষি জমি ১.১৫ একর। তবে স্ত্রীর কোনো আয় নেই। নিজের মোট আয় ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ টাকা। মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৩২২ টাকা। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় তিনি ৫২৩ দশমিক ২৭ একর কৃষিজমির কথা উল্লেখ করেন। মাত্র দশ বছরে ওই কৃষি জমি ৩.৯৩ একর থেকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৫২৩ একর হয়েছে। এর বাইরে অকৃষি জমির পরিমাণও বেড়ে ৮ দশমিক ২৬ একর হয়েছে।
এছাড়া হলফনামায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট, নিজের ও অংশীদারত্বের তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার কথা উল্লেখ করেন এমপি রতন। যদিও বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
‘হাওড়বাংলা’ কেলেঙ্কারি : এমপি রতন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার নিজ গ্রামে গড়েছেন বিশাল অট্টালিকা, নাম দিয়েছেন ‘হাওড় বাংলা’। বাড়িটি যে জায়গায় নির্মিত হয়েছে, সেখানে ওই এলাকার দুই ব্যক্তির ৬২ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জমির মালিকদের অভিযোগ, ‘হাওড় বাংলা’র সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে গাছতলা গ্রামের বাসিন্দা আলতু মিয়ার ৩২ শতক এবং পাইকুরাটি গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ রঞ্জন সরকারের ৩০ শতক জমি আছে। আলতু মিয়ার জমির ৮ শতাংশ জায়গায় এমপি রতন তার এক বোনকে একটি টিনশেড ঘর করে দেওয়ার কথা বলে ২০০১ সালে জমি কিনতে চেয়েছিলেন। রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার সময় আলতু মিয়াকে ৩০ হাজার টাকা দেবেন বলে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ৮ শতাংশের টাকা তো দেনইনি, উলটো আগের ৮ শতাংশের সঙ্গে ২৪ শতাংশসহ মোট ৩২ শতাংশ জায়গা সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখল করে নেন। নিজের নামে লিখে নেওয়া এই জায়গা নিয়ে মামলায় ২০০৮ সালে আদালত রায়ে নামজারি বাতিল করে দেন।
একইভাবে তার এই ‘হাওড় বাংলা’র ভেতরে বিকাশ রঞ্জন সরকার নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার জমি রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকাশ রঞ্জন বলেন, এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের হাওড় বাংলা বাড়ির ভেতর আমার রেকর্ডিও ৩০ শতক জায়গা রয়েছে। ওই জমি এমপি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। জায়গার মূল্য পরিশোধ করতে বললে তিনি উলটো বড় ভাইকে দিয়ে আমাকে হয়রানি করার জন্য মামলা করিয়েছেন। তার হুমকি-ধমকিতে আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি।
২০১৯ সালে আলোচিত ঠিকাদার জিকে শামীমসহ বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠে এমপি রতনের বিরুদ্ধে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি রতনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক।
দুদকের প্রাথমিক তদন্তে যেসব অভিযোগ ছিল তার মধ্যে রয়েছে-মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজের ও ভাইদের নামে রাজধানী ঢাকা, সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জে ১৩টি বাড়ির মালিক হয়েছেন এমপি হওয়ার পর। এর মধ্যে ধর্মপাশায় নিজ গ্রামে ১০ কোটি টাকায় ‘হাওড় বাংলা’ নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়িটির অধিকাংশ জমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দখল করা। সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুরে জেলা পুলিশ লাইনসের বিপরীতে ৭ কোটি টাকায় বাড়ি কিনেছেন এমপি রতন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পায়েল পিউ’। বাড়িটি এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে কিনে নেন তিনি। ধর্মপাশা উপজেলা সদরে তার আরও সাতটি বাড়ি রয়েছে। মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরেও রয়েছে দুটি বাড়ি।
নেত্রকোনা জেলা শহরেও একটি বাড়ি রয়েছে। নেত্রকোনা শহরে তার মা-বাবার নামে মেডিকেল কলেজ করার জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি ক্রয় করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকার গুলশানের নিকেতনের কয়েকটি ফ্ল্যাটের মালিক এমপি রতন। কানাডায় বেগমপাড়াতেও রয়েছে রতনের বাড়ি এ অভিযোগেও তদন্ত চলমান রয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ যুগান্তরকে জানান, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কি সম্পদ ছিল তা ধর্মপাশার মানুষ জানে। এমপি হওয়ার পর তিনি এই পদকে আলাদিনের চেরাগ হিসাবে পেয়েছেন। এমপির সম্মানি দিয়ে কি এত সম্পদের মালিক হওয়া যায়? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, এমপি রতন কুঁড়েঘর থেকে আজ নিজের ও ভাইবোনদের নামে ১৩টির মতো বাড়ি বানিয়েছেন। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট আছে। তার স্বজনরা গত ১০ বছরে যে সম্পদ গড়েছে তাদের আয়ের উৎস কী? এসব তদন্ত করলে আরও হাজার কোটি টাকার সম্পদ বেরোবে।
তিনি বলেন, এমপি রতন নিজের হলফনামায় যা স্বীকার করেছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ জমি আছে স্বজনদের নামে। ৪ বছর ধরে দুদক তদন্ত করছে কিন্তু এখনো কেন তদন্ত শেষ হচ্ছে না তা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। যদিও ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর দুদক চিঠি পাঠায় এমপি রতন যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। অনুসন্ধান দলের প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে রতনের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সম্পদের অনুসন্ধান এখনো চলমান দুর্নীতি দমন কমিশনে।
অভিযোগের বিষয়ে এমপি রতন মুঠোফোনে শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধান দুই বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। এর একটু পরে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে চার বছর ধরে অনুসন্ধান চলার আইনগত বৈধতা নেই। দুদক আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। যদিও যুগান্তরের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ক্যাসিনোকাণ্ডে রতনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের অক্টোম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তখন দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন সরকারদলীয় ওই এমপি। প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করেই অভিযোগ আমলে নেয় দুদক।
যদিও রতন বলছিলেন, দুদক তাকে তলব করেনি এমনকি তার অভিযোগের কোনো বৈধতা নেই। তবে যুগান্তরের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ-১ আসনে সরকারদলীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। তাকে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা ওই নোটিশ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের গুলশানের বাসভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা এবং অন্যান অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। এই চিঠি দেওয়ার আগে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর দুদক থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর পাঠানো চিঠিতে রতনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এসব বিষয় এমপি রতনকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, এত বছর ধরে অভিযোগের অনুসন্ধান চলার আইনগত ভিত্তি নেই। তিনি কিভাবে এত বিপুল অর্থ অর্জন করলেন এমন প্রশ্নে এমপি রতন বলেন, আমি তো হাজার কোটি টাকার মালিক হতেই পারি। আপনারা প্রমাণ করুন কত সম্পদ আছে আমার।
১০ বছর আগে হলফনামায় ৩ দশমিক ৯৩ একর জমি ছিল। এখন কিভাবে ৫২৩ একর জমি হয়ে গেল? জবাবে রতন বলেন, হলফনামায় এমন তথ্য থাকলে ঠিক করারও ব্যবস্থা আছে। তার ১৩টি বাড়ির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গোয়ালঘর, বাংলোসহ সব মিলিয়ে ১৩টি বাড়ি তো হবেই। রাজধানীর গুলশানে ফ্ল্যাট রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার এই সম্পদ ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে।
সুনামগঞ্জে সংখ্যালঘুদের জমি দখল করে ‘হাওড় বাংলা’ তৈরির প্রসঙ্গে বলেন, ওরা নিজেরা মার্ডার করে আমাকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে গেছে। ওদের বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ থাকলে কেউ মামলা করে না কেন।
এদিকে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তিনি ফোন ব্যাক করে যুগান্তর প্রতিবেদকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে তিনি হুমকিও দেন।
তিনি দুদকের অনুসন্ধান প্রসঙ্গে বলেন, এ নিয়ে কোর্টে মামলা আছে। মামলার আদেশ কি হয়েছে তা বলতে আমি বাধ্য নই।
এদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বক্তব্য তুলে ধরে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানাতে চাইলে সংস্থাটির কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান যুগান্তরকে বলেন, কারও হুমকি স্থায়ী নয়। দুদককে আন্ডার মাইন্ড করার কিছু নেই। যে অন্যায় না করে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অন্যায়কারীকে দুদক ছাড় দেবে না। দুদকের আইনে তামাদি বলতে কিছু নেই।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ছিলেন একজন সাধারণ কর্মচারী। দুর্নীতির অভিযোগে সেখান থেকে চাকরিচ্যুতও হন তিনি। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম তার। তবে ভাগ্য বদলাতে বেশি সময় লাগেনি। সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) আসনে এমপি হয়েই খুলে গেছে তার ভাগ্য। এ পদটিকে আলাদিনের চেরাগের মতো ব্যবহার করেছেন তিনি। সামান্য কর্মচারী থেকে অল্পদিনেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমপি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
তার দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০ বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে শতগুণ। ওই হিসাবের বাইরে আদতে তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, হলফনামায় যা আছে তার চেয়ে বেশি সম্পত্তি আছে এমপি রতনের। নিজের এলাকায় সংখ্যালঘুসহ অন্যদের জায়গা দখল করে রাজপ্রাসাদের মতো ‘হাওড় বাংলা’ বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। এর বাইরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলকায় তার আরও ১২টি বাড়ি রয়েছে বলে যুগান্তরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জমি দখল ছাড়াও অর্থ আত্মসাৎ, নানা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি ক্যাসিনোকাণ্ডেও নাম এসেছে ওই এমপির। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক। তাকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে দুদকের তদন্ত আলোর মুখ দেখছে না। এদিকে গত ৪ বছরেও এমপি রতনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তার নির্বাচনি এলাকায়। যদিও এমপি রতনের দাবি, তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। জমি দখলসহ তার বিরুদ্ধে করা নানা অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
নির্বাচনি এলাকা ঘুরে জানা যায়, একজন সাধারণ কর্মচারী থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তাকে প্রায়ই প্রকাশ্যে বলতে শোনা যায় তিনি পারিবারিকভাবেই হাজার কোটি টাকার মালিক। মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ধর্মপাশার পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামে দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রতন দ্বিতীয়।
তিনি সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৯৯৩ সালে পাওয়ার টেকনোলজিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। দীর্ঘদিন চাকরি না পেয়ে বেকার জীবন কাটান। পরে জগন্নাথপুরে ২০০৩ সালে বেসরকারি টেলিফোন সংস্থায় যোগ দেন। কিছুদিন পর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
অবশেষে ২০০৮ সালে তার হাতে উঠে আলাদিনের চেরাগ এমপি পদ। এরপর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে তার সম্পদ বেড়েছে পাগলা ঘোড়ার মতো। ২০০৮ থেকে ২০১৮ এই দশ বছরে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কি পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে তার হিসাব নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী মাহমুদা হোসেন লতা ৪০ তোলা স্বর্ণের মালিক। তার কৃষিজমি ছিল ৩.৯৩ একর। অকৃষি জমি ১.১৫ একর। তবে স্ত্রীর কোনো আয় নেই। নিজের মোট আয় ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ টাকা। মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৩২২ টাকা। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় তিনি ৫২৩ দশমিক ২৭ একর কৃষিজমির কথা উল্লেখ করেন। মাত্র দশ বছরে ওই কৃষি জমি ৩.৯৩ একর থেকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৫২৩ একর হয়েছে। এর বাইরে অকৃষি জমির পরিমাণও বেড়ে ৮ দশমিক ২৬ একর হয়েছে।
এছাড়া হলফনামায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট, নিজের ও অংশীদারত্বের তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার কথা উল্লেখ করেন এমপি রতন। যদিও বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
‘হাওড়বাংলা’ কেলেঙ্কারি : এমপি রতন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার নিজ গ্রামে গড়েছেন বিশাল অট্টালিকা, নাম দিয়েছেন ‘হাওড় বাংলা’। বাড়িটি যে জায়গায় নির্মিত হয়েছে, সেখানে ওই এলাকার দুই ব্যক্তির ৬২ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জমির মালিকদের অভিযোগ, ‘হাওড় বাংলা’র সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে গাছতলা গ্রামের বাসিন্দা আলতু মিয়ার ৩২ শতক এবং পাইকুরাটি গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ রঞ্জন সরকারের ৩০ শতক জমি আছে। আলতু মিয়ার জমির ৮ শতাংশ জায়গায় এমপি রতন তার এক বোনকে একটি টিনশেড ঘর করে দেওয়ার কথা বলে ২০০১ সালে জমি কিনতে চেয়েছিলেন। রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার সময় আলতু মিয়াকে ৩০ হাজার টাকা দেবেন বলে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ৮ শতাংশের টাকা তো দেনইনি, উলটো আগের ৮ শতাংশের সঙ্গে ২৪ শতাংশসহ মোট ৩২ শতাংশ জায়গা সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখল করে নেন। নিজের নামে লিখে নেওয়া এই জায়গা নিয়ে মামলায় ২০০৮ সালে আদালত রায়ে নামজারি বাতিল করে দেন।
একইভাবে তার এই ‘হাওড় বাংলা’র ভেতরে বিকাশ রঞ্জন সরকার নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার জমি রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকাশ রঞ্জন বলেন, এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের হাওড় বাংলা বাড়ির ভেতর আমার রেকর্ডিও ৩০ শতক জায়গা রয়েছে। ওই জমি এমপি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। জায়গার মূল্য পরিশোধ করতে বললে তিনি উলটো বড় ভাইকে দিয়ে আমাকে হয়রানি করার জন্য মামলা করিয়েছেন। তার হুমকি-ধমকিতে আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি।
২০১৯ সালে আলোচিত ঠিকাদার জিকে শামীমসহ বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠে এমপি রতনের বিরুদ্ধে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি রতনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক।
দুদকের প্রাথমিক তদন্তে যেসব অভিযোগ ছিল তার মধ্যে রয়েছে-মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজের ও ভাইদের নামে রাজধানী ঢাকা, সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জে ১৩টি বাড়ির মালিক হয়েছেন এমপি হওয়ার পর। এর মধ্যে ধর্মপাশায় নিজ গ্রামে ১০ কোটি টাকায় ‘হাওড় বাংলা’ নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়িটির অধিকাংশ জমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দখল করা। সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুরে জেলা পুলিশ লাইনসের বিপরীতে ৭ কোটি টাকায় বাড়ি কিনেছেন এমপি রতন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পায়েল পিউ’। বাড়িটি এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে কিনে নেন তিনি। ধর্মপাশা উপজেলা সদরে তার আরও সাতটি বাড়ি রয়েছে। মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরেও রয়েছে দুটি বাড়ি।
নেত্রকোনা জেলা শহরেও একটি বাড়ি রয়েছে। নেত্রকোনা শহরে তার মা-বাবার নামে মেডিকেল কলেজ করার জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি ক্রয় করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকার গুলশানের নিকেতনের কয়েকটি ফ্ল্যাটের মালিক এমপি রতন। কানাডায় বেগমপাড়াতেও রয়েছে রতনের বাড়ি এ অভিযোগেও তদন্ত চলমান রয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ যুগান্তরকে জানান, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কি সম্পদ ছিল তা ধর্মপাশার মানুষ জানে। এমপি হওয়ার পর তিনি এই পদকে আলাদিনের চেরাগ হিসাবে পেয়েছেন। এমপির সম্মানি দিয়ে কি এত সম্পদের মালিক হওয়া যায়? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, এমপি রতন কুঁড়েঘর থেকে আজ নিজের ও ভাইবোনদের নামে ১৩টির মতো বাড়ি বানিয়েছেন। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট আছে। তার স্বজনরা গত ১০ বছরে যে সম্পদ গড়েছে তাদের আয়ের উৎস কী? এসব তদন্ত করলে আরও হাজার কোটি টাকার সম্পদ বেরোবে।
তিনি বলেন, এমপি রতন নিজের হলফনামায় যা স্বীকার করেছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ জমি আছে স্বজনদের নামে। ৪ বছর ধরে দুদক তদন্ত করছে কিন্তু এখনো কেন তদন্ত শেষ হচ্ছে না তা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। যদিও ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর দুদক চিঠি পাঠায় এমপি রতন যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। অনুসন্ধান দলের প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে রতনের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সম্পদের অনুসন্ধান এখনো চলমান দুর্নীতি দমন কমিশনে।
অভিযোগের বিষয়ে এমপি রতন মুঠোফোনে শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধান দুই বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। এর একটু পরে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে চার বছর ধরে অনুসন্ধান চলার আইনগত বৈধতা নেই। দুদক আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। যদিও যুগান্তরের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ক্যাসিনোকাণ্ডে রতনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের অক্টোম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তখন দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন সরকারদলীয় ওই এমপি। প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করেই অভিযোগ আমলে নেয় দুদক।
যদিও রতন বলছিলেন, দুদক তাকে তলব করেনি এমনকি তার অভিযোগের কোনো বৈধতা নেই। তবে যুগান্তরের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ-১ আসনে সরকারদলীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। তাকে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা ওই নোটিশ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের গুলশানের বাসভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা এবং অন্যান অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। এই চিঠি দেওয়ার আগে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর দুদক থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর পাঠানো চিঠিতে রতনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
এসব বিষয় এমপি রতনকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, এত বছর ধরে অভিযোগের অনুসন্ধান চলার আইনগত ভিত্তি নেই। তিনি কিভাবে এত বিপুল অর্থ অর্জন করলেন এমন প্রশ্নে এমপি রতন বলেন, আমি তো হাজার কোটি টাকার মালিক হতেই পারি। আপনারা প্রমাণ করুন কত সম্পদ আছে আমার।
১০ বছর আগে হলফনামায় ৩ দশমিক ৯৩ একর জমি ছিল। এখন কিভাবে ৫২৩ একর জমি হয়ে গেল? জবাবে রতন বলেন, হলফনামায় এমন তথ্য থাকলে ঠিক করারও ব্যবস্থা আছে। তার ১৩টি বাড়ির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গোয়ালঘর, বাংলোসহ সব মিলিয়ে ১৩টি বাড়ি তো হবেই। রাজধানীর গুলশানে ফ্ল্যাট রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার এই সম্পদ ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে।
সুনামগঞ্জে সংখ্যালঘুদের জমি দখল করে ‘হাওড় বাংলা’ তৈরির প্রসঙ্গে বলেন, ওরা নিজেরা মার্ডার করে আমাকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে গেছে। ওদের বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ থাকলে কেউ মামলা করে না কেন।
এদিকে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তিনি ফোন ব্যাক করে যুগান্তর প্রতিবেদকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে তিনি হুমকিও দেন।
তিনি দুদকের অনুসন্ধান প্রসঙ্গে বলেন, এ নিয়ে কোর্টে মামলা আছে। মামলার আদেশ কি হয়েছে তা বলতে আমি বাধ্য নই।
এদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বক্তব্য তুলে ধরে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানাতে চাইলে সংস্থাটির কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান যুগান্তরকে বলেন, কারও হুমকি স্থায়ী নয়। দুদককে আন্ডার মাইন্ড করার কিছু নেই। যে অন্যায় না করে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অন্যায়কারীকে দুদক ছাড় দেবে না। দুদকের আইনে তামাদি বলতে কিছু নেই।
এমপি রতনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চলমান অনুসন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিয়মের মধ্যেই অনুসন্ধান করছি। কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামব। সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য তার বিষয়ে সার্চিং দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানের অনেক কৌশল আছে সেটি প্রয়োগ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ছিলেন একজন সাধারণ কর্মচারী। দুর্নীতির অভিযোগে সেখান থেকে চাকরিচ্যুতও হন তিনি। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম তার। তবে ভাগ্য বদলাতে বেশি সময় লাগেনি। সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) আসনে এমপি হয়েই খুলে গেছে তার ভাগ্য। এ পদটিকে আলাদিনের চেরাগের মতো ব্যবহার করেছেন তিনি। সামান্য কর্মচারী থেকে অল্পদিনেই বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমপি ও তার পরিবারের সদস্যরা।
Advertisement
তার দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১০ বছরে সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে শতগুণ। ওই হিসাবের বাইরে আদতে তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, হলফনামায় যা আছে তার চেয়ে বেশি সম্পত্তি আছে এমপি রতনের। নিজের এলাকায় সংখ্যালঘুসহ অন্যদের জায়গা দখল করে রাজপ্রাসাদের মতো ‘হাওড় বাংলা’ বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। এর বাইরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলকায় তার আরও ১২টি বাড়ি রয়েছে বলে যুগান্তরের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
জমি দখল ছাড়াও অর্থ আত্মসাৎ, নানা প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি ক্যাসিনোকাণ্ডেও নাম এসেছে ওই এমপির। এসব অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক। তাকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে রহস্যজনক কারণে দুদকের তদন্ত আলোর মুখ দেখছে না। এদিকে গত ৪ বছরেও এমপি রতনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তার নির্বাচনি এলাকায়। যদিও এমপি রতনের দাবি, তিনি মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার। জমি দখলসহ তার বিরুদ্ধে করা নানা অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি।
নির্বাচনি এলাকা ঘুরে জানা যায়, একজন সাধারণ কর্মচারী থেকে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও তাকে প্রায়ই প্রকাশ্যে বলতে শোনা যায় তিনি পারিবারিকভাবেই হাজার কোটি টাকার মালিক। মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ধর্মপাশার পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামে দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রতন দ্বিতীয়।
তিনি সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ১৯৯৩ সালে পাওয়ার টেকনোলজিতে দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করেন। দীর্ঘদিন চাকরি না পেয়ে বেকার জীবন কাটান। পরে জগন্নাথপুরে ২০০৩ সালে বেসরকারি টেলিফোন সংস্থায় যোগ দেন। কিছুদিন পর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
অবশেষে ২০০৮ সালে তার হাতে উঠে আলাদিনের চেরাগ এমপি পদ। এরপর তার আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিনে দিনে তার সম্পদ বেড়েছে পাগলা ঘোড়ার মতো। ২০০৮ থেকে ২০১৮ এই দশ বছরে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কি পরিমাণ সম্পদ বেড়েছে তার হিসাব নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন।
২০০৮ সালের ২১ নভেম্বর উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী মাহমুদা হোসেন লতা ৪০ তোলা স্বর্ণের মালিক। তার কৃষিজমি ছিল ৩.৯৩ একর। অকৃষি জমি ১.১৫ একর। তবে স্ত্রীর কোনো আয় নেই। নিজের মোট আয় ৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৩ টাকা। মোট সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৩২২ টাকা। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেওয়া হলফনামায় তিনি ৫২৩ দশমিক ২৭ একর কৃষিজমির কথা উল্লেখ করেন। মাত্র দশ বছরে ওই কৃষি জমি ৩.৯৩ একর থেকে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৫২৩ একর হয়েছে। এর বাইরে অকৃষি জমির পরিমাণও বেড়ে ৮ দশমিক ২৬ একর হয়েছে।
এছাড়া হলফনামায় একটি অ্যাপার্টমেন্ট, নিজের ও অংশীদারত্বের তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার কথা উল্লেখ করেন এমপি রতন। যদিও বাস্তবে তার সম্পদের পরিমাণ আরও অনেক বেশি।
‘হাওড়বাংলা’ কেলেঙ্কারি : এমপি রতন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার নিজ গ্রামে গড়েছেন বিশাল অট্টালিকা, নাম দিয়েছেন ‘হাওড় বাংলা’। বাড়িটি যে জায়গায় নির্মিত হয়েছে, সেখানে ওই এলাকার দুই ব্যক্তির ৬২ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জমির মালিকদের অভিযোগ, ‘হাওড় বাংলা’র সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে গাছতলা গ্রামের বাসিন্দা আলতু মিয়ার ৩২ শতক এবং পাইকুরাটি গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ রঞ্জন সরকারের ৩০ শতক জমি আছে। আলতু মিয়ার জমির ৮ শতাংশ জায়গায় এমপি রতন তার এক বোনকে একটি টিনশেড ঘর করে দেওয়ার কথা বলে ২০০১ সালে জমি কিনতে চেয়েছিলেন। রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার সময় আলতু মিয়াকে ৩০ হাজার টাকা দেবেন বলে কথাও দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ৮ শতাংশের টাকা তো দেনইনি, উলটো আগের ৮ শতাংশের সঙ্গে ২৪ শতাংশসহ মোট ৩২ শতাংশ জায়গা সীমানা প্রাচীর দিয়ে দখল করে নেন। নিজের নামে লিখে নেওয়া এই জায়গা নিয়ে মামলায় ২০০৮ সালে আদালত রায়ে নামজারি বাতিল করে দেন।
একইভাবে তার এই ‘হাওড় বাংলা’র ভেতরে বিকাশ রঞ্জন সরকার নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তার জমি রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিকাশ রঞ্জন বলেন, এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের হাওড় বাংলা বাড়ির ভেতর আমার রেকর্ডিও ৩০ শতক জায়গা রয়েছে। ওই জমি এমপি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন। জায়গার মূল্য পরিশোধ করতে বললে তিনি উলটো বড় ভাইকে দিয়ে আমাকে হয়রানি করার জন্য মামলা করিয়েছেন। তার হুমকি-ধমকিতে আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি।
২০১৯ সালে আলোচিত ঠিকাদার জিকে শামীমসহ বিভিন্ন প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠে এমপি রতনের বিরুদ্ধে। ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতা ও অন্যান্য অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এমপি রতনের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক।
দুদকের প্রাথমিক তদন্তে যেসব অভিযোগ ছিল তার মধ্যে রয়েছে-মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজের ও ভাইদের নামে রাজধানী ঢাকা, সুনামগঞ্জ, ধর্মপাশা, নেত্রকোনা ও মোহনগঞ্জে ১৩টি বাড়ির মালিক হয়েছেন এমপি হওয়ার পর। এর মধ্যে ধর্মপাশায় নিজ গ্রামে ১০ কোটি টাকায় ‘হাওড় বাংলা’ নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়িটির অধিকাংশ জমি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির কাছ থেকে দখল করা। সুনামগঞ্জ শহরের মল্লিকপুরে জেলা পুলিশ লাইনসের বিপরীতে ৭ কোটি টাকায় বাড়ি কিনেছেন এমপি রতন। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পায়েল পিউ’। বাড়িটি এক লন্ডন প্রবাসীর কাছ থেকে কিনে নেন তিনি। ধর্মপাশা উপজেলা সদরে তার আরও সাতটি বাড়ি রয়েছে। মোহনগঞ্জ উপজেলা সদরেও রয়েছে দুটি বাড়ি।
নেত্রকোনা জেলা শহরেও একটি বাড়ি রয়েছে। নেত্রকোনা শহরে তার মা-বাবার নামে মেডিকেল কলেজ করার জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে জমি ক্রয় করেছেন তিনি। এছাড়া ঢাকার গুলশানের নিকেতনের কয়েকটি ফ্ল্যাটের মালিক এমপি রতন। কানাডায় বেগমপাড়াতেও রয়েছে রতনের বাড়ি এ অভিযোগেও তদন্ত চলমান রয়েছে।
ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ মুরাদ যুগান্তরকে জানান, মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের কি সম্পদ ছিল তা ধর্মপাশার মানুষ জানে। এমপি হওয়ার পর তিনি এই পদকে আলাদিনের চেরাগ হিসাবে পেয়েছেন। এমপির সম্মানি দিয়ে কি এত সম্পদের মালিক হওয়া যায়? এমন প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, এমপি রতন কুঁড়েঘর থেকে আজ নিজের ও ভাইবোনদের নামে ১৩টির মতো বাড়ি বানিয়েছেন। ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট আছে। তার স্বজনরা গত ১০ বছরে যে সম্পদ গড়েছে তাদের আয়ের উৎস কী? এসব তদন্ত করলে আরও হাজার কোটি টাকার সম্পদ বেরোবে।
তিনি বলেন, এমপি রতন নিজের হলফনামায় যা স্বীকার করেছেন তার চেয়ে কয়েকগুণ জমি আছে স্বজনদের নামে। ৪ বছর ধরে দুদক তদন্ত করছে কিন্তু এখনো কেন তদন্ত শেষ হচ্ছে না তা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। যদিও ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর দুদক চিঠি পাঠায় এমপি রতন যেন দেশত্যাগ করতে না পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে। অনুসন্ধান দলের প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত সেই চিঠিতে রতনের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সম্পদের অনুসন্ধান এখনো চলমান দুর্নীতি দমন কমিশনে।
অভিযোগের বিষয়ে এমপি রতন মুঠোফোনে শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, দুদকের অনুসন্ধান দুই বছর আগে শেষ হয়ে গেছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন করা হয়নি। এর একটু পরে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে চার বছর ধরে অনুসন্ধান চলার আইনগত বৈধতা নেই। দুদক আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। যদিও যুগান্তরের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ক্যাসিনোকাণ্ডে রতনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের অক্টোম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তখন দুদকে আসা অভিযোগে বলা হয়, ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন সরকারদলীয় ওই এমপি। প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করেই অভিযোগ আমলে নেয় দুদক।
যদিও রতন বলছিলেন, দুদক তাকে তলব করেনি এমনকি তার অভিযোগের কোনো বৈধতা নেই। তবে যুগান্তরের অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ-১ আসনে সরকারদলীয় এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল দুদক। তাকে ১৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় দুদক কার্যালয়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের সই করা ওই নোটিশ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের গুলশানের বাসভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা এবং অন্যান অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। এই চিঠি দেওয়ার আগে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর দুদক থেকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বরাবর পাঠানো চিঠিতে রতনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
Advertisement
এসব বিষয় এমপি রতনকে স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি বলেন, এত বছর ধরে অভিযোগের অনুসন্ধান চলার আইনগত ভিত্তি নেই। তিনি কিভাবে এত বিপুল অর্থ অর্জন করলেন এমন প্রশ্নে এমপি রতন বলেন, আমি তো হাজার কোটি টাকার মালিক হতেই পারি। আপনারা প্রমাণ করুন কত সম্পদ আছে আমার।
১০ বছর আগে হলফনামায় ৩ দশমিক ৯৩ একর জমি ছিল। এখন কিভাবে ৫২৩ একর জমি হয়ে গেল? জবাবে রতন বলেন, হলফনামায় এমন তথ্য থাকলে ঠিক করারও ব্যবস্থা আছে। তার ১৩টি বাড়ির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, গোয়ালঘর, বাংলোসহ সব মিলিয়ে ১৩টি বাড়ি তো হবেই। রাজধানীর গুলশানে ফ্ল্যাট রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার এই সম্পদ ট্যাক্স ফাইলে দেখানো আছে।
সুনামগঞ্জে সংখ্যালঘুদের জমি দখল করে ‘হাওড় বাংলা’ তৈরির প্রসঙ্গে বলেন, ওরা নিজেরা মার্ডার করে আমাকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে গেছে। ওদের বিরুদ্ধে ২১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ থাকলে কেউ মামলা করে না কেন।
এদিকে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তিনি ফোন ব্যাক করে যুগান্তর প্রতিবেদকের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে তিনি হুমকিও দেন।
তিনি দুদকের অনুসন্ধান প্রসঙ্গে বলেন, এ নিয়ে কোর্টে মামলা আছে। মামলার আদেশ কি হয়েছে তা বলতে আমি বাধ্য নই।
এদিকে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বক্তব্য তুলে ধরে দুদকের অনুসন্ধানের বিষয়ে জানাতে চাইলে সংস্থাটির কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান যুগান্তরকে বলেন, কারও হুমকি স্থায়ী নয়। দুদককে আন্ডার মাইন্ড করার কিছু নেই। যে অন্যায় না করে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু অন্যায়কারীকে দুদক ছাড় দেবে না। দুদকের আইনে তামাদি বলতে কিছু নেই।
Advertisement
এমপি রতনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে চলমান অনুসন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা নিয়মের মধ্যেই অনুসন্ধান করছি। কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে আটঘাট বেঁধেই মাঠে নামব। সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য তার বিষয়ে সার্চিং দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধানের অনেক কৌশল আছে সেটি প্রয়োগ করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।