কিশোরগঞ্জে ‘তালপাখার’ গ্রাম(ভিডিও)

SHARE

ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি,শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩ :৮০ বছরের ভানুমতী সূত্রধর এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। তারপরও তার হাত চলছে। এ বয়সেও প্রতিদিন তালপাতা দিয়ে তিনি কয়েকটি হাতপাখা তৈরি করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার স্বামী শিরীষ সূত্রধরকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। এরপর জীবনযুদ্ধে টিকে থাকতে প্রায় ৫০ বছর ধরে হাতপাখা তৈরি করছেন তিনি।

শুধু ভানুমতী নন, কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চল নিকলীর উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের বর্মনপাড়া গ্রামের অনেকের সংসার চলে হাতপাখা বিক্রি করে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পাখা তৈরির খ্যাতির কারণে এই গ্রামকে অনেকেই ‘তালপাখার গ্রাম’ বলে চেনেন।

Advertisement

এলাকার লোকজন বলেন, গ্রামের ২০০ পরিবারের লোকজন তালপাতার হাতপাখা তৈরির কাজে জড়িত। এখানকার কেউ পাখার কারিগর, আবার কেউ ব্যবসায়ী। সারাবছর অন্য কাজ করলেও চৈত্র মাস আসার আগে থেকেই এ গ্রামের দৃশ্যপট যেন বদলে যায়। সব বাড়িতে দেখা যায় একই দৃশ্য। ঘর ও উঠানে বসে হাতপাখার কাজে ব্যস্ত সবাই।

সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও শিশুরা ভীষণ ব্যস্ত। ঘরের আঙিনায় বসে সবাই তৈরি করছেন হাতপাখা। কেউ তালপাতা চিরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ হাতপাখা তৈরি করছেন, আবার কেউ তৈরি করা হাতপাখায় বেত দিয়ে চাকা বাঁধছেন। আবার কেউ তালপাতায় রং মাখাচ্ছেন। একেকজন একেক কাজে ব্যস্ত। কিছু কিছু পরিবারের পুরুষেরা তাদের কাজে সহযোগিতা করছেন।

Advertisement

আকলিমা আক্তার বলেন, তার স্বামী মারা গেছেন। এখন তিনি দুই মেয়ে, এক ছেলে নিয়ে হাতপাখা তৈরি করে সংসার চালাচ্ছেন। তবে এখন সবকিছুর দাম বাড়লেও হাতপাখার দাম বাড়েনি। তাই সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাতে তার কষ্ট হচ্ছে।

কয়েকজন কারিগর জানান, একটি হাতপাখা তৈরি হতে লাগে কয়েকজনের শ্রম। পাখা তৈরির মূল উপকরণ তালপাতা, বেত, বাঁশ, প্লাস্টিক ও রং। প্রথমে তিন-চার ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে অথবা রোদে রাখা হয় তালপাতা। তারপর সেই পাতা সুবিধামতো আকারে কাটা হয়। এরপর সরু লম্বা কাঠি দিয়ে বেঁধে ও রং করে পাখা তৈরি করা হয়। মানভেদে একটি হাতপাখা ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এই পাখা বিক্রি করে যা আয় হয়, তা দিয়ে ঘোরে অনেকের সংসারের চাকা।

Advertisement

পাখা কারিগর হারেছা আক্তারের স্বামী আবু হানিফ জানান, তালপাতা, বেত, বাঁশসহ হাতপাখা তৈরির মূল উপকরণের দাম বাড়ায় খরচ বেশি হয়। সরকার তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।