ওয়ার্ল্ড ক্রাইম নিউজ ২৪.কম (টিভি),ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ,মঙ্গলবার, ১৩ জুন ২০২৩ : সম্প্রতি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। এই ঘটনায় পৃথকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন, শাখা ছাত্রলীগ ও হাইকোর্ট কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে হল, বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে ঈদের পর এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন চ্যানেল-24 প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নবীন ছাত্রী ফুলপরি খাতুনের ওপর ঘটে যাওয়া নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরাও তাদের স্বীকারোক্তিমূলক লিখিত বক্তব্য প্রদান করেছে। এ ছাড়া নির্যাতনের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নির্দেশদানের স্ক্রিনশট পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার রাতে অন্তরা নিজেই ৩০৬ নম্বর কক্ষ থেকে গণরুম দোয়েল-১ এ যাওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর অন্তরা নিজেই অভিযুক্ত উর্মী ও মীমকে সেখানে পাঠিয়ে দেন। একইসঙ্গে অভিযুক্ত তাবাসসুম ইসলাম, ইসরাত জাহান মীম, হালিমা খাতুন উর্মী ও মোয়াবিয়াকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনের নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া মীমের ফোনে নির্যাতনের নির্দেশ দিয়ে অন্তরা মেসেজ করেন যে, ‘যা খুশি তা করেনে, আমি দেখে নেব’। মেসেজের স্ক্রিনশট কমিটির প্রতিবেদনে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সাথে জড়িত তাবাসসুম ইসলাম, ইসরাত জাহান মীম, হালিমা খাতুন উর্মী ও মোয়াবিয়া লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছে তদন্ত কমিটির কাছে। তাছাড়া তাবাসসুমের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে পাশবিক নির্যাতনকালে মীম ও উর্মির ভিডিও ধারণের বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
Advertisement
এছাড়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ঘটনার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন মোবাইলফোনে হুমকি দিয়েছিল অন্তরাকে। সেখানে উপস্থিত ছাত্রীরা এর সমর্থনে সাক্ষ্য প্রদান করে। তবে আল আমিন তদন্ত কমিটির কাছে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এর ঘটনা ফুলপরির প্রতি ক্ষিপ্ত করে অন্তরাকে। এর পরই তিনি ফুলপরীকে দোয়েল-১-এ পাঠান এবং তাবাসসুম, মীম, উর্মী ও মোয়াবিয়াকে নির্দেশ দেন পাশবিক নির্যাতন করতে।
তবে গত ১১ জুন নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে ৯ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বক্তব্য পোস্ট করেন শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি অন্তরা। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন- তিনি এই ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন না এবং কোনোভাবে জড়িতও ছিলেন না। তবে ফুলপরির সাথে তার বিভাগের সিনিয়রদের দ্বন্দ্ব থেকে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন সেখানে। এছাড়া ঢাবি ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন তাকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন দাবি করে তার বিচার চেয়েছেন তিনি। এছাড়া নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন অন্তরা।
Advertisement
এদিকে সোমবার (১২ জুন) প্রশাসনের নির্দেশে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে ক্যাম্পাসে আসেন নির্যাতনের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কার হওয়া পাঁচ ছাত্রী। সকাল ১১টার দিকে ভিসির কার্যালয়ে ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির নিকট আত্মপক্ষের সমর্থনে সাক্ষ্য দেন তারা। সেখানে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী ফুলপরী খাতুনেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এসময় ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এই বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, লিখিত জবাব ছাড়াও অন্য কোনো বক্তব্য আছে কি না- জানতে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুই জন (মোয়াবিয়া জাহান ও হালিমা আক্তার উর্মি) নতুন বক্তব্য সংযোজন করেছেন। বাকীরা বলেছে তাদের লিখিত বক্তব্যই চূড়ান্ত। ঈদের ছুটি শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।